বৃহস্পতিবার, ৮ জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ২৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর আগামী ফেব্রুয়ারিতে হচ্ছে।
শনিবার ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর দেখা করে আসার পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের এতথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধ্বে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এখন দুই দেশের কর্মকর্তারা বসে তা ঠিক করবে।” বৈঠকে আকবর বলেন, “ভারতের সরকার এবং জনগণ শেখ হাসিনার সফরের জন্য আগ্রহভরে অপেক্ষা করছে।”
আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা না এলেও আগামী ১৮ ডিসেম্বর শেখ হাসিনার নয়া দিল্লি সফরের কথা ছিল। কিন্তু তা স্থগিতের কথা দুদিন আগেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে শেখ হাসিনার এই সফর হওয়ার কথা ছিল। মোদী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশে প্রথম সফরের পর তার জমানায় শেখ হাসিনার এটাই হওয়ার কথা ছিল দ্বিপক্ষীয় প্রথম সফর। খবর বিডিনিউজ২৪ডটকমের।
আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে াুল্লেখ করা হয়, ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা বলতে গিয়ে বলেন, তার দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সম্পর্ককে একটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। এই দুই নেতার জন্য দু’দেশের সম্পর্ক আরও প্রসারিত হয়েছে।
শুরুর আগেই যদি এই হয়, শুরুর পরে কী হবে? জট পাকানো সহজ কিন্তু ছাড়ানো কঠিন। বাংলাদেশ-ভারত কিন্তু নতুন বছরের রাস্তাকে আরও মসৃণ করতে তৎপর। সম্পর্কে এক সুতো ব্যবধানও থাকবে না। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন বছরে দিল্লি সফর করবেন। কথা হবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে। সব বিষয়ে সমাধান সুনিশ্চিত করার অঙ্গীকার। তিস্তা চুক্তি ঝুলে আছে অনেক দিন। হাসিনা দ্রুত নিষ্পত্তি চাইছেন। ভারতের জলসম্পদ প্রতিমন্ত্রী সঞ্জীব কুমার বালিয়ান লোকসভায় জানিয়েছেন, তিস্তা চুক্তি রূপায়ণের বিষয়ে ভারত সরকার উদ্যোগী। সব পক্ষের স্বার্থ রক্ষা করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য সমাধান সূত্র খুঁজে বের করার চেষ্টা হচ্ছে। বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ অসুস্থ। ক’দিন আগেই তিনি জানিয়েছেন, তিস্তা নিয়ে বাংলাদেশ, ভারত, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ঐকমত্যে পৌঁছনো জরুরি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে চান।
সব কথাতেই ইতিবাচক ইঙ্গিত। এ বার কলকাতাতেও বাংলাদেশের বিজয় দিবস উদযাপন নজিরবিহীন আড়ম্বরে। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে পাঁচ দিনের উৎসবের অন্যতম সহযোগী পশ্চিমবঙ্গ সরকার। পশ্চিমবঙ্গ চাইছে, উত্তরবঙ্গে জলের নিশ্চয়তা দিয়ে যেন তিস্তা চুক্তি করা হয়। চুক্তিতে কারা কতটা জল পাবে তা নিয়ে ভাবনা চলছে। বাংলাদেশ-ভারত আলোচনায় তার মীমাংসা হওয়ার আশা। বাংলাদেশ-ত্রিপুরার মধ্যে বয়ে যাওয়া মুহুরি নদী নিয়ে সমস্যা আছে। নদীটি আপন বেগে চলতে পারছে না। ত্রিপুরার দিকে চর জাগায় বাঁক নিয়ে ঢুকছে বাংলাদেশে। চরের মালিকানা দাবি করছে বাংলাদেশ। ভারত বলছে, চর নয়, শুধু জলে বাংলাদেশের অধিকার। দ্বিমতকে একমতে আনাটাই এখন দু’দেশের লক্ষ্য। আন্তরিক আলোচনায় তার বিহিত হওয়ার সম্ভাবনা।
দিল্লিতে নতুন প্রতিরক্ষা চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন হাসিনা। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর গোপালকৃষ্ণ প্রভু পর্রীকর ১৯ সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে ১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সফর করেছেন। চট্টগ্রামে সেনা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন তিনি। ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে শহিদ সেনাদের স্মারক ‘অনির্বাণ শিখা’য় শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। কথা বলেছেন হাসিনার সঙ্গে। ৩০ মিনিটের কথাবার্তায় সন্ত্রাস দমনে দ্বিপাক্ষিক সমন্বয় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। হাসিনা বাংলাদেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীও। সন্ত্রাসের শেষ দেখতে চান তিনি।
বিডিনিউজজের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী শেখ হাসিনা ভারতের প্রতিমন্ত্রীকে বলেন, যে কোনো প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সমস্যা থাকতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতার সম্পর্কে তা প্রভাব ফেলবে না। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সরকার ও জনগণের সহযোগিতার কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা অতি অল্প সময়ে সেদেশের সৈন্য ফেরত নেওয়াকে ‘ইতিহাস’ বলে উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করে আকবর বলেন, এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে শেখ হাসিনার অবদান রয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। জলবিদ্যুৎ ও জ্বালানি ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়তে পারে বলে ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানান।
সাক্ষাতকালে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী, মূখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী এবং বাংলাদেশের ভারতের রাষ্ট্রদূত হর্ষবর্ধন শ্রিংলা উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা, বিডিনিউজ