বৃহস্পতিবার, ৮ জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ২৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
লুুুৎফর রহমান, তানোর:
‘গোলাভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ’ আবহমান বাংলার সমৃদ্ধ গৃহস্থ পরিবারের পরিচয় দিতে ব্যাবহিত প্রবাদ। কিন্তু কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে কৃষক পরিবাররে সমৃদ্ধ গৃৃহস্থাবাড়ির পরিচিয় বহনকারী মাটির গোলা।
ধান, চাল, গম সংরক্ষণের বড় পাত্র হচ্ছে এই মাটির গোলা। মাটি দিয়ে তৈরি গোলা সারা বছর ধান সংরক্ষণ করার জন্য খুবই উপযোগী। ধানের মৌসুমে ধান কেটে শুুকিয়ে গোলাজাত করা হয়। প্রয়োজনের সময় গোলা থেকে ধান বের করে আবার রোদে শুকিয়ে ধান ভাঙানো হয়।
তানোর উপজেলার গ্রামাঞ্চলে এখন আর আগের মতো চোখে পড়ে না গোলা। যুগের হাওয়া পাল্টে গেছে সারা বছররে জন্য ধান সংরক্ষণরে ধরন। দু’চারজন বড় গৃহস্থ ছাড়া এখন ছোটো-খাটো কৃষকরা কেউ আর সেভাবে ধান মজুদ রাখতে পারনে না।
উপজেলার বাধাইড় ইউনিয়নের খাড়িকুল্লা গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম বলেন, একসময় গোলা ভর্তি ধান না থাকলে সেই বাড়িতে ছেলেমেয়েদের কেউ বিয়ে পর্যন্ত দিতে আগ্রহী হতো না। এখন পুরো এলাকায় খুঁজে একটি পরিবারেও গোলা পাওয়া যাবে না।
জানা গেছে, গোলায় ধান রেখে সেই গোলার মুখ মাটি দিয়ে লেপে দিয়ে বন্ধ করে রাখা হতো। আবার টাকার প্রয়োজন হলে গোলা থেকে ধান বের করে বাজারে বা পাইকারদের কাছে বিক্রয় করা হতো। সে সময়ে সমাজ ব্যবস্থা এখনকার মতো এত উন্নত ছিল না।
তখন চোর-ডাকাতরে ভয়ে গোলার ধানের ভিতের র্স্বণ ও টাকা-পয়সা লুকিয়ে রাখা হতো। ধান রাখার এ পাত্রকে গোলা বা ডোল আখ্যায়িত করার কারণও রয়েছে। গোলা অপেক্ষাকৃত মজবুত। দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায়।
গ্রাম এলাকায় বেশির ভাগ পাকা ও টিনের স্থাপনা গড়ে উঠায় এই মাটির গোলার চাহিদা কমে গেছে। গোলায় ধান সংরক্ষণ করলে ইঁদুর ধান নষ্ট করে বেশি।
এনিয়ে নাট্যকার ও সংস্কৃতি কর্মী আইয়ুব আলী বলেন, ‘গোলা ভরা ধান আর পুকুর ভরা মাছ’ হারিয়ে গেছে। গ্রাম বাংলার কৃষক পরিবার সেই ধান গোলা এখন প্রায় বিলুপ্ত। আমাদের উচিত এই ঐতিহ্য ধরে রাখা।