সরকারি সম্পত্তি জালিয়াতির অভিযোগ: রাজশাহীতে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে আরেক নেতার মামলা

আপডেট: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৪, ১১:৩৫ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক


রাজশাহীতে সরকারি সম্পত্তি জালিয়াতির অভিযোগ এনে বিএনপির এক নেতা আরেক নেতার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। আদালত ওই সম্পত্তিতে ‘স্থিতাবস্থা’ বজায় রাখার আদেশ দিয়েছেন। আগস্ট মাসের ৮ তারিখে রাজশাহীর সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে একটি নালিশি মামলা করেন। মামলা নম্বর ২০২/২০২৪।

এই মামলার বাদী হয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও এমপি মিজানুর রহমান মিনু। তিনি জনস্বার্থে এই মামলা করেছেন বলে জানান।

মামলায় বিবাদী করা হয়েছে বিএনপির রাজশাহী মহানগর সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক নজরুল হুদা, ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ও চার্চ অব বাংলাদেশের সভাপতি সুনীল মানখিনকে। মোকাবিলা বিবাদী করা হয়েছে রাজশাহী জেলা প্রশাসককে।

আদালতের বিচারক মামলার বিবাদী নজরুল হুদা ও মিজানুর রহমানকে কেন নালিশি সম্পত্তিতে বহুতল ভবন নির্মাণ বা জবরদখল থেকে বিরত থাকার আদেশ প্রদান করা হবে না, এই মর্মে কারণ দর্শনো নোটিশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার শুনানি না হওয়া পর্যন্ত পক্ষগণকে ওই সম্পত্তিতে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ প্রদান করেছেন।



আসামি পক্ষের দাবি, জমিটি চার্চ অব বাংলাদেশের পক্ষে সভাপতি সুনীল মানখিন ২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর বিক্রয় কবলা দলিলমূলে তাদের হস্তান্তর করেছেন।

এই জমির অবস্থান রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া মৌজায় মালোপাড়া এলাকায়। নগরের বোয়ালিয়া মৌজায় সিটি করপোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের ভেতরে পড়েছে এই জমিটি। মোট জমির পরিমাণ ৬ কাঠা। ওই জমিতে গিয়ে টাঙানো সাইনবোর্ডটি দেখা যায়। এতে লেখা রয়েছে ‘জমিদাতা চার্চ অব বাংলাদেশ। খরিদ, ক্রয় সূত্রে এই জমির মালিক নজরুল হুদা দিং। মৌজা বোয়ালিয়া, জেএল নম্বর ০৯। দলিল নম্বর ৯০১৬। প্রস্তাবিত খতিয়ান নম্বর ১৪২৬৯। হোল্ডিং নম্বর ১৪৫৩৩। দাগ নম্বর ১৯৪৩,১৯৪৪ ও ১৯৬৩। ১১৩৫-এর দশমিক ০৯৯০ একর। বাংলা মাপে ৬ কাঠা।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জমিটিতে দীর্ঘদিন ধরে ব্রিটিশ কাউন্সিলের কার্যক্রম চলেছে। তারপর হাফিজুল ইসলাম সোহেল নামের একজন ব্যবসায়ী ভাড়া নিয়েছিলেন। হাফিজুল ইসলাম জানান, ব্রিটিশ কাউন্সিলের কার্যক্রম বন্ধের পর থেকে তিনি ওই সম্পত্তি ভাড়া নেন। চার্চ অব বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ভাড়ার টাকা নিত। ২০১০ সালে চার্চ অব বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ওই সম্পত্তি তার কাছে বিক্রির প্রস্তাব করা হয়, কিন্তু কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।

একপর্যায়ে ভূমি কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে হাফিজুল জানতে পারেন, জমিটি চার্চ অব বাংলাদেশের নয়। ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে মি. হেমিলটন নামের এক ব্যক্তির নামে রেকর্ড রয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে তার কোনো ওয়ারিশ না থাকায় এটি সরকারি সম্পত্তি হয়ে গেছে। তারপর থেকে তিনি আদালতের মাধ্যমে ভাড়া প্রদান করে আসছেন। চলতি মাসের ভাড়াও পরিশোধ করা হয়েছে জানিয়ে হাফিজুল বলেন, এর মধ্যে গত ৫ আগস্ট দেশে সরকার পতনের পরের দিন ভবনের নিচতলায় তার অফিস ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। দোতলায় ছিল তার পরিবার। জোর করে তাদের উচ্ছেদ করে নজরুল হুদা ও মিজানুর রহমান ওই জমির দখল নেন। ৭ আগস্ট এই জমিতে একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেন নজরুল হুদা।

বোয়ালিয়া ভূমি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নালিশি সম্পত্তির মালিক হেমিলটন সাহেব ওরফে হেমিলটন সাহেব। তার নামেই এসএ, আরএস ও সিএস খতিয়ান। ২০২০ সালে রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য এই জমির কিছু অংশ সরকার অধিগ্রহণ করে। এই অধিগ্রহণের ক্ষতি পূরণের টাকা গ্রহণ করার জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ওই বছর ২৫ আগস্ট মি. হেমিলটনের মহিষবাথানের ঠিকানায় চিঠি দেওয়া হয়। এরপরের বছরই চার্চ অব বাংলাদেশ আরএস রেকর্ডে প্রজার নাম ভুল রয়েছে বলে সংশোধনের জন্য আবেদন করে। আবেদনে বলা হয়, হেমিলটন ওই সম্পত্তি দেখাশোনার জন্য চার্চ অব বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন। খতিয়ানে ভুলবশত তার নাম লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, যা করণিক ভুল। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ১৫ মার্চ তৎকালীন বোয়ালিয়া ভূমি কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার আবুল হায়াত চার্চ অব বাংলাদেশের পক্ষে সংশোধন করে নামজারি খতিয়ান সৃজন করেন।

এ ছাড়া ২৯ আগস্ট মিজানুর রহমান প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে ব্রিটিশ কাউন্সিল ভবনটি পুরাকীর্তি ঘোষণা, বাধ্যতামূলক অধিগ্রহণ, সুরক্ষা, সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি আবেদন করেছেন। ১ সেপ্টেম্বর প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের আঞ্চলিক পরিচালক নাহিদা সুলতানার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল এই জমিতে অবস্থিত ব্রিটিশ কাউন্সিল ভবন পরিদর্শন করে।
এ বিষয়ে মিজানুর রহমান মিনু সোনার দেশকে বলেন, মামলাটি জনস্বার্থে করা হয়েছে। আমি অসুস্থ হয়ে আছি। চিকিৎসক কথা বলতে নিষেধ করেছেন। তিনি তার আইনজীবীর সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।

এবিষয়ে কথা বলার জন্য বিএনপির রাজশাহী মহানগর যুগ্ম-আহ্বায়ক নজরুল হুদাকে সোনার দেশের পক্ষ থেকে কল দিলে তিনি কেটে দেন। এরপর যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। তাই তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে তিনি আরেকটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এই সম্পত্তি তারা চার্চ অব বাংলাদেশের কাছ থেকে বৈধভাবে কিনেছেন। এখানে তার নির্মাণকাজে বাধা দিতে আসার কারও এখতিয়ার নেই। সেদিন তিনি বলেছিলেন, আদালতের কোনো নোটিশ তিনি পাননি।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ