সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল মোহনপুরে কার্ড বিতরণে স্বজনপ্রীতি ও পরিবারকরণ

আপডেট: নভেম্বর ১৬, ২০১৬, ১২:০৪ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক



রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার ৬ নম্বর জাহানাবাদ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে হতদরিদ্রদের মাঝে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় বরাদ্দকৃত ১০ টাকা কেজি চালের কার্ড বিতরণে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে দরিদ্র মানুষের মাঝে কার্ড বিতরণ না করে নিজের পছন্দ অনুযায়ী একই ব্যক্তি ও আত্মীয়ের নামে একাধিক কার্ড বিতরণ করার অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ রয়েছে, ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান একই ব্যক্তি ও পরিবারের নামে একাধিক কার্ড ইস্যু করেছে। ইস্যুকৃত কার্ডের প্রতিটি থেকে একটি করে কার্ড নিজে ব্যবহার করে চাল উত্তোলন করে বাজারে উচ্চমূল্যে বিক্রিরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
নভেম্বর মাসের এক তারিখে এ বিষয়ে মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন ওই ওয়ার্ডের ধোরসা গ্রামের লুৎফর রহমান। তিনিসহ কয়েকজনের অভিযোগের প্রেক্ষিতেই উপজেলা নির্বাহী অফিসার উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের ওপর তদন্ত করার নির্দেশ দেন। গতকাল মঙ্গলবার ইউএনও’র উপস্থিতি উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে অভিযোগকারী, মেম্বার ও চেয়ারম্যানদের ডেকে বিষয়টি তদন্ত করেন। তদন্তে নয়জনের নামে একাধিক কার্ড পাওয়ার সত্যতা মিলেছে।
মোহনপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোসা. পারভীন বলেন, ইউএনও স্যারের নির্দেশে সবাইকে উপজেলা পরিষদে ডেকে তদন্ত করে ওই ওয়ার্ডে নয়জন ব্যক্তির নামে একাধিক কার্ড পাওয়া গেছে। যেসব ব্যক্তির নামে একাধিক কার্ড পাওয়া গেছে ওই ব্যক্তিদের কাছ থেকে অতিরিক্ত কার্ড ফেরত নিয়ে হতদরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করার জন্য ইউপি চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে।
পারভীন বলেন, ডিলাররা বলেছেন একাধিক কার্ড ধারীদের শুধুমাত্র একটি কার্ডের চাল বিতরণ করা হয়েছে, বাকি চাল গুদামঘরে রাখা হয়েছে। অতিরিক্ত কার্ড হতদরিদ্রের মাঝে বিতরণ করে জমাকৃত চালও তাদের মাঝে বিতরণ করার জন্য বলা হয়েছে।
ইউনিয়ন সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মোহনপুরের জাহানাবাদ ইউনিয়ন পরিষদে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকায় ১০টাকা কেজি চাল বিতরণে হতদরিদ্রের তালিকা রয়েছে ৪৬৫টি। হতদরিদ্রের তালিকা ঘেঁটে দেখা গেছে, ওই ওয়ার্ডের মতিহার গ্রামের হাজেরা বিবি, রাসেল, ধোরসা গ্রামের ফুলছিয়া, ইমরান আলী, হালেমা, নার্গিস, আজিম উদ্দিন ও ছানোয়ারার নামে দুইটি করে কার্ড রয়েছে। এদের মধ্যে মোজাম্মেল হকের ছেলে ও স্ত্রীর নামে তিনটি কার্ড রয়েছে। এরা ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মিজানুর রহমানের শ্যালক ও বড় শ্বাশুড়ি। কার্ড রয়েছে ওই ইউপি সদস্যের খালা শ্বাশুড়ি ধোরসা গ্রামের আনোয়ারা বিবির নামে। এছাড়া স্বামী-স্ত্রীর নামেও একাধিক কার্ড রয়েছে।
কার্ডের অনিয়মের বিষয়ে কথা বলার জন্য ফোন দেয়া হলে মিজানুর রহমান বলেন, কার্ড বিতরণে সমন্বয়ের অভাবে এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এই ওয়ার্ডে ২০৩টি কার্ড বরাদ্দ দেয়া হয়। এর মধ্যে ৫১টি কার্ড বিতরণে আমার ওপর দায়িত্ব দেয়া হয়। বাকি কার্ডগুলো স্থানীয় এমপি ও চেয়ারম্যানের কোটায় বিতরণ করা হয়। কার্ড বিতরণের পর দেখা গেছে, আমি যাদের কার্ড দিয়েছি তারাই আবার ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও এমপি কোটায় কার্ড পেয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, এই কার্ড বিতরণে যে জটিলতা দেখা দিয়েছিল তা মীমাংসা হয়ে গেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে একাধিক ব্যক্তির নামে থাকা অতিরিক্ত কার্ডগুলো ফেরত দেয়া হয়েছে। পরে ওই কার্ডগুলো দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করার জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য জেলা খাদ্য কর্মকর্তা সুজা আলমকে বারবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ