বুধবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
সাঁথিয়া (পাবনা) প্রতিনিধি
পাবনা সাঁথিয়ায় গৃহবধূকে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত স্বামীকে গ্রেপ্তারের পর বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) আদালতের মাধ্যমে কারাগার পাঠানো হয়েছে।বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে উপজেলার কাশীনাথপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র সংলগ্ন জাপান টাওয়ারের তৃতীয় তলায়। এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন।
নিহত গৃহবধূর নাম হাফসা খাতুন (৩০)। তিনি বেড়া উপজেলার কুশিয়ারা-বাগজান গ্রামের মাওলানা নজরুল ইসলামের মেয়ে এবং স্থানীয় স্কাইলার্ক স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন।
স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মরদেহ
উদ্ধার করে। নিহতের স্বামী জিয়া আমিনপুর থানাধীন টাংবাড়ি গ্রামের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক জাহিদ হোসেন খানের ছেলে।
প্রতিবেশীদের জানান, জিয়া দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এমনকি ইয়াবা ও ফেনসিডিল সেবন করতেন। সন্ধ্যার পরে জিয়া স্থানীয় দু-একজনকে ফোন করে তার স্ত্রীর মৃত্যুর বিষয়টি জানালে স্থানীয়রা এসে টয়লেটের মধ্যে হাফসার গলায় ওড়না প্যাঁচানো লাশ পায়।
নিহত হাফসার মা বলেন, ‘১৫ বছর আগে জিয়া জোর করে আমার মেয়েকে বিয়ে করে। তাদের দুটি সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকেই জিয়া টাকার জন্য আমার মেয়েকে চাপ দিতে থাকে। পরে আমরা ব্যবসা করার জন্য তাকে কিছু টাকা দেই। কিন্তু বখাটে জিয়া ব্যবসা না করে টাকাগুলো নষ্ট করে। কিছুদিন পরে আবার আমার মেয়েকে টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাঝেমধ্যেই মারধর করে বাড়িতে পাঠিয়ে দিত। মেয়ের সুখের কথা ভেবে মাঝেমধ্যেই টাকা-পয়সা দিতাম। একপর্যায়ে মোটরসাইকেল কিনে দিতেও বাধ্য হই, তবুও আমার মেয়ে মন পায়নি। জিয়ার বাবা-মাসহ পরিবারের সবাই মিলে আমার মেয়ের ওপর নির্যাতন চালাত। শুধু দুই শিশুসন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে সব যন্ত্রণা সহ্য করেও সে সংসার করতে চেয়েছে। কিন্তু ওরা আমার মেয়েকে বাঁচতে দিল না।’
হাফসার বাবা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার মেয়ের হত্যাকারী জিয়ার ফাঁসি চাই। সেই সঙ্গে জিয়ার বোনের জামাই মেহেদীসহ পরিবারের ইন্ধনদাতা সবার বিচার চাই।’
কাশিনাথপুর পুলিশ বক্সের আইসি এস আই আশরাফুল আলম রাতেই অভিযান চালিয়ে আটক করেন জিয়াকে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হাফসার ছেলে ১৩ বছরের কিশোর হামিম ঘটনার সময় অজ্ঞান হয়ে যায়। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাতে সাংবাদিকদের কাছে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হামিম জানায়, তার ফুপা মেহেদী, হত্যার কাজে তার বাবার একমাত্র ইন্ধনদাতা।
সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন জানান, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেছেন। জিয়াকে রাতেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার আদালতের মাধ্যমে পাবনা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।