বৃহস্পতিবার, ৮ জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ২৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
২০১৬ এর শেষ দিনটি ভাল গেল না। সারা দিন শেষে সন্ধ্যায় ঘটে গেল অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। দুর্বৃত্তরা বাড়িতে ঢুকে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে গুলি করে হত্যা করে। স্বাভাবিকভাবেই ২০১৭ সালের প্রথম দিনটি দেশ জুড়ে বই উৎসবের নতুন বইয়ের গন্ধে মোহিত কোটি শিশুর আনন্দ- উচ্ছ্বাসেও দেশের মানুষকে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, জিজ্ঞাসা আর কৌতুহল নিয়ে কাটাতে হল।
দৈনিক সোনার দেশসহ দেশের প্রায় সব সংবাদ মাধ্যমগুলিই সাংসদ লিটনের হত্যাকা-ের প্রতিবেদন খুবই গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ ও প্রচার করেছে। ২০০৫ সালে হবিগঞ্জে আওয়ামী লীগের শাহ এএমএস কিবিরয়াকে হত্যার এক দশক পর কোনো সংসদ সদস্য হত্যাকা-ের শিকার হলেন। ৪৮ বছর বয়সী লিটন এবারই প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার (মেরিন) ছিলেন; আনন্দ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালকও ছিলেন তিনি।
এক শিশুকে গুলি করে দেশজুড়ে সমালোচিত হওয়ার এক বছরের মধ্যে নিজেই গুলিতে প্রাণ হারালেন লিটন। শিশু শাহাদাত হোসেন সৌরভকে গুলি করার মামলায় গত বছর গ্রেপ্তার হয়ে কিছুদিন কারাগারে থেকে জামিনে ছাড়া পান তিনি। শনিবার মাগরিবের নামাজের পরপর মোটর সাইকেলে অজ্ঞাতপরিচয় তিন যুবক বাড়িতে ঢুকে গুলি করে পালিয়ে যায়। ময়না তদন্তের রিপোর্ট সাংদের শরীরে ৫টি গুলির চিহ্নের কথা উল্লেখ করা হয়। লিটনকে হত্যার পর স্থানীয়রা হরতাল অবরোধ ও বিক্ষোভ দেখিয়েছে। রোববার সাংসদ লিটনের লাশ ঢাকায় নেয়া হয়। আজ সকালে জাতীয় সংসদ চত্বরে নামাজে জানাজা শেষে পুনরায় তার লাশ নিজ গ্রামে সমাহিত করার জন্য নেয়া হবে।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে এই হত্যাকা- জামাত-শিবিরের কাজ। স্বরাষ্ট্রমস্ত্রী দৃঢ়তার সাথেই বলেছেন দ্রুত খুনিদের গ্রেফতার করা হবে।
একজন জাতীয় সংসদকে বাড়িতে ঢুকে এই হত্যাকা- নানা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। খুব ন্বাভাবিকভাবেই একজন সাংসদকে এভাবে হত্যা করতে পারলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা পরিস্থিতি কী হবে? দুর্বৃত্ত-খুনিরা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে সে দিকেই নিতে চায়? মানুষের মনে সে স্মৃতি এখনো জ্বাজ্জল্যমান যে, স্বাধীনতার পর স্বাধীনতাবিরোধী দুর্বৃত্তচক্র এমপিদের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের হত্যা, পুলিশ সদস্যদের হত্যা করে থানার অস্ত্র লুট করা এবং পাটের গুদামে আগুন দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে ভেঙ্গে ফেলা ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে নস্যাৎ করে দেশকে অকার্যকর করার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। অবশ্য সেই ষড়যন্ত্র এখনো অব্যাহত আছে, নানা ধরণে। ২০১৩ ও ২০১৪ সেই ভয়ঙ্কর নাশকতার স্মৃতি মানুষ এখনো ভুলে যায় নাই। স্বাধীনতাবিরোধীচক্র ঘন ঘন ধরণ পরিবর্তন করে নাশকতার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও ২০১৬ সাল জুড়ে জঙ্গি দমনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বড় সাফল্যের দৃষ্টান্তও তৈরি হয়েছে।
জঙ্গিরা বেশ কোণঠাসা হয়েছে, দুর্বল হয়েছে। তদুপরি শক্তি সঞ্চয় করে আবারো নাশকতা চালাবে- সাংসদ লিটন হত্যার মধ্য দিয়ে তা আবারো জানান দিল। জঙ্গি- মৌলবাদীরা জাতিকে শেষ কামড়টি দিতে উদগ্র হয়ে আছে। এই চ্যালেঞ্জ বর্তমান পরিস্থিতিতে আছে। দেশের মানুষকে স্বস্তি দিতে হলে সাংসদ লিটনের হত্যাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। খুনিরা আইনের আড়ালে থাকলে জনমনের অস্বস্তি দিন দিন বাড়বেÑ যে পারিস্তিতি জঙ্গিদেরই কাম্য। আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতিতে আস্থা রাখতে চাই। দ্রুত খুনিদের গ্রেফতার করে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।