সাংস্কৃতিক চর্চা অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার হাতিয়ার ||পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে অতিথিরা

আপডেট: নভেম্বর ১১, ২০১৬, ১১:৫১ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক



সাংস্কৃতিক চর্চা অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার মুখ্য হাতিয়ার। সাংস্কৃতিক চেতনা যত বেশি ছড়িয়ে পড়বে, দেশ তত বেশি সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী হবে। তাই প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার পাশাপাশি বেশি বেশি করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে। শিক্ষার্থীদেরকে সাংস্কৃতিক চর্চায় অভ্যস্ত করে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় দেশ গড়ে তুলেতে হবে। আর প্রতিটি শিক্ষার্থীকে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে। তাদেরকে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে নগরীর শাহমখদুম কলেজে রাজশাহী থিয়েটার আয়োজিত স্কুল সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার পুরষ্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
রাজশাহী থিয়েটারের সভাপতি কামার উল্লাহ্ সরকারের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের রাজশাহীর সভাপতি ভাষাসৈনিক আবুল হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা।
রাজশাহীর খ্যাতিমান এ সংগঠনটি গত ১৯ আগস্ট বি বি হিন্দু একাডেমীতে চিত্রাঙ্কন, সঙ্গীত, সাধারণ নৃত্য, আবৃত্তি, একক অভিনয় ও বঙ্গবন্ধুর ভাষণÑ প্রতিটি বিষয়ে ৪টি বিভাগে প্রতিযোগিতার আয়োজন করে এবং মুক্তিযুদ্ধ পাঠাগারে স্কুল বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। ওই সব প্রতিযোগিতার ৭২টি পুরস্কার গতকাল শুক্রবার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রদান করা হয়।
পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন, চিত্রাঙ্কন ‘ক’ বিভাগের ‘উন্মুক্ত’ বিষয়ে প্রথম স্থান অধিকারী সানজিদা ইসলাম বিভা, দ্বিতীয় স্থান অধিকারী অর্পিতা, তৃতীয় স্থান অধিকারী রাকীন রহমান। ‘খ’ বিভাগের ‘গ্রাম বাংলা’ বিষয়ে প্রথম স্থান অধিকারী নাযীফা রহমান, দ্বিতীয় স্থান অধিকারী অনন্যা সিংহ, তৃতীয় স্থান অধিকারী হালিমা খাতুন, ‘গ’ বিভাগের ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’ বিষয়ে প্রথম স্থান অধিকারী জুবাইদা যোহরা সাদিয়া, দ্বিতীয় স্থান অধিকারী অরণী, তৃতীয় স্থান অধিকারী কাজী তাবাসুম মুশাররত মৌনতা, ‘ঘ’ বিভাগে ‘শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের প্রতিকৃতি’ বিষয়ে প্রথম স্থান অধিকারী সাবরিনা আফরিন (আরজু), দ্বিতীয় স্থান অধিকারী সৌরভ সরকার, তৃতীয় স্থান অধিকারী নূসরাত জাহান নিশা।
সঙ্গীত ‘ক’ বিভাগে ‘ছড়া গান’ বিষয়ে প্রথম স্থান অধিকারী সূবর্ণ প্রভা মহান্ত, দ্বিতীয় স্থান অধিকারী রিফাহ্ ইবনাত রুপন্তী, তৃতীয় স্থান অধিকারী নওরিন সিদ্দিকী, ‘খ’ বিভাগে ‘দেশ গান’ বিষয়ে প্রথম স্থান অধিকারী সুশ্রেয়া চক্রবর্তী প্রমা, দ্বিতীয় স্থান অধিকারী অর্পিতা সরকার, দ্বিতীয় স্থান অধিকারী মৈত্রী মজুমদার, তৃতীয় স্থান অধিকারী নুরুল ইসলাম স্বাধিন। ‘গ’ বিভাগে ‘পঞ্চকবির গান’ বিষয়ে প্রথম স্থান অধিকারী শর্মিষ্ঠা দে, দ্বিতীয় স্থান অধিকারী পূজা দে, তৃতীয় স্থান অধিকারী নাফিসা সিদ্দিকী, ‘ঘ’ বিভাগে ‘গণ সঙ্গীত/ লোক সঙ্গীত’ বিষয়ে প্রথম স্থান অধিকারী প্রজ্ঞা সেঁজুতি দে, দ্বিতীয় স্থান অধিকারী আয়েসা ফাহমিদা, সাধারণ নৃত্য ‘ক’ বিভাগে ‘উন্মুক্ত’ বিষয়ে প্রথম স্থান অধিকারী রিফাহ্ ইবনাত রুপন্তী, দ্বিতীয় স্থান অধিকারী নূরানী ইসলাম মাইশা, তৃতীয় স্থান অধিকারী সমৃদ্ধি সরকার। ‘খ’ বিভাগে ‘লোক সঙ্গীত’ বিষয়ে প্রথম স্থান অধিকারী সাফিয়া ফারহানা রিমু, দ্বিতীয় স্থান অধিকারী বৈশাখী চৌধুরী,তৃতীয় স্থান অধিকারী লুবাবা তাবাসসুম, ‘গ’ বিভাগে ‘দেশ গান ও গণ সঙ্গীত’ বিষয়ে প্রথম স্থান অধিকারী পূজা দে, দ্বিতীয় স্থান অধিকারী ফিদরাতুল মুনতাহ মিম্মা, তৃতীয় স্থান অধিকারী তাহামিদুর রহমান, আবৃত্তি ‘ক’ বিভাগে ‘উন্মুক্ত’ বিষয়ে প্রথম স্থান অধিকারী নওরীন সিদ্দিকী অহনা, দ্বিতীয় স্থান অধিকারী সম্পূর্ণা আচার্য্য তরী, তৃতীয় স্থান অধিকারী অতসি সিংহ, ‘খ’ বিভাগে প্রথম স্থান অধিকারী জাহিন আফিয়া আইমান, দ্বিতীয় স্থান অধিকারী লুবাবা তাবাসসুম, তৃতীয় স্থান অধিকারী শ্রী জয়ী সরকার, ‘গ’ বিভাগে প্রথম স্থান অধিকারী ইসমাত জাহান সূহা, দ্বিতীয় স্থান অধিকারী রাজন্যা ত্রিধা, দ্বিতীয় স্থান অধিকারী অনামিকা শাহ্রিন নিসা, তৃতীয় স্থান অধিকারী নাফিসা সিদ্দিকী, ‘ঘ’ বিভাগে প্রথম স্থান অধিকারী হাসনাইন আলী, দ্বিতীয় স্থান অধিকারী রাবেয়া বসরী ফারিয়া, একক অভিনয় ‘ক’ বিভাগে প্রথম স্থান অধিকারী নওরিন সিদ্দিকী, ‘খ’ বিভাগে প্রথম স্থান অধিকারী জাহিন আফিয়া আইমান, দ্বিতীয় স্থান অধিকারী সামীহা তাসনীম, ‘গ’ বিভাগে প্রথম স্থান অধিকারী পাম্মি খাতুন, দ্বিতীয় স্থান অধিকারী নাফিয়া সিদ্দিকী, তৃতীয় স্থান অধিকারী দিগন্ত দাস, ঘ বিভাগে প্রথম স্থান অধিকারী শুভ, বঙ্গবন্ধু সেজে বঙ্গবন্ধুর ভাষণে প্রথম স্থান অধিকারী সামীহা তাসনীম, দ্বিতীয় স্থান অধিকারী নাফিসা সিদ্দিকী, তৃতীয় স্থান অধিকারী নওরিন সিদ্দিকী, স্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন রাজশাহী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, রানার আপ গভ. ল্যাবরেটরী হাই স্কুল রাজশাহী। চূড়ান্ত পর্বে শ্রেষ্ঠ বক্তা হিসেবে মিফতাহুল জান্নাত (রিফাত)। ২য় পর্বে শ্রেষ্ঠ বক্তারা হলে, মিফতাহুল জান্নাত রিফাত, সানজিদা খাতুন পিংকি, কাইফ আহমেদ খান, রেজায়ে রাব্বী রিফাত। ১ম পর্বের শ্রেষ্ঠ বক্তারা হলেন, হাসনাইন আলী, সানজিদা খাতুন পিংকি, মিফতাহুল জান্নাত (রিফাত), জোবায়ের আল মুহাইমিন।
অনুষ্ঠানে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হচ্ছেন সেই মানুষ যিনি একটি দেশ দিয়ে গেলেন। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ দিয়ে গেলেন। সেই মানুষটির কারণে আজকে আমরা মুক্ত বাতাসে নিশ্বাস নিতে পারছি। তারই কন্যা আজকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে আছেন।’
এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন আরো বলেন, ‘২০০১ সাল থেকে ২০০৪ সাল চার দলীয় জোট সরকার, জামাত-বিএনপির জোট সরকার ক্ষমতায় ছিল। সেই সময় কি এইরকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে। আমাদের মা বোনেরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করতে পেরেছে, নৃত্যানুষ্ঠান কিংবা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে পেরেছে? পারেনি। কারণ তখন মনে করা হতো এগুলো হচ্ছে হিন্দুদের কাজ, হিন্দুরা করে। মুসলমাদের কাজ এগুলো নয়। তাই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মুসলমানরা করবে না। এভাবে তারা ঘোষণা দিয়ে মানুষের মনের সমস্ত জানালা বন্ধ করে দিত। অন্ধকার ঘরের মধ্যে আমাদেরকে বন্দি করে রাখতে চেয়েছিল।’
সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘রাজশাহী থিয়েটার রাজশাহীর সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অবদান রাখছে। বাংলাদেশের মানুষকে বাংলাদেশের সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সংস্কৃতির আদর্শে গড়ে তুলতে রাজশাহী থিয়েটার অনন্য ভূমিকা রেখেছে। এইসব সাংস্কৃতিক সংগঠনের সংস্কৃতি চর্চার কারণে বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়তা করেছে। আমরা সবাই নিশ্চয়ই স্বীকার করবো আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের সাহিত্য, আমাদের নাটক, আমাদের চেতনাবোধ যত বেশি শিশু কিশোর ও তরুণদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে বাংলাদেশ চেতনার দিক থেকে তত বেশি শাক্তিশালী হবে।’
সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা আরো বলেন, ‘আমার মনে হয় যে সেই যাত্রা হয়তো শুরু হয়েছে। এখন একটার পর একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। কখনো কবিতা, কখনো নাট্য প্রতিযোগিতা, কখনো নাচ-গানের অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। যদিও এটা যেন কিছু দিনের জন্য নিভে গেছিল।’
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভাষাসৈনিক আবুল হোসেন বলেন, ভাষা আন্দোলনের চেতনা আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা একই চেতনা। ওই চেতনাকে ধারণ করেই আমাদেরকে চলতে হবে। আর চলতে পারলে আমাদেরকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। তাই সেই চেতনাকে মনে ধারণ করে সাংস্কৃতিক চর্চা করতে হবে, সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ