মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১১ আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
আগামী ৩০ দিনের মধ্যে নগরীর সব সাইনবোর্ড বাংলায় রূপান্তরের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। যদি কেউ ইচ্ছে করেন বাংলার পাশাপাশি ছোট পরিসরে ইংরেজিতেও লিখতে পারবেন। রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ অনুরোধ জানানো হয়েছে।
যাতে বলা হয়েছে, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। বাংলাদেশ একটি জাতি রাষ্ট্র। ১৯৫২ সালে মায়ের ভাষার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির জন্যও বাংলাদেশের মানুষ অকাতরে রক্ত দিয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাস বাঙালির ভাষার মাস। প্রদর্শিত সব সাইন বোর্ড বাংলা ভাষায় লেখার বিষয়ে সরকারের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও অসংখ্য সাইন বোর্ড ইংরেজিসহ অন্যান্য ভাষায় পরিলক্ষিত হচ্ছে-যা কাক্সিক্ষত নয়। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দৈনিক সোনার দেশে সোমবার প্রকাশিত হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উদ্যোগটি প্রশংসার দাবি রাখে। আমরা এটিকে স্বাগত জানাই।
বাঙালি জাতির সুবিস্তৃত ইতিহাসে ১৯৫২ সালের ভাষার আন্দোলন ছিল জাতির প্রথম ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের সূচনা। স্বাধিকারের প্রশ্নে, মাতৃভাষায় মনের ভাব প্রকাশের জন্য, বিশ্বের জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার বন্ধনকে সুদৃঢ় করতে ভাষা আন্দোলনের চেতনা আমাদেরকে জাগ্রত করে, শক্তি যোগায়, অনুপ্রাণিত-উৎসাহিত করে। জাতি হিসাবে আমরা যখন গভীর সঙ্কটে নিপতিত হই তখন ‘মহান একুশে-’ আমাদের পথ দেখায়, সাহসী করে এবং কর্তব্য ও কাজে সঠিক পথনির্দেশ করে। তাই মহান একুশে আমাদের জাতীয় জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশই শুধু নয়, বিশ্বের প্রতিটি মুক্তিকামী মানুষের পথের দিশা, নিজ ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য রক্ষার অবিনাশী প্রেরণা।
একুশের তাৎপর্য ও গুরুত্ব খুবই ব্যাপক । এটি আর বাংলাদেশের সীমানার মধ্যেই আবদ্ধ নয়, আন্তর্জাতিক পরিম-ল জুড়ে এর ব্যাপকতা। ১৯৯৯ সালে মহান একুশে ইউনেস্কো কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি লাভ করে। বাঙালি জাতির গৌরবময় সংগ্রামের ইতিহাস বিশ্বের দেশে দেশে চর্চিত হচ্ছে, আলোচিত হচ্ছে। জাতি হিসাবে আমরাও মহিমান্বিত হচ্ছি। এটিই আমাদের পরম পাওয়া।
একুশের বিশ্ব স্বীকৃতির ফলে আমাদের ওপর আরো বেশি দায়িত্ব বর্তেছে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও অনুশীলনের ক্ষেত্র তৈরি করে দেয়াও আমাদের কর্তব্য। ভেদ-বুদ্ধির বিপরীতে মানুষের অধিকারের সুরক্ষা, সৌহার্দ-সম্প্রীতি-ভালোবাসার এক সমাজ প্রতিষ্ঠাও আমাদের দায়িত্বের মধ্যে চলে এসেছে; তা যেন আমরা কখনও বিস্মৃত না হই। আমরা যেন কখনই ভুলে না যায় মহান ভাষাশহিদ বন্ধুদের আত্মত্যাগ ও অবদানের কথা।
স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরও সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালুর জন্য দাবি জানাতে হয়। এটা জাতি হিসেবে জন্য লজ্জারই। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন অন্তত তাদের দায়বোধ থেকে অনুভব করেছে যে, নগরীর সাইনবোর্ডগুলো বাংলায় লিখা উচিৎ। রাজশাহী সিটি করপোরেশনও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। রাজশাহী মহানগরবাসীর শান্তি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, ব্যবসা-বাণিজ্যের উৎকর্ষতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। রাজশাহী সিটি করপোরেশ বাংলায় সাইনবোর্ড ব্যবহারে নগরবাসীকে উৎসাহিত করতে পারে। নগরবাসীর অভিভাবক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এটি তাদের দায়িত্বেরই ও অংশ।