সাতচল্লিশ বছরের খাজনা চল্লিশ টাকা

আপডেট: মার্চ ৩১, ২০২৪, ৪:২৬ অপরাহ্ণ

সাতচল্লিশ বছরের খাজনা চল্লিশ টাকা

আব্দুর রউফ রিপন, নওগাঁ প্রতিনিধি:


নওগাঁর রাণীনগরে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে এক জমির সাতচল্লিশ বছরের খাজনা হিসেবে মাত্র চল্লিশ টাকা নেয়া হয়েছে। বর্তমানে এমন শত শত অনিয়ম, ঘুষ বাণিজ্য আর হয়রানির আখড়ায় পরিণত হয়েছে রাণীনগর সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিস।

এছাড়া বর্তমান ভূমি কর্মকর্তা মোছা. ফাতেমা খাতুন তার ভাই বহিরাগত মামুনের মাধ্যমে অফিসের কম্পিউটারের সব কাজ সম্পন্ন করে আসছেন এবং মামুন অফিসের নিয়োগপ্রাপ্ত কোনো কর্মচারী না হলেও ফাতেমা তার দ্বারাই ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে সব কাজ চালিয়ে আসছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অপরদিকে যে অফিস থেকে সরকার লাখ লাখ টাকা রাজস্ব আয় করছে সেই অফিসে নেই কোনো সাইনবোর্ড। দীর্ঘদিন সংস্কার কিংবা মেরামত না করার কারণে বর্তমানে তা জীর্ণদশায় পরিণত হয়েছে। দেখে বোঝার উপায় নেই যে এই ভবনটি একটি সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিস।

ভুক্তভোগী উপজেলার খাগড়া গ্রামের মৃত-আব্দুল জব্বারের ছেলে আলী আল এফতেখার সেবু জানান, তিনি উপজেলার বালুভরা-৩৬ মৌজায় ২২৩০ নং হোল্ডিং এ ১২৫৬ দাগে তার ভাই আলী আল এমরানের ক্রয় করা ৩.৫ শতাংশ জমির নিয়মিত খাজনা দিয়ে আসছেন। তারই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের খাজনা দিতে ভূমি অফিসে গেলে সেখানকার বহিরাগত কম্পিউটার অপারেটর মামুন জানান, নতুন ভূমি আইন অনুসারে আপনাকে ওই খতিয়ানের পুরো জমির ১৩৮৩ সন থেকে ১৪৩০ সন (বাংলা) পর্যন্ত মোট ৪৭ বছরের খাজনা পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু তিনি ১৩৭৯ সন থেকে ১৪২৯ সন পর্যন্ত ৩.৫ শতাংশ জমির আংশিক খাজনা পরিশোধ করেছেন। সে কারণে পুরো খাজনা না দিতে চাইলে তাকে পরবর্তিতে যোগাযোগ করতে বলেন।

এরপর অফিসে গেলে মামুন জানান, এই বিষয়গুলো নিয়ে আগে যোগাযোগ করতে হয়। এরপর সেবু বিগত সময়ের খাজনা পরিশোধের সকল কাগজপত্রাদি দেখানোর পরে ২৯ বছরের খাজনা দিতে বলে জানান মামুন। পরবর্তিতে তিনি বিষয়টি উপজেলা ভূমি অফিসে গিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জানালে তারা পাত্তা না দিলে উপায়অন্তর না পেয়ে তিনি বিষয়টি সাংবাদিককে অবগত করলে পরবর্তি সময়ে সাংবাদিকসহ তিনি অফিসে যাওয়ার পরবর্তি সময়ে তার কাছ থেকে এক বছরের খাজনা হিসেবে মাত্র চল্লিশ টাকা নেয়া হয়।

তিনি আরো বলেন, তিনি একজন ইউনিয়ন পরিষদের সচিব এই পরিচয় দেওয়ার পরও ভূমি অফিসের ওই বহিরাগত ব্যক্তি কোন মূল্যায়নই করেননি। বরং দিনের পর দিন তিনি হয়রানির শিকার হয়েছেন। তার ক্ষেত্রে যদি এমন ঘটনা হয় তাহলে ইউনিয়নের অন্যান্য সাধারণ মানুষরা এই অফিস থেকে ঘুষ আর হয়রানি ছাড়াই কতটুকু মানসম্মত সেবা পেতে পারেন সেই বিষয়টি পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে। এই অফিসে এসে যারা এক টাকা খাজনা দিতে যোগাযোগের মাধ্যমে আগেই পাঁচ টাকা ঘুষ দেন তাদের কোনো সমস্যায় পড়তে হয় না আর যারা যোগাযোগ করে না তাদের দিনে পর দিন নানা অজুহাতে হয়রানি করানো হয়। আমরা এমন গুরুত্বপূর্ণ অফিস থেকে কোনো প্রকারের ঘুষ, হয়রানি ও ভোগান্তি ছাড়াই সেবা পেতে চাই। তাই সেবাপ্রাপ্তির পরিবেশ সৃষ্টি করতে ইউনিয়নবাসীর পক্ষ থেকে তিনি সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।

সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারি কর্মকর্তা (তহশিলদার) মোছা. ফাতেমা খাতুন বলেন এসি-ল্যান্ড স্যারের অনুমতিক্রমে তার কাজের সহযোগিতার জন্য তিনি তার ভাইয়ের মাধ্যমে অফিসের সকল কম্পিউটারের কাজ করে নেন। আর খাজনা আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন যে আরএস খতিয়ান অনুসারে খাজনা নিলে সেবুর কাছ থেকে নতুন ভূমি আইন অনুসারে ৪৭ বছরের খাজনা নিতে হতো। আর তিনি যেহেতু জমির আংশিক খাজনা দিয়ে এসেছেন তাই সর্বশেষ বকেয়া বছরের খাজনাই সেবুর কাছ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া নতুন করে ভূমি অফিস নির্মাণ করা হবে বলে অফিসের সামনে কোনো সাইনবোর্ড ঝুলানো হচ্ছে না বলে তিনি জানান।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে তাবাসসুম মোবাইল ফোনে জানান, বহিরাগত মানুষের মাধ্যমে ভূমি অফিসের কাজ করানো হচ্ছে এই বিষয়টি তার জানা নেই। তিনি এই বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এছাড়া ঘুষ, হয়রানি ও ভোগান্তির বিষয়েও অভিযোগ পেলে তিনি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।