শনিবার, ১ এপ্রিল, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
আওয়ামী লীগ সরকার দেশে সন্ত্রাস দমনের লক্ষে চরমপন্থিদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে ১৯৯৯ সালে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে। এরই প্রেক্ষিতে সরকারের ডাকে সাড়া দিয়ে রাজশাহীতে পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির ৫৭ জন চরমপন্থি আত্মসমর্পণ করেন। সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এরই মধ্যে তাদের পুনর্বাসিত করার উদ্যোগ বান্তবায়িত হচ্ছে। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দৈনিক সোনার দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
তথ্যমতে, আত্মসমর্পণকৃত চরমপন্থিদের পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় প্রধানমন্ত্রী ১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। এর মধ্য থেকে এই জেলার চরমপন্থিদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে প্রথম ধাপে ৫৭ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে। সেই অর্থের মধ্য থেকে রাজশাহী স্বপ্নচাষ সমন্বিত কৃষি সমবায় লিমিটেডের নামে বাগমারা উপজেলার যোগীপাড়া ইউনিয়নে ১৩ বিঘা জমি কেনা হয়েছে। সমবায়ের মাধ্যমে আধুনিক সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলে সদস্যদের স্বনির্ভর করাই এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য।
১৯৭২ সালের শুরু থেকেই বাংলাদেশে মাওবাদী উগ্র বামপন্থার রাজনৈতিক ধারার শুরু হয়। এরা মূলত সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাধীনতাকেই অস্বীকার করেই সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র অবস্থান নেয়। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশে চরমপন্থিদের সন্ত্রাস ও ধ্বংসাত্মক কর্মকা- ওই সময় বঙ্গবন্ধুর সরকারকে বেশ বেকায়দায় পড়তে হয়। চরমপন্থিরা শ্রেণিশত্রু খতমের নামে হত্যাকা-সহ থানা আক্রমণ করে পুলিশ হত্যা ও অস্ত্র লুট, ব্যাংক লুট, ডাকাতি- ছিনতাই, পাটের গুদামে অগ্নিসংযোগের মত ভয়ঙ্কর সব অপরাধ সংঘটিত করতে থাকে। মাওবাদী উগ্র বামপন্থি নেতাদের নেতৃত্বে বিংশ শতাব্দির আশির দশকের শেষের দিকে ‘লাল পতাকা’ নামে নকশালপন্থি মাওবাদী সংগঠনের কার্যক্রম শুরু হয় রাজশাহী ও পাবনা অঞ্চলে। নব্বুয়ের দশকে যার বিস্তার ঘটে রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও কুষ্টিয়া জেলায়। প্রথমদিকে লিফলেট, পোস্টার ও দেয়ালে লিখে প্রচার চালায়। ১৯৯৬ সালে শ্রেণিশত্রু খতমের নামে রাজশাহীর বাগমারার যোগীপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেনকে প্রথম গলা কেটে হত্যা করে প্রকাশ্যে আলোচনায় আসে সংগঠনটি। পরে রাজশাহী শহরসহ জেলার বাগমারা, দুর্গাপুর, পুঠিয়া উপজেলায়, নওগাঁর আত্রাই, রানীনগর, মান্দা ও সদর উপজেলা, নাটোরের সদর উপজেলা, নলডাঙ্গা ও সিংড়ায় ব্যাপক দৌরাত্ম্য শুরু হয়।
আওয়ামী লীগ ২৩ বছর পর ১৯৯৬ সালের সরকার গঠন করলে ১৯৯৯ সালে চরমপন্থিদের প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে। স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করলে সরকার তাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিবে। ওই সময় সরকারের ডাকে রাজশাহীর মত দেশের বিভিন্ন স্থানে চরমপন্থিরা ভ্রান্ত পথ পরিহার করে সাধারণ ক্ষমার সুযোগ গ্রহণ করেন। সরকারের এই প্রক্রিয়া নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা থাকতেই পারে কিন্তু এই উদ্যোগ যে, রাজশাহী অঞ্চলে স্বাভাবিক শান্তিপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। ২০০৮ সালের আগের অশান্ত রাজশাহী অঞ্চলকে উন্নয়ন ধারায় আনতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। সরকারের ওই উদ্যোগের ফলেই রাজশাহী অঞ্চলের চরমপন্থি উপদ্রুত এলাকা সমূহে শান্তি-স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে এসেছে, সেখানের অর্থনীতি ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়েছে। মানুষের মধ্যেকার ভয় ও আতঙ্ক দূর হয়েছে। মানুষের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাস ফিরে এসেছে। মানুষ এখনো সেই বিভৎস ও ভয়ঙ্কন দিনের কথা স্মরণ করে শিহরিয়ে ওঠে। নিশ্চয় শান্তিপ্রিয় মানুষ সামনের দিকে এগোতে চায়। বাসযোগ্য ভূমিতে জীবনজীবিকার নিরাপত্তায় উন্নয়নের ধারায় থাকতে চায়। রাজনৈতিক ও সামজিক উদ্যোগের মাধ্যমে সরকার অপরাধ দমন ও অপরাধীদের পুনর্বাসনে তাদের সুপথে ফিরিয়ে আনার প্রয়াস অব্যাহত থাকবে, সে প্রত্যাশাও করি।