সাপাহারে আমের ওজন নিয়ে রশি টানা-টানি চরম ভোগান্তিতে আম-চাষীরা

আপডেট: জুন ২৬, ২০২৪, ৮:৪৩ অপরাহ্ণ

চরম ভোগান্তিতে আম-চাষীরা
সাপাহার (নওগাঁ) প্রতিনিধি:


ভরা আমের মৌসুমে দেশের আমের বাণিজ্যিক রাজধানী নওগাঁর সাপাহারে আমচাষী সমিতি ও প্রশাসন এবং আম ব্যবসায়ী সমিতির মধ্যে সৃষ্ট রশি টানাটানির মধ্যে পড়ে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সাধারণ আমচাষী।

জানা গেছে, প্রতি বছরের ন্যায় এবারেও আমের মৌসুমে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ব্যাপারিগণ বিভিন্ন আড়তে শেলটার নিয়ে বিগত কয়েক বছরের মত ৫২কেজিতে (ক্যারেটসহ) ১ মণ আম হিসেবে ক্রয়-বিক্রয় চালিয়ে আসছিল। এরই মধ্যে অন্যান্য বছরের মত এবারেও আমচাষী সমিতির পক্ষ থেকে অতিরিক্ত ১০/১২কেজি আমের বিষয়ে আলোচনা সমালোচনা শুরু হলে কয়েক দফায় উপজেলা প্রশাসনের মধ্যস্থতায় আমচাষী ও আম ব্যাসায়ী সমিতির কর্মকর্তাদের সাথে দফায় দফায় মিটিং বসে।

সর্ব শেষ গত ২৩ জুন মাননীয় খাদ্য মন্ত্রী সাপাহারে এক সরকারি সফরে এলে বিষয়টি তার নজরেও আসে এবং তাৎক্ষণিক এক জরুরি সভায় তিনি উভয়ের লাভ লোকশানের কথা বিবেচনা করে ৪৮কেজিতে (ক্যারেটসহ) এক মণ আম ক্রয়-বিক্রয় এবং প্রতিকাঠায় কৃষকের নিকট থেকে ৭০ টাকা আদায় করার সিদ্ধান্ত প্রদান করেন। তারই ধারাবাকিতায় গত ২৫ জুন সাপাহার সদর ইউনিয়ন পরিষদ সভা কক্ষে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা… নেতৃত্বে বাজার মনিটরিং কমিটির এক বৈঠক বসে।

উক্ত বৈঠকে আম ব্যাবসায়ীর পক্ষে সমিতির সভাপতি শ্রী কার্তিক সাহা ৪৮ কেজিতে ১ মণ আম ক্রয় করার জন্য ব্যাপারীদের নির্দেশ দেয়ার কথা স্বীকার করলেও প্রশাসনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ৭০ টাকার বদলে ৮০ টাকা আদায়ের ঘোষণা প্রদান করেন।

বৈঠক শেষে অজানা কারণে ব্যাপারীগণ বাজারে আম কেনা কার্যক্রম বন্ধ করে আড়তে কালক্ষেপণ করে বসে থাকেন। অপরদিকে সকাল ৭টা হতে বাজারে আসা হাজার হাজার আমচাষীগণও প্রচণ্ড রোদ ও গরম উপেক্ষা করে সারাটা দিন তাদের আম নিয়ে রাস্তায় বসে থাকেন। অবশেষে সন্ধার পর সারা দিন জিম্মি হয়ে বসে থাকা কিছু আমচাষী তাদের অতি প্রয়োজনে দু’একটি আড়তে বাধ্য হয়ে ৫০/৫২কেজি হিসেবে কম দামে আম বিক্রি করে তাদের প্রয়োজন মিটিয়েছেন।

এছাড়া অধিকাংশ আমচাষীগণ মনের দুঃখে রাতে তাদের আম বাসায় ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। আম ফিরিয়ে নেয়া এমনি এক গোয়ালা গ্রামের আমচাষী, ফয়জুল ইসলাম, গৌরীপুরের রেজাউল, পিছলডাঙ্গার আব্দুল করিম, নিশ্চিন্তপুরের আবু সাঈদ এর সাথে কথা হলে তারা প্রত্যেকে ক্ষোভের সাথে জানান যে, আম বাড়িতে নিয়ে পচিয়ে ফেলব তার পরেও ব্যসায়ীদের অন্যায় দাবীর কাছে মাথা নোয়াবো না।

এদিকে ব্যাপারীগণ ও তাদের পূর্বের নেয়া ৫০/৫২ কেজিতে মণ ছাড়া আম ক্রয় করবে না বলে আম ক্রয় করা থেকে বিরত রয়েছেন। বর্তমানে সাধারণ আমচাষীগণ সৃষ্ট সমস্যার মধ্যে পড়ে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এবং এক প্রকার জিম্মি হয়ে ব্যাপারিদের কথা মত ৫০/৫২ কেজিতে মণ ও তাদের নির্ধারণ করা দামেই আম বিক্রি করতে হচ্ছে।
এবিষয়ে সাপাহার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ হোসেন এর সাথে কথা হলে তিনি জানান যে, প্রশাসনিক ভাবে যে ৪৮ কেজি আম কেনা-বেচার সিন্ধান্ত নেয়া হয়েছে তার বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই, বিষয়টি জোরালোভাবে খতিয়ে দেখার জন্য তিনি বাজার মনিটরিং কমিটির উপর দায়িত্বভার অর্পন করেছেন বলেও জানিয়েছেন।

অচিরেই এই সমস্যা নিরসনে তারা আমচাষী সমিতি ও আম ব্যবসায়ী সমিতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। বিগত মঙ্গলবার থেকে আজও চাষীদেরকে আমভর্তি পরিবহনের গাড়ির পশরা নিয়ে রাস্তায় বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ