বৃহস্পতিবার, ৮ জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ২৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক
শুক্রবার সকালের ঘটনা। কয়েকজন বহিরাগত তরুণ জুতা পায়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ‘সাবাশ বাংলাদেশ’ ভাষ্কর্যের বেদীতে বসে ছিলেন। দেখতে পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত কয়েকজন সাংবাদিক তাদের ভাস্কর্যের বেদী থেকে নেমে যেতে অনুরোধ করেস। কিন্তু তা না শুনে বহিরাগত তরুণরা সাংবাদিকদের সঙ্গে উদ্ধত আচরণ শুরু করেন।
তারা বলেন, ‘সাবাশ বাংলাদেশ তো আমরাই বানিয়েছি, এখানে আমরা যা ইচ্ছা তাই করবো। এখানে কীভাবে উঠতে হবে সেটা আমরা ভালো জানি।’
এসময় সাংবাদিকদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা শুরু করেন বহিরাগতরা। বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে বহিরাগতদের একজন ‘তুই’ সম্বোধন করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কি তোদের বাপের!’ এসময় বহিরাগতদের আরেকজন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে পরিচয় আছে দাবি করে সাংবাদিকদের ‘দেখে নিবো’ বলে হুমকি দেয়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন সাংবাদিক বলেন, সকালে আমরা ‘সাবাশ বাংলাদেশ’ চত্বরে গিয়ে দেখতে পাই, কয়েকজন বহিরাগত জুতা পায়ে ভাস্কর্যের বেদীতে বসে আছেন। এটা দেখে আমরা তাদের অনুরোধ করেছিলাম ভাস্কর্যের বেদী থেকে নেমে যেতে। কিন্তু তারা না শুনে উল্টো আমাদের সঙ্গে উদ্ধত আচরণ করেস এবং ‘সাবাশ বাংলাদেশ’ তারাই বানিয়েছে বলে দাবি করেন। এসময় ওই বহিরাগতরা মতিহার থানা আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতার নাম করে আমাদের ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দেন।
ক্ষুব্ধ সাংবাদিকদের কয়েকজন বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতীক, ‘সাবাশ বাংলাদেশ’র মতো একটা পবিত্র জায়গায় এভাবে জুতা পায়ে ওঠা মানে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি অবমাননা করা, শহীদদের প্রতি অবমাননা করা। এভাবে বহিরাগতরা এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবহ স্থাপনাগুলোর অবমাননা করে যাবে, এটা মেনে নেয় যায় না।
ওই বহিরাগতদের মধ্যে একজনের নাম মেজবাহ, তিনি নগরীর সাধুর মোড় এলাকার বাসিন্দা। অন্যজনের নাম জিসান, তিনি বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর এলাকার বাসিন্দা ও কলেজ শিক্ষার্থী।
সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা ঘটতে দেখা যাচ্ছে। সাবাশ বাংলাদেশ, শহীদ মিনার, শহীদ ড. জোহার মাজার প্রাঙ্গণ, বদ্ধভূমি, নির্মিতব্য শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতি ফলকে প্রায়ই অনেককে জুতা পায়ে ওঠতে দেখা যায়। এদের অধিকাংশই বহিরাগত শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় যুবক।
এ ব্যাপারে ছাত্র ফেডারেশন রাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক তমাশ্রী দাস বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা শুধু এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, সারা দেশেই খুব সাধারণ ব্যাপার হয়ে গেছে। এর পেছনে কারণটা সাধারণভাবে ব্যক্তিগত মূল্যবোধ, নৈতিকতার অবক্ষয়। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অসুস্থ ক্ষমতার চর্চা, যার ফলে ক্ষমতা যার হাতে থাকছে, সে সাধারণ মূল্যবোধ, নৈতিকতা, আদর্শকে নিজের মতো বানিয়ে নিচ্ছে। প্রশাসনও নিরব ভূমিকা পালন করে চলছে। আর বিশ্ববিদ্যালয়েরও সুষ্ঠু সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক চর্চার পরিবেশ না থাকার কারণে এ ধরনের ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ে বার বার ঘটে যাচ্ছে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মজিবুল হক আজাদ খান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রতিনিধিত্বকরী স্থাপনাগুলোর যেন অবমাননা না হয় সে বিষয়ে রাবি প্রশাসন সব সময় সজাগ। তবে বর্তমান সময়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে রাবি প্রশাসনের সম্পর্ক ভালো না। তাই স্থানীয় বহিরাগতরা এরকমভাবে ঝামেলা তৈরির চেষ্টা করছে। আগামী ২০ তারিখ পর্যন্ত তারা এ রকম ঝামেলা করবে বলে আমাদের ধারণা। তারপরও আমরা এগুলো সমাধানে কাজ করে যাচ্ছি।’