নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সাবেক এমপি এনামুল হকের সোয়েটার কারখানার শ্রমিকরা তিন থেকে আট মাস পর্যন্ত বেতন পাননি। দিনের পর দিন বেতন না পেয়ে তারা মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। এ অবস্থায় বকেয়া বেতনের দাবিতে বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাজশাহী নগরীর বিসিক এলাকায় সাকোয়াটেক্স লিমিটেড নামের এই কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেছেন।
সাকোয়াটেক্স লিমিটেড এনা গ্রুপের একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। সাবেক এমপি এনামুল হক এনা গ্রুপের চেয়ারম্যান। তিনি নবম, দশম ও একাদশ সংসদে রাজশাহী-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এমপি নির্বাচিত হন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে তিনি লাপাত্তা। দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার দুর্নীতি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এনামুল হক দুর্নীতি করে হাজার কোটি টাকার মালিক হলেও কারখানার শ্রমিকদের ঠিকমতো বেতন দিতেন না। বেতন না পেয়ে প্রায়ই এই কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে তাঁরা কারখানায় বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যরা কারখানায় গিয়ে ব্যবস্থাপক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তবে বেলা ২টা পর্যন্ত কোনো সমাধান হয়নি।
সাকোয়াটেক্স লিমিটেডের ট্রান্সপোর্ট শাখার কর্মচারী চন্দন তরফদার বলেন, বেতন চাইলে চাকরিচ্যুত করার ভয় দেখানো হতো। অবশেষে গত মে মাসে এক মাসের বেতন দেওয়া হয়। এরপর আমাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এখনো তিনি আট মাসের বেতন পাবেন। আমরা নিদারুণ আর্থিক কষ্টে আছেন। বকেয়া বেতন পরিশোধ না করলে কারখানা থেকে যাব না।
কারখানার শ্রমিকরা জানান, কারখানায় প্রায় ৩৫০ জন শ্রমিক আছেন। কারও তিন মাস, কারও ছয়, কারও সাত বা আট মাসের বেতন বকেয়া। বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করার কারণে কয়েক মাস আগেই কারখানার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। এরপর গ্যাসে জেনারেটর চালিয়ে কারখানা চালু রাখা হয়েছিল। গ্যাসের বিল পরিশোধ না করায় এই লাইনটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন কারখানা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে দেখে বকেয়া আদায়ে তারা আন্দোলনে নেমেছেন। বকেয়া টাকা ছাড়া তারা এবার ঘরে ফিরবেন না।
কারখানার নিটিং বিভাগের শ্রমিক নাসিম পারভেজ বলেন, আমি ছয় মাসের ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পাব। বেতন চাইলেই শুধু কালক্ষেপণ করা হয়েছে। সাবেক এমপি এনামুল শ্রমিকদের ভয়ে অনেক দিন ধরে কারাখানায় আসেন না। নির্বাহী পরিচালক দেখাশোনা করেন। তিনিও এখন ঢাকায় বসে আছেন। কারখানায় আসছেন না। তাঁরা বেকায়দায় পড়েছেন।
যোগাযোগ করা হলে কারখানার ব্যবস্থাপক সজল আহমেদ বলেন, কারখানায় সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্যরা এসেছেন। তাদের সঙ্গে কথা হচ্ছে। সবার সঙ্গে আলোচনা করে কী সমাধান হয় সেটা পরে জানানো হবে।