রবিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
রাবি প্রতিবেদক:
বলা হয়ে থাকে ‘মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়’। প্রতিটি মানুষ স্বপ্ন দেখে এবং স্বপ্ন নিয়েই বেঁচে থাকে। আবার প্রত্যেকের স্বপ্নটাও হয়ে থাকে আলাদা। নিজের লক্ষ্যে পোঁছাতে পেরোতে হয় কতশত বাঁধা। ত্যাগ, ধৈর্য এবং পরিশ্রমের ফলেই মানুষ তার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছায়। পা রাখে সফলতার সিঁড়িতে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১১-২০১২ সেশনের সাবেক শিক্ষার্থী মো. জহিরুল ইসলাম। সম্প্রতি ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষায় প্রকাশিত ফলাফলে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তিনি পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর (এস.আই) পদেও চাকরি করছেন গত চারবছর ধরে।
বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার ইউসুফ শিকদার এবং শাহিদা পারভিন দম্পতির তৃতীয় সন্তান তিনি। মধ্যবিত্ত ও কৃষক পরিবারে জন্ম নেওয়া জহিরুল ২০০৮ সালে কলসকাঠি বিএম একাডেমি থেকে এসএসসি এবং বরিশালের সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ হতে ২০১০ সালে এইচএসসি পাশ করেন।
পরবর্তীতে ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি)। ২০১৬ সালে স্নাতক এবং ২০১৭ সালে স্নাতকোত্তর পাশের পর ২০১৯ সালে পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। কিন্তু বিসিএস ক্যাডার হবেন এটা ছিল স্বপ্ন তার। সেই স্বপ্ন পূরণ না হওয়া অবধি থেমে থাকেননি এই শিক্ষার্থী।
বিসিএস যাত্রার পেছনের গল্প সম্পর্কে জহিরুল বলেন, বিজনেস ব্যাকগ্রাউন্ডের স্টুডেন্ট হওয়ায় শুরুতে ব্যাংকিং সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়ার পরিকল্পনা ছিল। শুরুর দিকে প্রস্তুতিও ছিল সেইকেন্দ্রিক। কিন্তু ৩৮তম বিসিএসের সার্কুলার প্রকাশ পেলে মনে হলো আবেদন করি। এরপর বিসিএস’র প্রতি ভালোলাগা কাজ করতে শুরু করে। তখন থেকেই বিসিএস কেন্দ্রিক পড়াশোনা শুরু।
তিনি বলেন, ৩৮তম বিসিএসের ফলাফল প্রকাশ পেলে প্রিলিতে টিকেলাম। এর মধ্যে এসআইতে সুযোগ হয়। ট্রেনিং চলতে থাকে। তখন থেকেই কর্মজীবন শুরু করলেও বিসিএস এর প্রতি আগ্রহ হারাইনি। কারণ বিসিএস ছিল আমার স্বপ্ন। আমি শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যেতে চাইলাম।
সাফল্যের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, চাকরি এবং পাশাপাশি পড়াশোনা নিয়মিত ধরে রাখা খুবই কঠিন ছিল। এর মধ্যে ৪০তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিই। কিন্তু তখন পুলিশ অ্যাকাডেমিতে ট্রেনিং এ থাকায় পরীক্ষায় অংশ নিলেও সেটাতে সাফল্য পাইনি। ৪১তম বিসিএসে প্রিলি এবং লিখিত পরীক্ষায় নির্বাচিত হলেও মৌখিক পরীক্ষা শেষে নন-ক্যাডারে আটকে যাই। সাফল্য ধরা দেয় ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষায়।
সাফল্যের মূলমন্ত্র কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হারার আগে হারবো না’ এটিকে আমি অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়েছিলাম। আমি পারি বা না-পারি, আমি চেষ্টা চালিয়ে যাব। পরিশ্রম করে যাব। সে অনুযায়ী আমি চেষ্টা চালিয়ে যাই।
প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে জহিরুল বলেন, বিভিন্ন সময়ে নানা রকম প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। কারণ, আমি যে চাকরি করি সেটা অন্য যেকোনো চাকরির থেকে ভিন্ন। এখানে নিজের জন্য ব্যক্তিগত সময় নেই বললেই চলে। এরই মধ্য দিয়ে যতটুকুই সময় পেয়েছি আমি শুধু চেষ্টা করে গিয়েছি।
চাকরিতে প্রেশারের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে বিসিএসসহ অন্যান্য চাকরির পরীক্ষা দিয়েছি। এমনো হয়েছে পরদিন সকালে পরীক্ষা কিন্তু আগের দিন রাত পর্যন্ত থানায় অনেক কাজের চাপ ছিল। আবার কখনো এমনো হয়েছে যে, পরীক্ষার আগের রাতেও কোনো না কোনো দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। অনেক কষ্ট করে এভাবেই ম্যানেজ করে বিভিন্ন সময়ে পরীক্ষাগুলোতে অংশগ্রহণ করেছি।
পরীক্ষা বা ভাইবা’র সময় আসলেই মনে হতো কাজের ব্যস্ততা আরো বেশি বেড়ে যেত। কিন্তু আমি একটি বিষয় সব সময় মনে রেখেছি যে হাল ছাড়ব না। হতাশ হওয়া যাবে না। যার কারণে প্রস্তুতি যেমনই থাকুক প্রায় সব পরীক্ষাতে অংশ নিয়েছি। কোনো পরীক্ষাই মিস হতে দিইনি।
নতুনদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, কখনো হাল ছাড়া যাবে না। ধৈর্য ও একাগ্রতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো পরিস্থিতিতে তারা যেন ভেঙে না পড়ে নিজের লক্ষ্যে স্থির থেকে পরিশ্রম করতে হবে। সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাস রেখে একাগ্রতার সঙ্গে কাজ করতে পারলে সেখানে সফলতা আসবে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে অন্যান্য চাকরিতে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থাকলেও বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডার হিসেবেই যোগদান করতে চাই। সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দেশের সেবা করতে চাই। দেশ ও সমাজে নিজের সাধ্য অনুযায়ী ভালোকিছু করতে চাই।