সোমবার, ২ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৭ আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক
দুই হাত মুষ্টিবদ্ধ করে শূন্যে ঘুষি! ব্যাটিং করার সময় উদ্যাপনটা বেশ কবারই করেছেন সাব্বির রহমান। অসহায় চোখে সেটি দেখেছেন মুশফিকুর রহিম। অবশ্য সেঞ্চুরির পর মুশফিকই সবার আগে এগিয়ে এসেছেন সাব্বিরকে অভিনন্দন জানাতে। মজাটা হলো একদম ম্যাচের শেষে। ৪ রানে হারিয়ে রাজশাহী কিংসের ড্রেসিংরুমের দিকে ঘুরে বরিশাল বুলস অধিনায়ক মুশফিক সেই উদ্যাপনটা করলেন-দুই হাত মুষ্টিবদ্ধ করে শূন্যে ঘুষি!
সাব্বির যতক্ষণ উইকেটে থেকেছেন বরিশালের দেয়া বিশাল লক্ষ্যটা মামুলিই মনে হয়েছে। ৬১ বলে ১২২ রানে তিনি আউট হওয়ার পর বাকি পথটা আর পাড়ি দিতে পারে নি রাজশাহী। সাব্বির ফেরার পর ২৪ বলে প্রয়োজনীয় ৩৪ রান তুলতে পারে নি, এমনকি মেলাতে পারে নি শেষ ওভারে ৯ রানের সমীকরণটাও।
রাজশাহীর শুরুটা অবশ্য সহজ ছিল না। ১৯৩ রান তাড়া করতে নেমেই ইনিংসের দ্বিতীয় বলে স্কোর ১-১ হয়ে যায় তাদের। বিশাল লক্ষ্য, তার ওপর আবার দ্রুতই উইকেট হারানো-সাব্বিরও শুরু করেন একটু ধীর-লয়ে। প্রথম ৬ বলে ১ রান।
ধীরে ধীরে খোলস থেকে বেরিয়ে এলেও নড়বড়ে দশাটা তখনো কাটে নি সাব্বিরের। মনির হাসানের বলে আল আমিনের শিশুতোষ ভুলের পরই আসলে জেগে ওঠেন ‘টি-টোয়েন্টি বিশেষজ্ঞ’। পয়েন্টে সাব্বিরের সহজ ক্যাচটা ছেড়ে কী ভুল করেছেন আল আমিন, সেটি পরে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন তিনি, টের পেয়েছে তাঁর দল।
১৪ রানে জীবন পাওয়া সাব্বির তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের প্রথম টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরি। এবার বিপিএলে যেটি প্রথম, বিপিএল ইতিহাসে নবম, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তৃতীয়। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে টি-টোয়েন্টিতে এটিই দ্বিতীয় দ্রুত সেঞ্চুরি। প্রথমটি তামিম ইকবালের। তবে সাব্বিরের কীর্তিটা অন্যখানে। বিপিএলে দেশি-বিদেশি সব ব্যাটসম্যান মিলিয়ে সাব্বিরই খেললেন সর্বোচ্চ ইনিংসটি। এর আগে বিপিএলে সর্বোচ্চ ছিল ২০১২ সালে ক্রিস গেইলের করা ১১৬।
৫৩ বলে সেঞ্চুরির পর সাব্বির হয়ে ওঠেন আরো দুর্বিনীত। তাঁকে রুখে দেওয়ার যেন কেউ নেই! উড়িয়ে মারতে কতটা পারঙ্গম, তাঁর ৯ চারের বিপরীতে ৯ ছক্কা সেটি বলে দিচ্ছে। স্ট্রাইকরেট ২০০! শুধু বল আছড়ে ফেলেন নি, কখনো প্রথাগত কখনো বা উদ্ভাবনী শটে মুগ্ধ করেছেন সাব্বির। ৫২ বলে সেঞ্চুরি আছে তামিম ইকবালের। সেটি প্রতিযোগিতামূলক টি-টোয়েন্টি হলেও ছিল বিজয় দিবসের ম্যাচ। সাব্বিরের গতকাল সেঞ্চুরি করতে এক বল বেশি লাগল। ওই ম্যাচে ৫২ বলে সেঞ্চুরি করা তামিম শেষ পর্যন্ত করেছিলেন ১৩০। এই রেকর্ডটিরও কাছাকাছি গিয়ে থামতে হলো সাব্বিরকে।
ম্যাচ শেষে সাব্বিরের মুখটাও আঁধারে ডুবে গেছে। চোখধাঁধানো সেঞ্চুরিটাও যে বৃথাই গেছে। তবে সবচেয়ে খুশি বোধ হয় দর্শকেরা। অবশেষে বিপিএলে দেখা গেছে আদর্শ এক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। চার-ছক্কার ফুলঝুরি আর রোমাঞ্চকর সমাপ্তি-এমন ম্যাচই তো চায়!-প্রথম আলো অনলাইন