শনিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৭ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক:
সাভারের আশুলিয়ায় আজ বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিভিন্ন দাবিতে পোশাক শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করছেন। শ্রমিক বিক্ষোভের পর অন্তত ৭০টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। বুধবার সকাল ৮টার দিকে যথাসময়ে আশুলিয়ার বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কের বাইপাইল থেকে জিরাবো এলাকার বিভিন্ন শ্রমিকরা কারখানায় কাজে যোগ দেয় বলে জানিয়েছে শিল্প পুলিশ ও স্থানীয়রা।
তবে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আশপাশের বন্ধ করে দেওয়া কারখানার শ্রমিকরা সচল থাকা কারখানার সামনে এসে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তারা কারখানা লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে যুক্ত হন চাকরি প্রত্যাশীরাও। এর জেরে কর্তৃপক্ষ কারখানাগুলো ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সড়কের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। সেনাবাহিনী, শিল্প পুলিশের সদস্যরা তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেন।শ্রমিকরা সড়কে অবস্থান করায় সড়কটিতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
নরসিংহপুর এলাকায় হা-মীম গ্রুপের কারখানার পাশে এক চা দোকানদার বলেন, কারখানায় সকাল থেকে কাজ চলছিল। এরপর লোকজন চাকরির জন্য কারখানার সামনে এসে বিক্ষোভ করলে কারখানা ছুটি দিয়ে দেয়।
এদিকে, সকাল ১০টার দিকে আশুলিয়ার পলাশবাড়ী এলাকায় পার্ল গার্মেন্টস কোম্পানি লিমিটেডের কারখানার সামনে টিফিন ভাতা, হাজিরা বোনাস বৃদ্ধি, বাৎসরিক বেতন বৃদ্ধি, মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। একপর্যায়ে তারা নবীনগর থেকে চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করলে মহাসড়কের উভয় পাশে যানজটের সৃষ্টি হয়। দুপুর ২টার দিকে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর সদস্য ও ঢাকা জেলা পুলিশ উপস্থিত হয়ে শ্রমিকদের সড়ক ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানান। তবে শ্রমিকরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সড়ক না ছাড়ার ঘোষণা দেন।
অন্যদিকে, পলাশবাড়ী এলাকার গিল্ডান বাংলাদেশ নামের পোশাক কারখানায় হামলা ঠেকাতে কারখানার সামনে অবস্থান নেন শ্রমিকরা। ওই কারখানার একজন শ্রমিক বলেন, ‘আমরা কাজ করতে চাই। কারখানা আমাদের সম্পদ তাই এটা রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। কারখানা বন্ধ হলে খাবো কী।’
বহিরাগতদের আক্রমণে কাজ শুরুর আধা ঘণ্টার পর কারখানা ছুটি দিতে বাধ্য হয় আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকার শারমিন গ্রুপ। এ সময় কারখানার সামনে থাকা দুটি মিনিবাস ভাঙচুর করা হয় বলে জানায় কারখানা কর্তৃপক্ষ।
শারমিন গ্রুপের এমডি ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘নাসা গ্রুপ, আল মুসলিম ও নিউএইজ গার্মেন্টস বন্ধ ছিল। ওরা আজকে খুলে দেয়। বাইরের কিছু লোকজন এসে কারখানা ভাঙচুর করলে কারখানাগুলো ছুটি দিয়ে দেয়, আমরাও ছুটি ঘোষণা করি। আমাদের শ্রমিকরা তো কাজ করছিল। বাইরে থেকে এসে যদি আক্রমণ করে তাহলে শ্রমিকদের সেফটির জন্য আমরা ছুটি ঘোষণা করি।’
জামগড়া এলাকার দ্য রোজ ড্রেসেস লিমিটেড কারখানার জেনারেল ম্যানেজার সাধন বাবু বলেন, ‘আমাদের শ্রমিকরা কাজ শুরু করেছিল সকালে। এরপর আশেপাশের আইডিএস, এফএনএফ কারখানার শ্রমিকরা নেমে আসে, কেন নেমে আসে জানি না। আমরা শুনেছি তাদের আশেপাশের কারখানাগুলো থেকেও শ্রমিকদের নামিয়ে নেওয়া হয়েছে। কারখানা বন্ধ করা হয়েছে। ছুটি দেওয়া কারখানাগুলোর শ্রমিকরা আমাদের এইদিকেও আসছিল, পরে আমরা ভয়ে শ্রমিকদের ছুটি দিয়ে দিয়েছি। গত দুদিনে দেখেছি কোনো কারখানার শ্রমিকরা নেমে আসলে ওরা অন্য কারখানার শ্রমিকদের নামিয়ে নিয়ে যায়।’
সাধন বাবু বলেন, ‘আমাদের কারখানা মেইন রোড থেকে একটু ভেতরে। আমাদের এইদিকে পুলিশ বা সেনাবাহিনীর গাড়ি আমরা দেখিনি। এমন পরিস্থিতিতে কারখানা চালু রাখা অনিরাপদ।
এদিকে, সকাল ৯টার দিকে আশুলিয়ার কাজী ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের দেয়াল টপকে কয়েকজন লোক কারখানা চত্বরে প্রবেশ করে। তারা কারখানার মূল ফটক খুলে দিলে ১৫-২০ জন রড ও লাঠি নিয়ে কারখানা চত্বরে ঢুকে পড়ে। তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে কারখানা জানলার কাঁচ ভাঙচুর করে। এছাড়া মূল ফটকের সিসি ক্যামেরা ও একটি মালামাল পরিবহনের ট্রাকের সামনের কাঁচ ভেঙে দেয়।
কাজী ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (কারখানা প্রধান) নিরেন্দু চক্রবর্তী বলেন, ‘সকাল ৬টা থেকে কারখানার কার্যক্রম শুরু হয়। ৯টার দিকে ৪-৫ জনের একটি দল দেয়াল টপকে ভেতরে ঢুকে মূল গেট খুলে দেয়। এরপর ১৫-২০ জন লোক লাঠি ও রড নিয়ে কারখানা চত্বরে ঢুকে পড়ে। তারা ঢিল ছুড়ে জানলার কাঁচ, একটি ট্রাকের সামনের গ্লাস, সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করে। তারা চলে গেলে কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়।’
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, ‘শ্রমিকদের দাবি, পুরুষ শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে নারী-পুরুষের সমতা আনতে হবে। কথায় কথায় শ্রমিক ছাঁটাই করা যাবে না, তাদের চাকরির নিশ্চয়তা দিতে হবে। প্রোডাকশনের চাপ কমাতে হবে এগুলোই মূল দাবি। এছাড়া ছুটি ঠিকমতাে দিতে হবে, শ্রমিকদের নির্যাতন করা যাবে না। হাজিরা বোনাস বাড়াতে হবে এমন অসংখ্য দাবি করছেন। কোনো কারখানায় ৭ দফা, কোনো জায়গায় ১১ দফা, কোনো জায়গায় ১৫ দফা।’
কেন এই অস্থিরতা, কেন শিল্পাঞ্চল উত্তপ্ত তার পেছনে কারণ জানতে চাইলে এই শ্রমিক নেতা জানান, ‘কারখানার মালিকানা বা বিজিএমইএর নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব এখানে ভূমিকা রাখছে। আওয়ামী লীগের আমলে ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ যাদের কাছে ছিল এখন সেখান থেকে হাতবদল হওয়ার ব্যাপারটাও একটা ভূমিকা রাখছে। একটা শ্রেণি আছে যখন এমন কোনো বিক্ষোভ হয় তখন তারা কারখানার ভেতরে ঢুকে লুটপাট করে তারাও আছে। এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে পুলিশ কিংবা শিল্প পুলিশ যে মীমাংসা বা নেগোসিয়েশন করে এবার সে ব্যাপারটাও তেমন চোখে পড়েনি। শিল্পাঞ্চলের নিরাপত্তার ব্যাপারটাও তেমন চোখে পড়েনি। আমার মনে হয় শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিয়ে ব্যাপারগুলো দ্রুত সমাধান করা উচিত।’
আশুলিয়ায় শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, ‘শ্রমিকরা নির্ধারিত সময়ে কারখানায় এসেছিলেন। এর মধ্যে বিক্ষোভকারী শ্রমিকরা হা-মীম গ্রুপের কারখানার শ্রমিকদের তারা কেন কাজ করছে এমন কথা বললে হা-মীম গ্রুপের কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়। এরপর অনেকগুলো কারখানা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ছুটি ঘোষণা করে। বর্তমানে ওই এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।’
তথ্যসূত্র: রাইজিংবিডি