সালিশে মা-মেয়েকে নির্যাতন করে গাছে বেঁধে রাখে মেম্বার-চেয়ারম্যান

আপডেট: অক্টোবর ৩০, ২০১৬, ১১:৪৬ অপরাহ্ণ

ইউপি মেম্বার ও চেয়ারম্যানের নির্যাতনের শিকার এক নারী
বদলগাছী প্রতিনিধি
নওগাঁর বদলগাছীতে শালিসে বেশি কথা বলায় মা-মেয়েকে শারীরিক নির্যাতন করে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বার। গত শনিবার সকালে উপজেলার মথুরাপুর ইউপির মাহমুদপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
গ্রামবাসীর সূত্রে জানা যায়, মাহমুদপুর গ্রামের মৃত রেজাউল করিমের ছেলে রুবেলের সঙ্গে প্রতিবেশী বাবুর মেয়ে চাম্পা পারভীন (২৮) এর বিয়ে হয় প্রায় ১০ বছর পূর্বে। রেজাউল বেঁচে থাকাকালীন তার বিবাহিত কন্যা রুমা পারভীনকে সাড়ে ৩ শতক জমি বসত বাড়িতে লিখে দেয়। তার মোট জমি ১১ শতক। মেয়ে জামাই রেজাউলের বাড়িতেই থাকে। একই বাড়িতে বসবাসকালে রেজাউলের মেয়ে-জামাইয়ের সঙ্গে রুবেল ও তার স্ত্রী চাম্পা পারভীনের ভালো বনিবোনা হয় না। মাঝে মধ্যেই ঝগড়াঝাটি হয়। এ নিয়ে ভাই বোন অংশ মোতাবেক জমি ভাগাভাগির উদ্দেশ্যে গত শনিবার সকাল ১০টায় প্রতিবেশী সুলতানের বাড়ির প্রাঙ্গনে চেয়ারম্যান মেম্বারসহ শালিস বসে। শালিসে মথুরাপুর ইউপির চেয়ারম্যান আবদুর রহমান রুবেলের স্ত্রী চাম্পা পারভীনের কাছে তাদের পারিবারিক বিরোধের ঘটনা জানতে চায়। চাম্পা পারভীন তাদের সমস্যাগুলোর কথা বলতে শুরু করে। কিছু কথা শোনার পর চেয়ারম্যান তাকে ৩ বার থামতে বলেন। তখনও চাম্পা পারভীন কথা বলছিলেন। এসময় চেয়ারম্যান উত্তেজিত হয়ে চাম্পা পারভীনকে লাঠি দিয়ে মারপিট শুরু করেন। একটি লাঠি ভেঙে ফেলার পর আরেকটি লাঠি নিয়ে মার শুরু করলে চাম্পার মা সোনাভান চেয়ারম্যানকে বাধা প্রদান করে। এসময় চেয়ারম্যান তাকেও মারার জন্য লাঠি তুললে সোনাভান চেয়ারম্যানকে চড় তোলে। এ অবস্থায় চেয়ারম্যান আবদুর রহমান, মেম্বার শহিদুল, প্রতিবেশী মিঠুসহ কয়েকজন চুলের মুঠি ধরে ইচ্ছামতো মারপিট করে মা-মেয়ের শরীরে ৩-৪ টি লাঠি ভেঙে ফেলে। একপর্যায় তাদেরকে পুলিশে দেওয়ার ভয়ভিতি দেখিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে। পরে কালাম মেম্বারের অনুরোধে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়। মার দেখতে না পেরে প্রতিবেশী এক গৃহবধূ চেয়ারম্যানের হাতের একটি লাঠি কেড়ে নেয়।
গতকাল রোববার বেলা ৩টার দিকে সরজমিনে তথ্য সংগ্রহকালে চেয়ারম্যানের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চায় না। ওই গ্রামের খলিলসহ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্ধশতাধিক পুরুষ ও নারী জানায়, শালিসে চেয়ারম্যান চাম্পা পারভীনকে ৩ বার কথা থামতে বলার পর না থামলে চাম্পা পারভীনকে মারপিট করে। চাম্পা পারভীনের মার খাওয়া দেখে তার মা এগিয়ে গেলে তাকেও মারার উপক্রম হয়ে পড়ে চেয়ারম্যান। এসময়  চাম্পার মা চেয়ারম্যানকে চড় তোলে। তখন মা-মেয়েকে গণহারে মারপিট শুরু করা হয়। গরীব হওয়ায় চিকিৎসার অভাবে মারপিটে শরীরের অসহনীয় বেদনা নিয়ে মা-মেয়ে বাড়িতে শুয়ে আছেন। চাম্পার মা অভিযোগ করে বলেন, চাম্পা পারভীনের শাশুড়ী হেনা বেগম চেয়ারম্যানের ভাগ্নি হওয়ায় তাদের প্রতি এই অন্যায় অবিচার করেছে।
এ বিষয়ে চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বলেন, ‘কি সাংহাতিক মেয়ে আমাকে মারতে উঠে। ইউনিয়নবাসীর কাছে আমাকে ছোট করে ফেলেছে। মারপিটে ৩-৪টি লাঠি ভেঙে ফেলা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাকে মারতে উঠার পরে ওদেরকে মারধর করা হয়েছে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ