মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৫ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক:হঠাৎ এক বিকেলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে অজ্ঞাত এক বৃদ্ধা নারীকে হাসপাতালে রেখে চলে যান অজ্ঞাত ব্যক্তিরা। বরাবরের মতোই এবারও অজ্ঞাত রোগী হিসেবে সেবার ডাক পড়ে পরিচ্ছন্নতা কর্মী আলেয়া। পদে পরিচ্ছন্নতা কর্মী হলেও অজ্ঞাত মানসিক ভারসাম্যহীন রোগী সামলানোর দায়িত্ব পরে তার কাঁধেই। গত ১৭ মার্চ অজ্ঞাত সেই বৃদ্ধার দেখভালের দায়িত্বও পড়েছিলো তার কাঁধে। এক সপ্তাহের সেবা ও রাজশাহী সিআইডির ফিঙ্গার প্রিন্টে পরিবারের সন্ধান পাওয়ার পর আজ বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) ছবিরন নেছা (৫৫) নামক ওই বৃদ্ধা মহিলাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
গত বুধবার (২৭ মার্চ) হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ক্যাথ ল্যাবের পাশে ওই নারীকে এক কোনে শুয়ে থাকতে দেখা যায়। পাশেই ছিলো চমচকে বেড। আশেপাশে কেউ গেলেই শব্দ করে ঝাড়ি দিচ্ছিলেন। সবাই পাগল ভেবে ওই নারীকে এড়িয়েও যাচ্ছিলো।
সেদিন ওই ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স মুক্তি রাণীর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, ওই রোগী ৮ নম্বর ওয়ার্ডেরই। তবে অজ্ঞাত। একারণেই আশেপাশে আত্মীয়-স্বজন নেই। তবে আলেয়া এসব রোগীর দেখভাল করে। ডাক্তার নার্সরা ওষুধ দিলেও পরিবারের মতো দেখভাল আলেয়ায় করে থাকে।
ওইদিনই কথা হয় পরিচ্ছন্নতা কর্মী আলেয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, ওই মহিলা আমার মায়ের মতোই। একটু রেখে ওয়ার্ডের ভেতরে যেতেই বেড থেকে নেমে গেছে। আসলে বয়সজনিত শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন তিনি। মানসিক স্বাস্থ্যও তেমন একটা ভালো না। কথাও বলতে পারেন না। গত ১৭ মার্চ কিছু ব্যক্তি উদ্ধার করে এখানে রেখে গিয়েছিলো।
তখণও ওই নারীর পরিচয় জানা ছিলো না আলেয়ার। বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) সকালে পরিবারের কাছে ওই নারীকে হস্তান্তর করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতাল সমাজসেবার মাধ্যমে সিআইডির সহযোগিতা নিয়ে ফিঙ্গ্যার প্রিন্টের মাধ্যমে ওই নারীর পরিচয় শণাক্ত করা হয়।
আলেয়া জানান, এক সপ্তাহ সেবাযত্ন করেছি। এখন চলে যাওয়ার বেলায় কিছুটা খারাপ লাগছে। তবে এখানে তো আর রাখার কোন সুযোগ নেই। তার তো সৌভাগ্য পরিবারের কাছে গেলো। কিন্তু অনেক রোগী দেখেছি, যারা পরিবারের কাছে যাওয়ার সৌভাগ্য পায় না।
ছবিরন নেছার বাড়ি মুন্সীগঞ্জের বিক্রমপুরে। বৃহস্পতিবার দুপুর ৩ টার দিকে মাকে নিতে এসেছিলেন ছেলে মোহাম্মদ আলী।
মায়ের খোঁজ পেয়ে তিনি বলেন, তার মা বয়স্ক। স্বাভাবিকভাবেই চলাচল করতো। কথাও বলতো। কিন্তু হঠাৎই বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসে নি। সকল আত্মীয় স্বজনের কাছে খোঁজ নিয়েছি। কোথাও খুঁজে পায় নি। পুলিশকেও জানিয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত মাকে কাছে পেয়ে ভালো লাগছে।
রামেক হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যালয়ের সামাজসেবা অফিসার ড. মো. হামিদুল ইসলাম বলেন, তারা বেশকিছু দিন থেকে ওই নারীর পরিচয় জানার চেষ্টা করছিলেন। শেষে ডিবি পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে পরিচয় পাওয়া যায়। ওই বৃদ্ধাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তরের সময় ওষুধ, কাপড়সহ প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্রও কিনে দেয়া হয়েছে।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএফএম শামীম আহাম্মদ বলেন, ওই রোগীকে পরিবারে কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আগে এসব রোগীদের ব্যবস্থাপনার তেমন কোন ভালো সুযোগ ছিলো না। শ্রীঘ্রই একটা সুখবর দিবো। অজ্ঞাত রোগীদের জন্য একটা নীতিমালাও তৈরি হচ্ছে।