শনিবার, ১ এপ্রিল, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক ও গোদাগাড়ী প্রতিনিধি
মূর্তি উদ্ধারের কথিত ‘অভিযান’ পরিচালনা করতে গিয়ে আদিবাসীদের হাতে গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) উপপরিদর্শক। এসময় তার সঙ্গে থাকা তিনজন সোর্সও গণধোলাইয়ের শিকার হন। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মা-ইল গ্রামের আদিবাসী পল্লীতে গত শুক্রবার দিবাগত রাতে অভিযান পরিচালনা করা হলে ওই গ্রামের আদিবাসী নারী-পুরুষ তাদের গণ ধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে।
আটক চারজন হলেন, সিআইডির টিএইচবি শাখার রাজশাহী জোনের এসআই এমএস মাহবুব আলী (৩২), নগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকার মৃত সিরাজ উদ্দীনের ছেলে শহিদুল ইসলাম (৪৮), বালিয়াপুকুর এলাকার মৃত আইয়ুব আলীর ছেলে আমিরুল ইসলাম (৫৫) এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ শিবগঞ্জ উপজেলার বিশ্বনাথপুর গ্রামের মৃত মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে আতিকুর রহমান (২৮)।
ঘটনাস্থল গোদাগাড়ী থানার ভেতরে হলেও খবর পেয়ে সেখানে গিয়েছিলেন পবা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) পরিমল কুমার চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ক্ষিপ্ত আদিবাসীরা আটক ব্যক্তিদের নিয়ে যাওয়া একটি ধূসর রঙের মাইক্রোবাস ও একটি সাদা রঙের অ্যাপাচি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেছেন। মাইক্রোবাসের জানালায় একটি কাঁচও ছিল না। আর মোটরসাইকেলের হেডলাইটসহ বিভিন্ন অংশে ভাঙচুর করা হয়েছে। সেগুলোর জব্দ তালিকা করে গোদাগাড়ী থানা পুলিশ নিয়ে গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মা-ইল গ্রামের জয়েন হাসদা (৫০) নামে এক ব্যক্তি মনসা পূজা করেন। তার বাড়িতেই পূজার ম-প আছে। শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে সিআইডির ওই এসআইসহ আটক চারজন নিজেদের পুলিশ পরিচয় দিয়ে জয়েন হাসদার বাড়িতে ঢোকেন। ওই সময় জয়েন হাসদা বাড়িতে ছিলেন না। বাড়িতে প্রবেশকারী চার ব্যক্তি বলেন, এই বাড়িতে একটি মরদেহ পুঁতে রাখা হয়েছে। তারা সেটি উদ্ধার করতে এসেছেন।
এ সময় এসআই মাহবুবের নির্দেশে জয়েন হাসদার মামা শ্বশুর সরকার কিস্কু ও তার ছেলে রুবেল হাসদাকে রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। এরপর বাড়ির তিন জায়গা কোঁদাল দিয়ে খোড়া হয়। এ সময় হৈ চৈ শুনে স্থানীয়রা ওই বাড়িতে গেলে এসআই মাহবুব তাদের বলেন, এই বাড়িতে একটি কষ্টি পাথরের মূর্তি আছে। তারা সেটি উদ্ধার করতে এসেছেন।
এসআই মাহবুবের অসংলগ্ন কথা শুনে পরিবারের সদস্যরা ডাকাত বলে চিৎকার দেন। এ সময় ওই আদিবাসী পল্লীর প্রায় দেড় হাজার মানুষ জড়ো হয়ে তাদের ঘিরে ফেলেন। এরপর তাদেরকে বেঁধে রাখা হয়। এ সময় স্থানীয়রা তাদের মারধরও করেন। পরে খবর পেয়ে গোদাগাড়ীর কাঁকনহাট তদন্ত কেন্দ্র ও পবা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এরপর সকাল ১০টার দিকে পুলিশ তাদের গোদাগাড়ী থানায় নিয়ে যায়।
জাতীয় আদিবাসী পরিষদের রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি বিমল চন্দ্র রাজোয়াড় বলেন, জয়েন হাসদা আদিবাসী হলেও তিনি হিন্দু ধর্মের অনুসারি। এ জন্য তার বাড়িতে পূজাম-প আছে। ওই বাড়িতে কষ্টি পাথরের মূর্তি আছে- এমন সন্দেহে সিআইডির এসআই মাহবুব তিনজন সোর্সকে নিয়ে বাড়িতে অভিযান চালায়। কিন্তু ওই তিন সোর্সও নিজেদের সিআইডির সদস্য পরিচয় দেন। তবে তাদের অসংলগ্ন কথাবার্তায় স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। এ সময় ডাকাত ভেবে স্থানীয়রা তাদের বেঁধে রাখেন। কেউ কেউ মারধরও করেন।
এ ব্যাপারে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় গোদাগাড়ী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিপজুর আলম মুন্সি বলেন, সকাল ১০টার দিকে সিআইডির এসআইসহ চারজনকেই আটক করে থানায় আনা হয়। এরপর বিকেলে তাদের বিরুদ্ধে বাড়ির মালিক জয়েন হাসদা মামলা দায়ের করেন। তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
জানতে চাইলে সিআইডির রাজশাহী বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার ড. নাজমুল করিম বলেন, ‘এসআই মাহবুব ডিপার্টমেন্টের কাউকে না জানিয়েই অভিযানে যান। স্থানীয় থানা পুলিশকেও তিনি বিষয়টি অবহিত করেন নি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগটি গুরুতর। তার অপকর্মের দায় পুরো ডিপার্টমেন্ট নেবে না। একারণে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থার পাশাপাশি বিভাগীয় শাস্তিমূলক পদক্ষেপও গ্রহণ করা হবে।’