প্রসঙ্গত, সিআরপি নগরীর উপকণ্ঠে কাটাখালি পৌরসভার কাপাসিয়ায় মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের পরিবারের পক্ষ থেকে দান করা ১৫ বিঘা জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে ‘সিআরপি-রাজশাহী শহিদ এএইচএম কামারুজ্জামান ও জাহানারা জামান সেন্টার’। এখান থেকে প্রতি বছর এ অঞ্চলের ১২ হাজার রোগী প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও পুনর্বাসন সেবা নিতে পারবে। পাশাপাশি ৪ বছর মেয়াদি বিএসসি ইন ফিজিওথেরাপি, বিএসসি ইন অকুপেশনাল থেরাপি, বিএসসি ইন স্পীচ এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি কোর্স করতে পারবেন শিক্ষার্থীরা।
সভায় মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, আর্তমানবতার সেবায় আমার পিতা ও মাতার নামে একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ার ইচ্ছে ছিল। সে লক্ষ্যে রাজশাহীতে সিআরপি‘র আঞ্চলিক পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। এখন থেকে রাজশাহী অঞ্চলের হাজার হাজার অসহায় মানুষ সেবা নিতে পারবেন। এই পুনর্বাসন কেন্দ্র শুধু চিকিৎসা নয়, শিক্ষাক্ষেত্রেও গুরত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে। সেবামূলক প্রতিষ্ঠানটি গড়তে আমার সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
সিআরপি’র প্রতিষ্ঠাতা ড. ভেলরী এন টেইলর বলেন, মাননীয় মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন সিআরপিকে মূল্যবান ৫ একর জমি দান করেন। সেখানে ‘সিআরপি-রাজশাহী শহিদ এএইচএম কামারুজ্জামান ও জাহানারা জামান সেন্টার’ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছেন তিনি। আর্তমানবতার সেবায় তাঁর এই মহতি উদ্যোগটি সকলের নিকট উদাহরণ হয়ে থাকবে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন টিআরপি’র চেয়ারম্যান মুহাম্মদ সাইদুর রহমান, সদস্য মুশতাক আহমেদ, স্ট্যানফোর্ড স্কুল অফ মেডিসিন এর প্রফেসর রান্ডাল স্টাফর্ড, গ্লোবাল এইচআর লিডার লরা ফেরাকেন, আর্কিটেক্ট শায়লা জোয়ার্দার, সিআরপি’র রাজশাহী’র ব্যবস্থাপক সোমা বেগম।
সভায় রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এ.বি.এম. শরীফ উদ্দিন, ২৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহের হোসেন সুজা, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর সুলতানা আহমেদ সাগরিকা ও কাউন্সিলর মোসা. ফেরদৌসি, সচিব মোবারক হোসেন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাদিয়া আফরিন, বাজেট কাম হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম খান, প্রধান প্রকৌশলী নূর ইসলাম তুষার, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ মো. মামুন, প্রজেক্ট স্পেশালিস্ট গোলাম মুর্শেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, সিআরপি একটি অলাভজনক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। যা ট্রাষ্ট ফর দি রিহ্যাবিলিটেশন অফ দি প্যারালাইজড (টিআরপি) এর একটি বিশেষ প্রকল্প। ‘সৃষ্টির সেবাই স্রষ্টার সেবা’ এই স্লোগান নিয়ে ১৯৭৯ সালে একজন ব্রিটিশ ফিজিওথেরাপিস্ট ড. ভ্যালেরি এ টেইলর মাত্র ৪ জন রোগী নিয়ে ঢাকায় পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র (সিআরপি) প্রতিষ্ঠা করেন। এরই ধারবাহিকতায় সারাদেশে সিআরপির মোট ১১টি উপকেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
আর্তমানবতার সেবায় রাজশাহীতে পুনর্বাসন কেন্দ্র গড়ে তুলতে কাপাসিয়ায় মূল সড়ক সংলগ্ন ১৫ বিঘা জমি সিআরপি’কে দান করেন মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও তাঁর পরিবার। ২০২২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি সিআরপি প্রতিষ্ঠাতা ভ্যালেরি অ্যান টেইলর এর সঙ্গে চুক্তি ও জমিদান কার্যক্রম সম্পন্ন করেন রাসিক মেয়র। উক্ত জমিতে সিআরপি রাজশাহী-শহীদ এ.এইচ. এম কামারুজ্জামান ও জাহানারা জামান সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই সেন্টারে যেসব চিকিৎসা সেবাসমূহ পাওয়া যাবে, সেগুলো হচ্ছে, অপারেশন সেবা। প্যাথলজি ও রেডিওলজি সেবা।
অভ্যন্তরীণ সেবার মধ্যে থাকবে মেরুরজ্জুতে আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জন্য ১টি পুনবার্সন কেন্দ্র, অটিজম ও সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত শিশুদের জন্য বিশেষায়িত শিশুবিভাগ, স্ট্রোক রোগীদের জন্য পুনর্বাসন ওয়ার্ড, অকুপেশনাল থেরাপি, মেডিকেল কনসালটেন্সি, স্পীচ এন্ড ল্যাঙ্গুরেজ থেরাপি, শিশু বিভাগ, ক্লাব ফুট বা মুগুর পা চিকিৎসা, মানসিক স্বাস্থ্য সেবায় ডে কেয়ার সেন্টার। পুনর্বাসন সেবাসমূহের মধ্যে থাকবে আর্থ-সামাজিক সহায়তা, সমাজভিত্তিক পুনর্বাসন, মনো-সামাজিক কাউন্সিলিং, ক্রীড়া ও বিনোদন। আর সহায়ক ও পুনর্বাসন সামগ্রীর মধ্যে থাকবে প্রস্থেটিক্স ও অর্র্থোটিক্স (কৃত্রিম অঙ্গ সংযোজন), অর্থোপেডিক সু টেকনোলজি এবং সাপোর্টিভ সিটিং বিভাগ, হুইলচেয়ার ও অন্যান্য সহায়ক সামগ্রী।
এছাড়াও এখানে গড়ে তোলা হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখানে রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১ বছরের ইন্টার্নশিপ সহ ৪ বছর মেয়াদি বিএসসি ইন ফিজিওথেরাপি, বিএসসি ইন অকুপেশনাল থেরাপি, বিএসসি ইন স্পীচ এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি কোর্স করতে পারবেন শিক্ষার্থীরা।
অবকাঠামো সুবিধার মাঝে থাকবে মেরুরজ্জুতে আঘাতপ্রাপ্ত, অটিজম, সেরিব্রাল পালসি ও স্ট্রোক রোগীদের জন্য পুনবার্সন সেবাদান কেন্দ্র এবং ভর্তিকৃত রোগীদের আবাসন সুবিধা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, চিকিৎসকদের জন্য আবাসন সুবিধা ও শিক্ষার্থীদের জন্য হোস্টেল সুবিধা।