শনিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪ কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
বুধবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে দিনাজপুর প্রেসক্লাবের সামনে এক প্রতিবাদ সমাবেশে আদিবাসীরা আগামী পনের দিনের মধ্যে সিধু-কানু’র ভাস্কর্য পুনঃনির্মাণ কার্যক্রম শুরুর আল্টিমেটাম দিয়েছেন। সমতলের সর্বস্তরের আদিবাসী ছাত্র-জনতার উদ্যোগে আয়োজিত এই প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে নয় দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি প্রদান করেছে আদিবাসীরা। সমাবেশ শুরুর আগে হাজার হাজার আদিবাসীরা চেহেলগাজী ইদগাহ মাঠে জমায়েত হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
সমাবেশ থেকে আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি, সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় ও ভূমি কমিশন গঠন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে সমতলের আদিবাসী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতকরণ ও ভাস্কর্য ভাঙচুরসহ সারাদেশে আদিবাসীদের ঘরবাড়িতে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, জমি দখল এর ঘটনায় দোষীদের বিচারের দাবি জানানো হয়।
সমাবেশে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষার্থী ঈশ^র টুডু এর সভাপতিত্বে সমাবেশ থেকে আল্টিমেটাম জানিয়ে বক্তব্য রাখেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ। দিনাজপুরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন রবি হেমব্রম, প্রদীপ খালকো, বেগম রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয় থেকে মিখায়েল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয় থেকে লাপল কড়া, ইসলামী বিশ^বিদ্যালয় থেকে কুপুরাম হেমব্রম প্রমুখ। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষার্থী রিপন হেম্রবম ।
আদিবাসীদের বিভিন্ন গণসংগঠনের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন বিচিত্রা তির্কি, সভাপতি, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ; নারায়ণ মার্ডী, আহ্বায়ক, সাঁওতাল বিদ্রোহ ও তেভাগা আন্দোলন গবেষণা কেন্দ্র; আদিবাসী নারী নেত্রী বাসন্তী মুর্মু, মানিক সরকার মুর্মু, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আদিবাসী মুক্তি মোর্চা; জন হেমব্রম, আদিবাসী সংস্কৃতি কর্মী; রিনা মুর্মু, সমন্বয়ক, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন, রংপুর; রবিন মার্ডী প্রমুখ।
সমাবেশের সভাপতি ঈশ^র টুডু বলেন, আমরা আদিবাসী ছাত্র-জনতার ব্যানারে আমরা সর্বস্তরের আদিবাসীরা আজ একত্রিত হয়ে আমাদের উপর ঘটে যাওয়া সকল ধরনের বঞ্চনা ও বৈষম্যের প্রতিকার দাবি করছি। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে সারাদেশের আদিবাসীদের ঘরবাড়িতে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, জমি দখল এর ঘটনায় দোষীদের বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
বিচিত্রা তির্কি বলেন, আমরা আদিবাসীরা দীর্ঘদিন থেকে সমতলের আদিবাসীদের ভূমি কমিশন গঠন, আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতির কথা বলে আসছি। কিন্তু কোন সরকারই এসব বিষয়ে কোন ব্যাবস্থা গ্রহণ করেনি। আমরা অনতিবিলম্বে এসব দাবি বাস্তবায়নের জন্য বর্তমান সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
মানিক সরকার মুর্মু বলেন, আদিবাসীরা শান্তিপ্রিয় মানুষ কিন্তু দেশের যেকোন ক্রান্তিকালে আদিবাসীদের প্রতি নানা ধরনের সহিংসতা, জমি দখল, নির্যাতন, লুটপাট করেছে এক শ্রেনীর দুষ্কৃতিকারীরা। আমরা এসব দুষ্কৃতিকারীদের চিহ্ণিত করে আইনের আওতায় এনে তাদের শাস্তির দাবি জানাই।
রিনা মুর্মু বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সকল ধরনের বৈষম্য নিরসনে কাজ করছে। আমরা বিশ^াস করি এই সরকার আদিবাসীদের প্রতি যেসব বৈষম্য জারি আছে সেগুলো নিরসনে কাজ করবে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের আদিবাসী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
মানিক সরেন আল্টিমেটাম জানিয়ে বলেন, সাঁওতাল বিদ্রোহের মহান নেতা সিধু-কানু সাঁওতালসহ সকল আদিবাসীদের কাছে প্রেরণা। তাই কাহারোলে অবস্থিত সিধু-কানু ভাস্কর্য ভাঙচুরকারীদের চিহ্ণিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে এবং আগামী পনের দিনের মধ্যে এটি পুনঃস্থাপনে কাজ শুরু করতে হবে। যদি কোন উদ্যোগ না নেওয়া হয় তাহলে আবারো আদিবাসী ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন করবে।
সমাবেশ থেকে আদিবাসীরা যে নয় দাবি উত্থাপন করে সেগুলো হলো: আদিবাসীদের ‘আদিবাসী’ হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে;
সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় ও ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে; অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে সমতল তথা উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রংপুর ও রাজশাহী বিভাগ থেকে আদিবাসী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে; দিনাজপুর জেলার কাহারোল উপজেলার কান্তনগর মোড়ে (তেভাগা চত্বর) সাঁওতাল বিদ্রোহের মহান নেতা সিধু-কানু’র স্মৃতি ভাস্কর্য ভাঙচুরকারীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে ও অনতিবিলম্বে ভাস্কর্য পূনঃনির্মাণ করতে হবে; দিনাজপুর ও নওগাঁয় প্রতিষ্ঠিত আদিবাসী সাংস্কৃতিক একাডেমীতে দ্রুত জনবল নিয়োগ করতে হবে এবং রাজশাহী বিভাগীয় আদিবাসী সাংস্কৃতিক একাডেমীর উপ-পরিচালক পদে আদিবাসীদের মধ্য থেকে নিয়োগ দিতে হবে; আদিবাসীদের উপর চলমান অত্যাচার, হুমকি, ঘরবাড়ি লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, হত্যা, ধর্ষণ, মিথ্যা মামলা, ভূমি দখল বন্ধ প্রয়োজনীয় আইনী পদক্ষেপ নিতে হবে ও আদিবাসী সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করতে হবে; আদিবাসী ছাত্র-যুবদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণসহ আদিবাসীদের জন্য উচ্চ শিক্ষা ও প্রথম-দ্বিতীয় শ্রেনীসহ সকল সরকারি চাকুরিতে ৫% কোটা সংরক্ষণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে; সকল আদিবাসীদের মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিতসহ আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে কমপক্ষে একজন করে আদিবাসী শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে; গাইবান্দা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্মের ১৮৪২.৩০ একর সম্পত্তি প্রকৃত জমি মালিকদের ফিরিয়ে দিতে হবে এবং তিন ফসলি জমিতে ইপিজেড (ঊচত) স্থাপনের পরিকল্পনা বন্ধ করতে হবে; এবং গত ৬ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে পুলিশের গুলিতে নিহত তিন সাঁওতাল হত্যার বিচার এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানসহ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, সেই সাথে আদিবাসীদের ওপর থেকে সকল প্রকার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।