সিভিতে তথ্য গোপন করেছিলেন রাবি ছাত্রলীগের সা. সম্পাদক গালিব

আপডেট: জুন ৭, ২০২৪, ৭:৫৩ অপরাহ্ণ

সিভিতে তথ্য গোপন করেছিলেন রাবি ছাত্রলীগের সা. সম্পাদক গালিব

রাবি প্রতিবেদক:


স্নাতকের তথ্য গোপন করে সাধারণ সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ বাগিয়ে নিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগ নেতা আসাদুল্লা-হিল-গালিব। পদ পাওয়ার পূর্বে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে জমা দেয়া তার ৪২ পৃষ্ঠার জীবনবৃত্তান্ত থেকে এই বিষয়টি উঠে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ বরাবর দেওয়া তার জীবনবৃত্তান্ত ঘেটে দেখা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রমাণ থাকলেও স্নাতকের র্প্ণূাঙ্গ তথ্য নেই সেখানে৷

জীবনবৃত্তান্ত অনুযায়ী, গালিব ২০১২ সালে রাজশাহীর শিরোইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ ৪.৯৪ পেয়ে মাধ্যমিকে এবং ২০১৪ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে ৪.৯০ পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হন৷ এ বিষয়টির প্রমাণ সাপেক্ষ জীবনবৃত্তান্তে তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের সনদপত্র এবং নম্বরপত্র সংযুক্ত করেছেন।

তবে স্নাতকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণ হয়েছেন কিনা এ বিষয়ে কোনোরূপ তথ্য না দিয়ে জীবনবৃত্তান্তে তিনি নিজেকে শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন৷ বিভাগটিতে ভর্তির প্রমাণপত্র হিসেবে জীবনবৃত্তান্তে ২০২২ সালের ১ নভেম্বরে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিগত সভাপতি ড. মুসতাক আহমেদ স্বাক্ষরিত সান্ধ্যকোর্সের শিক্ষার্থী হিসেবে প্রত্যয়ণপত্র সংযুক্ত করেছেন।

যদিও স্নাতকের সনদে অসঙ্গতির ফলে সেই ভর্তি বাতিল করা হয়েছে বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়ে দিয়েছেন বিভাগটির বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক ড. মোজাম্মেল হোসেন বকুল। গত ৪ জুন দেওয়া সেই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আসাদুল্লা-হিল-গালিব গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী নন। তিনি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সান্ধ্য মাস্টার্স প্রোগ্রামের জুলাই ২০২১ সেশনের ছাত্র (আইডি নং: ২৩১০০৪৬২১০) হিসেবে ভর্তির আবেদন করেছিলেন। তবে তার জমাকৃত অনার্সের সার্টিফিকেটে অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিষয়টি যাচাইপূর্বক ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে অনুষ্ঠিত বিভাগের সান্ধ্য মাস্টার্স প্রোগ্রামের জরুরি সভায় উক্ত শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিলের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তিনি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সান্ধ্যকোর্সে অতিশ দীপংকর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নামের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ভুয়া সনদ’ ব্যবহার করে ভর্তির চেষ্টা চালিয়েছিলেন। ওই সনদের তথ্য অনুযায়ী, তিনি প্রতিষ্ঠানটি থেকে বিবিএ’তে স্নাতক করেছেন এবং তার রেজিষ্ট্রেশন নম্বর ৭৭-০০১৩-১২৪।

তবে গণযোগাযোগ সাংবাদিকতা বিভাগ বরাবর গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর পাঠানো এক চিঠিতে গালিব সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নন বলে জানান অতিশ দীপংকর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. কামরান চৌধুরী। চিঠিটি এই প্রতিবেদকের সংগ্রহে রয়েছে। একাডেমিক সনদ যাচাই করে ওই চিঠিতে বলা হয়, মো. আসাদুল্লা-হিল-গালিব নামে ৭৭-০০১৩-১২৪ রেজিষ্ট্রেশন নম্বর অনুযায়ী বিবিএ থেকে কেউ স্নাতক সম্পন্ন করেননি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির বৈধ শিক্ষার্থী নন, বিষয়টি ভুয়া এবং অপ্রাসঙ্গিক।

এদিকে জীবনবৃত্তান্তে গালিব বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ১৫১০৮৫১১০৩ রোল সম্বলিত স্টুডেন্ট আইডি কার্ডের ফটোকপি সংযুক্ত করেছেন। তবে পরীক্ষার প্রবেশ পত্রের ফটোকপিটি সংযুক্ত করেছেন পরের অর্থাৎ ২০১৬ সালের ৫ নভেম্বরে অনুষ্ঠিত ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের সঙ্গে পার্ট-১ পরীক্ষার। সে অনুযায়ী তিনি তার শিক্ষাবর্ষে (২০১৪-১৫) প্রথম বর্ষ টপকাতে না পারায় আবার পরের শিক্ষাবর্ষে (২০১৫-১৬) প্রথম বর্ষের পরীক্ষায় অংশগ্রহনের জন্য ফরম ফিলাপ করেন।

বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করতে গেলে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সে পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয় ২০১৭ সালের ৮ মে। তবে প্রকাশিত ফলাফলে গালিবের নাম এবং রোল খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের দ্বিতীয় বর্ষ থেকে এবং ২০২৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ থেকে বাকি সকল বর্ষের ফলাফলে তার নাম এবং ১৫১০৮৫১১০৩ রোল নম্বরটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের ফলাফলের তালিকাটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে না থাকায় তা দেখা সম্ভব হয়নি।

এ প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার দুপুরে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সভাপতি ড. শরিফুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি ফলাফল নিয়ে একটা মিটিংয়ে আছেন বলে জানান এবং পরবর্তীতে যোগাযোগ করতে বলেন। তবে এদিন বিকেলে যোগাযোগের জন্য তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

তথ্য গোপন করে সাধারণ সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়ার বিষয়ে রাবি শাখা ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপ-শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক সাহিদুল ইসলাম শাকিল বলেন, আমি বিষয়টি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককে জানিয়েছি। তারা আমাকে বলেছে, খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে একটি তদন্ত টিম করবে৷ টিমটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে তদন্ত করবে। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তারা রিসিভ করেননি।
এর আগে, গত বছরের ২১ অক্টোবর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ৩৯ সদস্য বিশিষ্ট রাবি ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ কমিটিতে আসাদুল্লা-হিল-গালিবকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ