রবিবার, ২৬ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১২ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে গুলিতে আহত সাংবাদিকের মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে বগুড়া থেকে ঢাকায় নেয়ার পথে দৈনিক সমকালের শাহজাদপুর প্রতিনিধি আব্দুল হাকিম শিমুলের মৃত্যু হয় বলে জানান হাটিকুমড়ুল এলাকার সাখাওয়াত মেমোরিয়াল হাসপাতালের চিকিৎসক হাফিজ রহমান মিলন।
ওদিকে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের জেরে হতাহতের পর পৌর মেয়রের শটগান জব্দ করেছে পুলিশ; আটক করেছে তার ছোট ভাই হাসিবুল ইসলাম পিন্টু ও মিন্টুকে। একই দ্বন্দ্বের জেরে শনিবার উপজেলায় অর্ধদিবস হরতাল আহ্বান করেছে উপজেলা ছাত্রলীগ।
শাহজাদপুর থানার ওসি রেজাউল জানান, শাহজাদপুর সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি বিজয় মাহমুদকে মারধর করার অভিযোগে তার চাচা এরশাদ আলী বাদী হয়ে শুক্রবার সকালে থানায় মামলা করেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে শাহজাদপুর পৌর আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ভিপি রহিমের সমর্থকরা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পৌর মেয়র হালিমুল হক মিরুর বাড়ি ঘেরাও করলে সংঘর্ষের মধ্যে গুলিতে আহত হন শিমুল।
ভিপি রহিম বলেন, “মেয়র মিরুর ছোট ভাই পিন্টু আমার শ্যালক বিজয় মাহমুদের ওপর হামলা করে কালিবাড়ি এলাকায়। তারা তার হাত-পা ভেঙ্গে দেয়।”
বিজয় মাহমুদ শাহজাদপুর সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি। তাকে ঢাকা অর্থপেডিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানান ভিপি রহিম। এ বিষয়ে পৌর মেয়র হালিমুল হক মিরু বলেন, “পিন্টু ও বিজয়ের মধ্যে মারামারির কিছুক্ষণ পর ভিপি রহিমের লোকজন লাঠিসোটা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আমার বাড়িতে হামলা চালায়।
“তারা গুলিবর্ষণ শুরু করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমিও বাড়ির ভেতর থেকে এক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করি।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, ছাত্রলীগ নেতা বিজয়কে মারধরের খবর ছড়িয়ে পড়লে দলের কর্মী-সমর্থক ও তার মহল্লার বাসিন্দারা লাঠিসোটা নিয়ে মনিরামপুর এলাকায় মেয়র মিরুর বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় মেয়রের সমর্থকরাও তাদের ওপর হামলা চালায়।
একপর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হলে ঘটনাস্থলে শিমুলসহ উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হন বলে জানান তারা। শাহজাদপুর থানার ওসি রেজাউল বলেন, পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
আহত শিমুলকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। সেখানকার নিউরো সার্জন সুশান্ত কুমার বলেন, গুলিবিদ্ধ সাংবাদিকের মাথার ভেতরে রক্তক্ষরণ হয়ে ব্রেনে আঘাত লেগেছিল।
“অচেতন অবস্থায় আইসিইউতে রাখার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তাকে ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্স হাসপাতালের উদ্দেশে পাঠানো হয়।” পথে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে সাখাওয়াত মেমোরিয়ালে ভর্তি হয়। সাখাওয়াত মেমোরিয়ালের চিকিৎসক হাফিজ বলেন, হাসপাতালে আনা হলে তাকে মৃত পাওয়া যায়।
দুই ছেলেমেয়ের বাবা শিমুলের বাড়ি শাহজাদপুর পৌরশহরের মাতলা গ্রামে।
এদিকে ছাত্রলীগ নেতা বিজয় মাহমুদকে মারধরের ঘটনায় পৌর মেয়রকে প্রধান আসামি করে থানায় মামলা হয়েছে।
ওসি রেজাউল বলেন, শাহজাদপুর সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি বিজয় মাহমুদকে মারধরের ঘটনায় তার চাচা এরশাদ আলী বাদী হয়ে শুক্রবার সকালে থানায় মামলা করেছেন।
“মামলায় জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও শাহজাদপুর পৌরমেয়র হালিমুল হক মিরু, তার ছোট ভাই হাসিবুল ইসলাম পিন্টু ও মিন্টুসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করার পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা পাঁচ-সাতজনকে আসামি করা হয়েছে।”
ইতোমধ্যেই মেয়রের ছোট ভাই হাসিবুল ইসলাম পিন্টু ও মিন্টুকে গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি মেয়রের শটগান জব্দ করা হয়েছে বলে জানান ওসি।
ঘটনার জেরে শাহজাদপুর উপজেলায় শনিবার সকাল থেকে অর্ধবেলা হরতাল আহ্বান করেছে উপজেলা ছাত্রলীগ। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচি পালন করার পর ছাত্রলীগ এই হরতালের ঘোষণা দেয়।
উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ কাজল বলেন, বিজয়কে মারধর ও মেয়রের শর্টগানের গুলির প্রতিবাদে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে শনিবার উপজেলায় অর্ধদিবস হরতাল পালনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।- বিডিনিউজ