শনিবার, ২৫ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১১ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক
নগরীর সিরোইল সরকারি হাই স্কুলে সম্মুখভাগে শহিদ মিনার স্থাপন না করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির এক কোণে নির্মাণ করায় ক্ষোভ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। দৃশ্যমান স্থানে শহিদ মিনারটি নির্মিত না হওয়ায় রাজশাহীর রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গণে তোলপাড় চলছে। তবে শহিদ মিনার নির্মাণের স্থানের বিষয়ে বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান একে অপরকে দোষারোপ করছেন।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর, রাজশাহী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে নগরীর সরকারি হাইস্কুলগুলোতে শহিদ মিনার নির্মাণের জন্য তিন লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়। এরপর ২০১৫ সালের এপ্রিলে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। শেষ হয় জুনে।
তিনি বলেন, যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভবন বা স্থাপনা নির্মাণের আগে ব্যবহারকারী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। এরপর ওই প্রতিষ্ঠানের মতামতের ভিত্তিতে স্থাপনা নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। একইভাবে সিরোইল সরকারি হাইস্কুলের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মতামতের ভিত্তিতে শহিদ মিনারটি স্থাপন করা হয়েছে। এখানে আমাদের কোন দায়-দায়িত্ব নেই। এক্ষেত্রে আমরা শুধুমাত্র বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করেছি। নগরীর অন্যান্য সরকারি হাইস্কুলগুলোর কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত জায়গাতেই শহিদ মিনার স্থাপন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে রাজশাহী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় হেলেনাবাদের কথা উল্লেখ করা হয়। কারণ ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মূল ফটকের সামনেই শহিদ মিনার স্থাপন করা হয়েছে।
এদিকে গতকাল রোববার বিকেলে সরেজমিন সিরোইল সরকারি হাই স্কুলের শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা গেছে, শহিদ মিনারটি একেবারে এক কোণে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির মূল প্রাচীর এবং অ্যাকাডেমিক ভবনগুলো পশ্চিমে। আর শহিদ মিনারটি নির্মাণ করা হয়েছে একেবারে পূর্ব কোণে। শহিদ মিনারের পাশেই রয়েছে একেবারে শেষ সীমানা প্রাচীর। আর শহিদ মিনারের সম্মুখভাগ ঘিরে রেখেছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের স্কাউটের কাজে ব্যবহৃত একতলা ভবন। ফলে শহিদা মিনারটি শুধু এক প্রান্তে আছে তাই নয়, একতলা ভবনের আড়ালে ঢেকে আছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির মূল ফটক থেকে এর দূরত্ব প্রায় আড়াইশ গজ। ফলে এটি দৃশ্যমান নয়।
তবে এ ব্যাপারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক আবদুর রশিদ বলেন, সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর শহিদ মিনার স্থাপনের ব্যাপারে আমাদের কোন মতামত নেয় নি। তারা নিজ উদ্যোগে শহিদ মিনার নির্মাণ করেছে। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির দৃশ্যমান কোন স্থানে শহিদ মিনারটি স্থাপন না করে এক কোণায় নির্মাণের দায়-দায়িত্ব বর্তায় শুধুমাত্র শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের ওপর।
অপরদিকে শহিদ মিনারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির সম্মুখ ভাগ বা দশ্যমান স্থানে নির্মিত না হওয়ায় রাজশাহীর রাজনৈতিক এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গণে ক্ষোভ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক উপাধ্যক্ষ কামরুজ্জামান বলেন, যেকোনো প্রতিষ্ঠানের ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো প্রতিষ্ঠানের দৃশ্যমান সম্মুখভাগে হওয়া উচিত। উদাহারণ দিয়ে তিনি বলেন, রাজশাহী কলেজ ও নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজসহ নগরীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শহিদ মিনার দৃশ্যমান স্থানে রয়েছে। সিরোইল স্কুলের প্রধান শিক্ষকের উচিত, শহিদ মিনারটি পুনঃস্থাপনের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা।
এ ব্যাপারে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট রাজশাহী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার ঘোষ বলেন, একুশকে কেন্দ্র করে আমাদের মহান স্বাধীনতা অর্জন। একুশ বাঙালির ঐতিহ্য আর ইতিহাস। তাই একুশকে স্মরণে রাখার জন্যই শহিদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু এ শহিদ মিনার যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক কোণে থাকে, তবে তা হবে অত্যন্ত দুঃখজনক। বিষয়টি নিয়ে অতিদ্রুত একটি কার্যকরী সিদ্ধান্ত নেবার দাবি জানাচ্ছি।