নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাহেবের যে সরকার এ সরকারকে সমস্ত গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল সমর্থন করেছে। তিনি একজন গুণী মানুষ নিঃসন্দেহে। আপনি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তারিখ ঘোষণা করুন। আপনি বলুন যে এত সময়ের মধ্যে নির্বাচন হবে।
প্রশাসনসহ সবকিছুতে সংস্কার দরকার। কিন্তু এ সংস্কারের নামে কালক্ষেপন বাদানুবাদ, তর্ক বিতর্ক চললে হবে না।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) বেলা ১২ টার দিকে নগরীর নওদাপাড়ায় মহানগর যুবদলের উদ্যোগে শীত বস্ত্র বিতরণ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, পতিত আওয়ামী লীগ সেদিন কত কথা বলেছে। যে জিয়াউর রহমান খাল কেটে কুমির আনবে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা এ কথা বলেছিল। খাল কেটে কুমির নয়, খাল কেটে যে চাল উৎপাদন হয়েছে, সেটি বিদেশে রপ্তানি করে ছিলেন জিয়াউর রহমান। আর আওয়ামী লীগের ৭২ থেকে ৭৫ ছিল খুধা, দারিদ্র ও দুর্ভিক্ষের ইতিহাস। এখন যে আপনাদের (আওয়ামিলীগ) কীর্তিকলাপ ফাঁস হচ্ছে। সত্যকে তো আর ঢেকে রাখা যায় না। এটা প্রকাশিত হবেই।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার বলেছিলেন নিজেকে- আওয়ামী লীগের সবাইকে কেনা যায়, কিন্তু শেখ হাসিনাকে কেনা যায় না। এ ধরনের কত কথা বলেছিলেন যে আমরা মানুষকে গণতন্ত্র দিয়েছি। কিন্তু আপনি যে কত নিয়েছেন এটা বলেননি। আপনার সময় মা তার সন্তান বিক্রি করেছেন।
আপনি মানুষকে ভাতের কথা বলেন? আপনার ভাত, আপনার গণতন্ত্র, আপনার সঙ্গার মধ্যে পড়ে। আপনার গণতন্ত্র হচ্ছে ভোটাররা ভোট দিতে পারে না। এটা যারা বিশ্বাস করে তারা শেখ হাসিনার গণতন্ত্রকে বিশ্বাস করে। দিনের ভোট রাতে হবে এটা হচ্ছে শেখ হাসিনার গণতন্ত্র। শেখ হাসিনার গণতন্ত্র হচ্ছে নির্বাচনের সময় বিরোধীদলের সবাইকে জেলের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখা। বিএনপির চেয়ারপারসনসহ সিনিয়র সব নেতাকর্মীদের জেলে পুরে রেখে তিনি সাত জানুয়ারির নির্বাচন করেছেন।
তিনি আরও বলেন, উনি যে গণতন্ত্র দিয়েছিলেন তার নমুনা আমরা দেখেছি। ভোটকেন্দ্রে চতুষ্পদজন্তু বিচরণ করতে। মানুষ বা ভোটাররা সেখানে যাননি। এগুলো তিনি কেন করেছেন? এ বাংলাদেশটা তার কাছে ছিল টাকার খনি।
এখুনি থেকে টাকা উত্তোলন করবেন তিনি ও তার পরিবারের লোকেরা। সেটা বিদেশে পাচার করবে সুখে শান্তিতে থাকবে। আর তার যে ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ তারা সেই টাকা দিয়ে দুবাই, কাতার, কানাডা, মালয়েশিয়া, আমেরিকাসহ বিভিন্ন জায়গায় তারা বাড়ি কিনবে সেখানে পরিবার নিয়ে থাকবে। এটা ছিল শেখ হাসিনার নীতি। তার একটার পর একটা প্রমাণ আমরা দেখতে পাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, কত ভয়ংকর দুর্নীতিবাজ ছিল শেখ হাসিনা। আপনি প্রধানমন্ত্রী আপনার নিজস্ব বাড়ি আছে সুধা সাধন। আপনার বোন শেখ রেহেনা, তার বাড়ি আছে ঢাকা শহরে। আপনার ভাগ্নে ববির বাড়ি ঘর আছে ঢাকা শহরে। সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী ঢাকার রাজুকে নিজস্ব বাড়ি, ফ্ল্যাট বা কোন আবাসন থাকে তাহলে আপনি আর কোন সরকারি প্লট আপনি বরাদ্দ পাবেন না।
কিন্তু শেখ হাসিনা তার অবৈধ ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে ৬০ কাঠা পূর্বাচলে জমি নিয়েছেন তার ভাগ্নে-ভাগ্নির নামে। প্রত্যেককে ১০ কাঠা করে পেয়েছে। কোন আইন-কানুন তোয়াক্কা করে নাই।
উনি ক্ষমতা ছাড়বেন কেন উনি তো ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করবেন। শেখ হাসিনা সোনার হরিণ ক্ষমতা ধরে রাখতে কত শিশু বাচ্চাকে হত্যা করেছে। আবু সাঈদের মতো টাটকা তরুণ প্রাণকে রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় হত্যা করেছে। মুগ্ধ যে চিৎকার করে বলেছে পানি লাগবে পানি তাকে হত্যা করেছে। এত শিশু, এত মাসুমকে হত্যা করে তিনি তার রাজ সিংহাসনকে চেষ্টা করেছে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।
তিনি তার ক্ষমতার রক্ষা করাতে তিন শুধু একটি দেশকে সমিহ করতেন। মুরব্বি মানতেন। এইজন্য বলেছিলেন আমি ভারতকে যা দিয়েছি, তা কোন দিন ভুলতে পারবেনা, তার বিরুদ্ধে যায়া যাক। উনি কত শক্তিশালী দেশকে গালাগালি করেছেন। আপনি কি দিয়েছেন বাংলাদেশের জনগণ জানে না? ভারত চেয়েছে তাদের স্বার্থ রক্ষায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকবে। সেটি হয়নি। তবে এখন এ দেশ কিভাবে চলবে তা নির্ধারণ করবে এদেশের জনগণ।
অনুষ্ঠানে আরে বক্তব্য রাখেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মামুনুর রহমান, মহানগর যুবদলের আহবায়ক মাহফুজুর রহমান রিটন সহ নেতারা। আলোচনা সভার পরে রুহুল কবির রিজভী দুস্থ শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ করেন। এরপর তিনি দুপুরে নগরীর গোলজারবাগ ঈদগাহ ময়দান, গুড়িপাড়ায় শীতবস্ত্র বিতরণ করন।