সেনাবাহিনীর পদক্ষেপে দখলের হাত থেকে রক্ষা পেলো শতবর্ষী মন্দির

আপডেট: মে ১৮, ২০২৫, ১১:০০ অপরাহ্ণ

নাটোর প্রতিনিধি:


নাটোর শহরের কাপুড়িয়াপট্রি এলাকায় সনাতনী হিন্দু সম্প্রদায়ের পবিত্র স্থান শত বছরের মহাদেব (শিবলিঙ্গ) বিগ্রহ মন্ডপ ভাঙ্গার চেষ্টা ও সেখানে বসবাসরত এক পুরহিত পরিবার জায়গাজবর দখলের অভিযোগ উঠেছে এনায়েত তালুকদার গোলাপ ও তার স্বজনদের বিরুদ্ধে।

বিষয়টি জানার পর শুক্রবার (১৬ মে) বিকালে সেনাবাহিনীর নাটোর ক্যাম্পের একদল সদস্য সেখানে অভিযান চালিয়ে মন্ডপ ও তার পুরহিত পরিবারের জায়গা রক্ষা করেন তারা।
এদিকে, শনিবার (১৭ মে) সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নাটোর শহরের কাপুড়িয়াপট্টি ও কানাইখালী মহল্লার সংযোগ রোডে (এ্যাড. খগেন্দ্র নাথ রায় এর বাড়ির উত্তর দিকে এবং মফিউর রহমান দুদুর পুকুরের দক্ষিণ পার্শ্বে) একটি শিব মন্দির আছে-যা জমিদার বিশ্বনাথ চন্দ্র নামে জমিদারি কোম্পানি লি. কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত। প্রায় অর্ধশত বছর যাবৎ সিধূ চক্রবর্তী নামে এক পুরহিত পূজা-পার্বন করাসহ তার পবিবার-পরিজন নিয়ে সেখানে বাস করে আসছেন। ওই মন্দিরে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রয়ের লোকজন নিয়মিত পূজা-পার্বন করেন।

আশি বছর বয়সী সিধূ চক্রবর্তী ‘ওঁ নমো শিবায় এষ গন্ধঃ শিবায় নমঃ।’ একটি সচন্দন ফুল দিয়ে বলবেন-‘ ওঁ নমো শিবায় ইদং সচন্দন পুষ্পং শিবায় নমঃ’ মন্ত্রে চন্দনমাখানো বেলপাতা শিবের মাথায় দিচ্ছেন। এসময় এই প্রতিবেদক এর সাথে কথা তার।

এসময় তিনি বলেন, আট বছর থেকে তিনি পূজা-পার্বন করে আসছেন। প্রায় পঞ্চাশ বছর সেখানে নিজস্ব বাড়ি এবং মন্ডপে ধর্মীয় কাজ করেন। হঠাৎ কানাইখালীর বাসিন্দা এনায়েত তালুকদার গোলাপের ছেলে গাউছিয়া রেস্তরার মালিক কয়েকদিন যাবৎ উক্ত মন্দিরের নিকটবর্তী বসবাসকারী তারা মন্দির ভাঙ্গার চেষ্টা করে এক পর্যায়ে তাদেরকেই দিয়ে মন্দির ভাঙ্গার চাপ দেয় এবং সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করতে থাকেন।
এদিকে বিষয়টি বুঝতে পেরে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনেরা গত শুক্রবার স্থানীয় সেনা ক্যাম্পে একটি অভিযোগ দেন।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত টুটুল হোসেন বলেন, ১৯৮৪ সালে ক্রয় সূত্রে ওই ভূমির ২৫ শতকের মালিক তারা। আমীন দিয়ে মাপযোগ করে যতটুকু পাইছি সেই টুকু প্রাচীর দিয়ে ছিলাম। সেনাবাহিনী এসে তাদের মিটার ও ঘরের ওয়াল ফাঁকা করে দিতে বলেছে। আগামীতে এটা নিয়ে বসে মিমাংশা করে নিবো।

অপরদিকে ওইরূপ কর্ম সংঘটিত হওয়া, হিন্দু জনসাধারণের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হওয়ার পূবে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে ছুটে যান একদল সেনা সদস্য। সেখানে গিয়ে তারা ওই অপতৎপরতা রুখে দেন এবং রক্ষা করা হয় শত বছরের পুরাতন মন্দিরটি। শত শত বছরের পুরাতন শিব মন্দির ভাঙ্গার পায়তারা এবং অর্ধশত বছর ধরে মন্দিরের অভ্যন্তরে বসবাসরত পুরোহিত সিধূ চক্রবর্তীর বসতভিটা রক্ষা করায় এমন পদক্ষেপে সেনা সদস্যদের প্রতি খুশি ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা এবং হিন্দু ধর্মের জনসাধারণেরা।

উল্লেখ্য, ১৭৯৭ সালে, রানী ভবানীর দত্তক পুত্র রাজা রামকৃষ্ণের মৃত্যুর পর নাটোরের সম্পত্তি তার দুই পুত্র বিশ্বনাথ এবং শিবনাথের মধ্যে ভাগ করা হয় এবং এরপর থেকে ১৯৫০ সালে সমস্ত জমিদার সম্পত্তি বিলুপ্ত না হওয়া পর্যন্ত একটি জ্যেষ্ঠ এবং একটি কনিষ্ঠ উভয় রাজপরিবারই বিদ্যমান ছিল।

বিশ^নাথ চন্দ্রনাথ জমিদারি কোম্পানি লি. এর কাপুড়িয়া পট্রি পুরাতন কৃষি ব্যাংক দক্ষিণে পুকুর পাড়ে অবস্থিত কোম্পানি নিজস্ব ওই ম-প প্রতিষ্ঠিত করেন। ওই ম-প থেকে ১৯৯৬ সালে মহাদেব (শিবলিঙ্গ) বিগ্রহটি চুরি করা হয়। সে সময় নাটোর কানাইখালি বাসিন্দা কোম্পানির (প্রাইভেট) এক মাত্র লিকুইডেটর পূর্ণশশী বসাক নাটোর থানায় জিডি করেন। পরে জিডির আলোকে ওই ব্ছরই ডিসেম্বর মাসে পুলিশ ও স্থানীয়দের সহায়তায় বিগ্রহটি পাশের্^র পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ