শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক
তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও মানবাধিকার ব্যক্তিত্ব অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেছেন, নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে আদিবাসীদের ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। নিজের প্রতি আস্থা, বিশ্বাস ও সাহস ছাড়া দুর্বৃত্তের বিরুদ্ধে লড়াই করা যায় না। মানুষ হিসেবে নিজের আত্মপ্রত্যয়কে দৃঢ় করার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে।
উত্তরবঙ্গের আদিবাসীদের ভূমি জবরদখল : প্রসঙ্গ সাহেবগঞ্জÑবাগদা ইক্ষু ফার্মে সাঁওতাল হত্যা ও উচ্ছেদ’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
গতকাল রোববার আশ্রয় প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আদিবাসী মুক্তি মোর্চার উদ্যোগে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক যোগেন্দ্রনাথ সরেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন, যথাক্রমে সাবেক জেলা ও দায়রা জজ সা.ক.ম আনিছুর রহমান খান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় নৃবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. মোস্তফা কামাল আকন্দ, দৈনিক সোনার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আকবারুল হাসান মিল্লাত, আশ্রয় রাজশাহীর সিইও তৌফিকুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট নরেন্দ্রনাথ টুডু, মন্ডুমালা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামিয়েল মার্ডি, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতিমন্ডলির সদস্য অনিল মারান্ডি, আদিবাসী মুক্তি মোর্চার উপদেষ্টা চিত্তরঞ্জন সরদার, উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি হিংগু মুরমু। স্বাগত বক্তব্য দেন, আদিবাসী মুক্তি মোর্চার সাধারণ সম্পাদক যাকারিয়াস ডুমরী। বিষয়ভিত্তিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, আশ্রয় রাজশাহীর প্রকল্প সমন্বয়কারী হোপনা কিসকু।
মুক্তআলোচনায় অংশ নেন, ভারতীয় কিরকি, নগেন মুরমু, মেসবাহ প্রমূখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সুলতানা কামাল বলেন, সাহেবগঞ্জ-বাগদা ইক্ষুফার্মের নামেই ঐতিহাসিক সত্যের সাক্ষি রয়ে গেছে। ওই নামই বলে দেয় ওই জমি আদিবাসীদের ছিল। ওই জমি উদ্ধারের সংগ্রামে নেমে আদিবাসীদের যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ হওয়ার মত নয়। তদুপরি যতটুকু ক্ষতি পুষিয়ে দেয়া সম্ভব তা করতে হবে। আদিবাসীদের পুনর্বাসনও নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, দেশের প্রতিিিট মানুষ নিজের পরিচয়ে রাষ্ট্রের কাছে অভিন্ন মর্যাদায় শান্তিপূর্ণ অবস্থান করবেÑ এটাই ছিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা। রাষ্ট্র ধর্ম গোত্র বর্ণ বিবেচনায় কোনো বৈষম্য করবে না। সংবিধান আমাদের সেই অধিকারই দিয়েছে। এই অধিকার বোধ থেকেই রাষ্ট্রকে পরিচালিত হতে হবে। রাষ্ট্র দায়িত্ব পালনে বিচ্যুত হলে নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে। সম্মিলিত শক্তির ঐক্যবদ্ধ উদ্বোধনের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে তার দায়িত্ব পালনে বাধ্য করতে হবে।
সুলতানা কামাল বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশ রাষ্ট্র অমানবিক হবেÑ এটা হতে পারে না। সচেতন মানুষ মাত্রই লড়তে হবে, অধিকারের প্রশ্নে বলতে হবে। পাঁচজন দুর্বৃত্ত যে ক্ষতিসাধন করতে পারে ৫০০ জন ভাল মানুষ নিরব থাকলে সে ক্ষতি আরো মারাত্মক হয়। ঐক্যবদ্ধ হলে কোনো দুর্বৃত্তই ঠিকতে পারে না।
তিনি বলেন, নিজেদের শক্তি ও সংহতি বাড়াতে হবে। এ জন্য নিজের মানুষ হিসেবেই অন্যদের কাছে টানতে হবে। ঐক্যবদ্ধ শক্তির কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, সংবিধান বড় শক্তি। সরকার ও রাজনীতিকরা কোনো না কোনোভাবে সংবিধানের কাছে দায়বদ্ধ। তাদেরকে দায়বদ্ধতার পথে আনতে হবে। তাদেরকে বাধ্য করতে হবে। কেননা তারা সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়েছেন। নিজেরা নিজেদের থেকে বিচ্যুত না হলে কেহই হারাতে পারবে না ইতিহাস সেই সাক্ষ্যই দেয়। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ সেই সাক্ষ্য দেয়।