স্কুলে স্কুলে বই উৎসব তোমরা পড়াশোনা করে মানুষের মতো মানুষ হও:লিটন

আপডেট: জানুয়ারি ১, ২০২৪, ১১:১৮ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

 


বছরের প্রথম দিন রাজশাহীর স্কুলে স্কুলে বই উৎসব হয়েছে। এদিন শিক্ষার্থীরা নতুন বই পেয়ে নতুন শ্রেণিতে উঠেছে। ফলে নতুন বইয়ের সাথে নতুন শ্রেণিতে ওঠার আনন্দ শিক্ষার্থীদের কাছে উৎসবে পরিণত হয়। সোমবার (১ ডিসেম্বর) রাজশাহীতে প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, রাজশাহীতে ১ম থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত সম্ভাব্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২ লাখ ৬৩ হাজার ২৮৮ জন। এই শিক্ষার্থীদের মাঝে ১ কোটি ৩০ লাখ ৩৬৬ টি বই বিতরণ করা হয়। রাজশাহীর ১ হাজার ৫৭টি সরকারি ও ৮৭৮ টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণ করা হয়।

এছাড়া মাধ্যমিক পর্যায়ে বাংলা ভার্সনে ১৮ লাখ ১৫ হাজার ১২১টি, এসএসসি ভোকেশনাল পর্যায়ে ৮০ হাজার ৭০০টি, ভোকেশনাল ট্রেড ২৮ হাজার ৭০০ ও ইরেজি ভার্সনে ৪ হাজার ১০০টি বই বিতরণ করা হয়। এছাড়া এবতেদায়ী পর্যায়ে শতভাগ ও দাখিল পর্যায়ে ৫৮ শতাংশ বই বিতরণ করা হচ্ছে। তবে প্রাথমিক পর্যায়ের বই আসলেও মাধ্যমিক পর্যায়ে ২৫ শতাংশ বই এখনও আসেনি।

সকাল থেকেই ওই স্কুলে নতুন বইয়ের উৎসব শুরু হয়। স্কুলটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরাও এই উৎসবের আমেজে মেতে উঠে। স্কুলগুলোতে ভিন্ন ভিন্ন আমেজে পালিত হচ্ছে বই উৎসব। বিদ্যালয়গুলোতে ঘটা করেই শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই তুলে দিচ্ছে শিক্ষকরা। বছরের প্রথম দিন ঝকঝকে পাঠ্যবই হাতে পেয়ে দারুণ খুশি ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা।

পবার মুরারীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. জুনাইদ হোসেন (৭) বলেন, বছরের প্রথম দিনে বই পেয়ে খুবই ভালো লাগছে। এখন নতুন বই বাসায় নিয়ে বাঁধায় করবো। নতুন বইয়ের ঘ্রাণটা অনেক সুন্দর। নতুন বই হাতে পেলে সারাদিনই বই নিয়ে থাকি।

মুরারীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোসা. নাজনীন নাহার বলেন, বই উ*সবকে প্রাণবন্ত করতে সকাল থেকেই আমাদের প্রস্তুতি ছিলো। সকাল শিক্ষার্থীরাও স্কুলে আসতে থাকে। ১১ টার সকাল শিক্ষার্থীদের মাঝে অনুষ্ঠানিকভাবে বই বিতরণ করা হয়। নতুন বই পেয়ে খুশি শিক্ষার্থীরা।

অগ্রণী স্কুল ও মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সাইফুল হক বলেন, সকাল থেকে উৎসব শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন বই বিতরণ করা হচ্ছে। এবছর প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৮৮৮ জন এবং ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ৯৩১ জন শিক্ষর্থীকে বই দেওয়া হচ্ছে। আমরা সব শ্রেণির বই পেয়েছি।

এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ের সব বই চলে এসেছে। স্কুলে স্কুলে উৎসব হয়েছে। শিক্ষার্থীরা নতুন শ্রেণিতে উঠে নতুন বই পেয়েছে।

রাজশাহী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দীন বলেন, ৮৫ শতাংশ বই এসেছে। বাকি বই জানুয়ারি মাসের ১৫ তারিখের বই পেয়ে যাব। তারপরে বইগুলো শিক্ষার্থীদের মাঝে দেয়া হবে।

রাজশাহী অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) জয়া মারীয়া পেরেরা বলেন, সুন্দর পরিবেশে রাজশাহীতে বই উৎসব পালিতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা বছরের পথম দিনে নতুন বই পেয়ে উচ্ছ্বসিত।

অপরদিকে, বেলা ১১ টার দিকে রাজশাহীতে বই উৎসবের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।

তিনি নগরীর শহীদ মামুন মাহমুদ পুলিশ লাইনস স্কুল এন্ড কলেজে বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে এ বই উৎসবের উদ্বোধন করেন তিনি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার। এতে কলেজটির অধ্যক্ষ মো. গোলাম মাওলাসহ আরএমপির উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেন রাসিক মেয়র। বই পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে শিক্ষার্থীরা।

নতুন বই হাতে নিয়ে সিরাজুম মুনিরা নামে এক শিক্ষার্থী বলে, ‘বই পেলাম, ডায়েরি পেলাম। অনেক ভাল লাগছে। পড়ালেখা করবো।’ তৃতীয় শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী জানায়, ‘বই পেয়ে তার ভাল লাগছে।’ অভিভাবকরা জানিয়েছেন, নতুন বই পেয়ে পড়ালেখায় মনোযোগী হবে তাদের সন্তানরা। সুশিক্ষা নিয়ে দেশপ্রেম ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে এ শিক্ষার্থীরা কাজ করবে বলেও প্রত্যাশা করছেন অভিভাবকরা।

এর আগে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদানকালে শুরুতেই সকলকে ইংরেজি নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানান রাসিক মেয়র ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। এসময় তিনি বলেন, ‘আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের মধ্যে একটা অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। দেশের নাগরিকদের আগামী দিনে দেশ পরিচালনা করবে, দেশকে আরও উপরে নিয়ে যাবে, সেই সমস্ত শিশুদের মধ্যে নতুন বই বিতরণ; সে যেখানেই থাকুক, পার্বত্য চট্টগ্রামই হোক, স্বন্দিপ-হাতিয়া, ভোলা দ্বীপ এলাকায় হোক অথবা আমাদের সমতল ভূমিতে হোক, সর্বত্রই কিন্তু এ দিনটিতে বই পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।’

রাসিক মেয়র বলেন, ‘এই উদাহরণ কোথাও কোনো দেশে আছে বলে আমি জানি না, নেই বলেই আমি জানি। সেই কাজটি তিনি করেছেন এবং তিনি প্রমাণ করেছেন। যেটি বলা হত, বাংলাদেশ দরিদ্র দেশ, বাংলাদেশ কী পারবে, অনেকে নানারকম সংশয় প্রকাশ করেছিলেন- এটা অতিরিক্ত খরচ, অহেতুক সরকার করে ইত্যাদি নানা নেগেটিভ কথা যারা সবসময় বলেন, নেতিবাচক কথা তারা বলেছিলেন। কিন্তু তাদের এখন সেই মুখটা বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ দুর্যোগে হোক, দুঃসময়ে হোক, কিছু সময় হোক, সরকার কিন্তু বছরের প্রথম দিনই এই পাঠ্যপুস্তুকগুলি বাচ্চাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে নানারকম বাধা সত্ত্বেও। আশা করি, এই বইগুলি যারা পাচ্ছে, সেই আমাদের সন্তানের মতো যারা এখানে আছে, তারা এই বইগুলি পেয়ে আনন্দে তাদের মনটা ভরে যাবে।’

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তোমাদের ভাগ্য কত ভাল যে, তোমরা নতুন নতুন বই যার পাতা উল্টালেই এক ধরণের গন্ধ পাওয়া যায়। এই গন্ধটা অদ্ভুতভাবে মানুষকে আকৃষ্ট করে। সেটা আমরা যদিও পাইনি, তোমরা পাচ্ছ। তোমরা ভাল কিছু পাও, সেই আশা আমরা করি। সরকার তোমাদের জন্য এই খরচগুলো করছে; এটা কিন্তু তোমাদের বাবা, তোমাদের দাদা ও যারা দেশের ট্যাক্স দেন, তাদের অর্থে কিন্তু এগুলো করা হচ্ছে। এটা করা হচ্ছে এই কারণে যে, তোমরা পড়াশোনা করে মানুষের মতো মানুষ হও।’

সর্বশেষ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্দেশে রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘শুধু জিপিএ ফাইভ বা যেটাকে গোল্ডেন এ প্লাস বলি আমরা, এই গোল্ডেন পাওয়ার জন্যই লড়াই করতে হবে- আমি এটা কখনো বিশ্বাস করি না। অনেক অভিভাবক হয়ত আমার সঙ্গে আমার বোনোরা যারা আছেন এখানে, হয়ত একমত হবেন না; কিন্তু আমি মনে করি, এ প্লাস পাওয়ার চাইতেও যদি প্রকৃত অর্থে সে শিক্ষাটা পায় যে, এই সমাজের জন্য, মানুষের জন্য প্রত্যেকটি প্রাণীর জন্য আমাদের যা করণীয়- সেটাই কিন্তু আসল শিক্ষা।’

 

অন্যদিকে, ‘পাঠ্যপুস্তক উৎসব দিবস-২০২৪’- এ বিনামূল্যে বই বিতরণ করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে সোমবার (১ জানুয়ারি) সকালে রাজশাহী রিভিউ কালেক্টরেট স্কুলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে পাঠ্যপুস্তক উৎসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেন জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ। নতুন বই হাতে পেয়ে আনন্দ-উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন রিভিউ কালেক্টরেট স্কুলের শিক্ষার্থীরা।

এসময় ‘শিক্ষার্থীদের কাছে অনন্য প্রাণের উৎসব হলো বই উৎসব’ উল্লেখ্য পূর্বক জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, ‘এই বই উৎসব যখন ছিল না, তখন বাজারে নতুন বই আসতে কিছুটা সময় লেগে যেত। উচ্চতর শ্রেণির সহপাঠী বা আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে জীর্ণশীর্ণ বা পুরনো বই এনে বা কিনে পড়তে হতো। এসব দৈন্য, সীমাবদ্ধতা বা শিক্ষাক্ষেত্রের অস্বতঃস্ফূর্ততা এখন মুছে গেছে। এখন শিক্ষার্থীদের কাছে বছরের শুরুতেই পরম উপহার হয়ে এসেছে নতুন বই। সেই দিক থেকে শিক্ষার্থীদের কাছে একটি অনন্য প্রাণের উৎসব হলো ‘বই উৎসব’।

পাঠ্যপুস্তক উৎসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হাতে একযোগে নতুন বই তুলে দেয়ার আহবান জানিয়ে জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, বছরের প্রথম দিনে নতুন বই হাতে পেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীরা। নতুন বইয়ের গন্ধ ফুলের গন্ধকেও হার মানায় সম্ভবত শিশু শিক্ষার্থীদের কাছে। তাদের সারা জীবনের শিক্ষার ক্ষেত্রে সে গন্ধকে অটুট রাখতে, এই উৎসবের দিনে একযোগে সকল শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

নতুন বই হাতে পেয়ে রিভিউ কালেক্টরেট স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র অনিরুদ্ধ চৌধুরী জানান, ‘ইংরেজি নতুন বছরের শুরুতে নতুন বই উপহার পেলাম। নতুন বইয়ের গন্ধ আমার অনেক ভাল লাগে। তাই এই মূল্যবান উপহার বই নিয়ে বাড়ি যাবো এবং মনোযোগ দিয়ে পড়ালেখা করবো।’

এসময় অভিভাবকদের মধ্যে সুস্মিতা চৌধুরী জানান, নতুন বই পেয়ে পড়ালেখায় মনোযোগী হবে আমার সন্তান। সুশিক্ষা নিয়ে দেশপ্রেম ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে এ শিক্ষার্থীরা কাজ করবে বলেও প্রত্যাশা করছেন তিনি।

রাজশাহী রিভিউ কালেক্টরেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক মনোয়ারা পারভীনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) জয়া মারীয়া পেরেরা। এসময় শিক্ষার্থী, অভিভাবক, সুধীমহল, সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ