স্ত্রীর শেষ ইচ্ছা পূরণে বট-পাকুড়ের বিয়ে

আপডেট: ডিসেম্বর ১৩, ২০২৪, ৮:৪৫ অপরাহ্ণ

বগুড়া প্রতিনিধি


চারদিকে বাজছে সানাইয়ের সুর। উলুধ্বনি দিচ্ছেন শত শত নারী। পুরোহিত পাঠ করছেন মন্ত্র। পরিপাটি করে সাজানো হয়েছে বিয়ের আসর। এক পলক দেখার জন্য ভিড় করছেন অনেকেই। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের রীতি অনুযায়ী গায়েহলুদ, আদি শ্রাদ্ধ, অধিবাস, বিয়ের আয়োজনের কোনো কিছুর যেন কমতি নেই। তবে এত কিছু আয়োজন করা হয়েছে শুধু একটি বট আর পাকুড় গাছের বিয়েকে ঘিরে।

বৃহস্পতিবার বগুড়া শেরপুরের পৌর এলাকায় থানা রোড সংলগ্ন করতোয়া নদীর তীরে, হরিতলা কালীমাতা মন্দির প্রাঙ্গণে এই বট ও পাকুড় গাছের বিয়ের আয়োজন করা হয়।

সকাল থেকেই শুরু হয় এই বিয়ের কার্যক্রম, চলে রাত পর্যন্ত। এই বিয়েতে বটগাছকে কনে আর পাকুড় গাছকে বর হিসেবে সাজানো হয়। বিয়েতে কনের বাবা হিসেবে কন্যাদান করেন প্রদীপ দাস আর ছেলের বাবা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিমল দাস। মন্ত্র পাঠের মাধ্যমে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করেন পুরোহিত অমিত তরফদার হোদল। বিয়েতে উপস্থিত সকলের জন্য আয়োজন করা হয় নিরামিষ খাবারের।

বিগত কয়েক বছর আগে শহরের গোসাইপাড়া এলাকার রিনা দাস নামে এক ধর্মপ্রাণ নারী সন্তান না থাকায় করতোয়া নদীর তীরে হরিতলা কালিমাতা মন্দির প্রাঙ্গণে গাছ দুইটিকে রোপণ করে। নিজের সন্তানের মতো লালন-পালন করেন তিনি। ইচ্ছে ছিল গাছ দুটি বড় হলে মা হিসেবে ধুমধাম করে তাদের বিয়ে দেবেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, গেল বছর পরলোকে গমন করেন রিনা রানী দাস। তাঁর এই ইচ্ছে পূরণে তাঁর স্বামী, তাঁর বোনেরা এবং পরিবারের সদস্যরা এই বট ও পাকুর গাছের বিয়ের আয়োজন করেন।

মৃত রীনা দাসের স্বামী প্রদীপ দাস বলেন, ‘আমার স্ত্রীর মারা যাওয়ায় আগে ইচ্ছে ছিল তার হাতে লাগানো এই বট-পাকুড় গাছের বিয়ে দেবে। দিনক্ষণও ঠিক হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ তিনি মারা যাওয়ায়, এক বছর পর তার ইচ্ছে পূরণ করতেই এমন আয়োজন করা হয়।’

তাঁর বোন রানু দাস, গীতা রাণী দাস ও গোলাপী রানী দাস বলেন, আমার বোনের কোনো সন্তান ছিল না, সে এই গাছ দুটিকে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসত। তিনি মা হিসেবে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। আমরা বোনের আত্মার শান্তি কামনায় তার মনেই ইচ্ছে পূরণ করতেই ধুমধাম করে এই বট পাকুড় গাছের বিয়ে দিলাম।

পুরোহিত অমিত তরফদার হোদল বলেন, বট-পাকুর গাছ বা আমলকি গাছের বিয়ের রীতি প্রচলিত আছে যুগ যুগ থেকে। এটি শুধু মাত্র বিয়ের আয়োজন নয়, এই বিয়ের উদ্দেশ্যে হলো বৃক্ষরাজদের রক্ষা ও প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা। প্রকৃতির প্রতি প্রেম বা শ্রদ্ধা থেকেই যুগ যুগ থেকে এমন আয়োজন করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তথা হিন্দুরা।