সোমবার, ২৯ মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
রাবি প্রতিবেদক:
স্বতন্ত্র আবাসিক হল, প্রার্থনা কক্ষ ও নিরাপদ খাদ্যের দাবিতে মানববন্ধন করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সনাতনী ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা। সোমবার (২৭ মার্চ) বেলা সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন উদ্দিন আহমেদ সিনেট ভবন সংলগ্ন প্যারিস রোডে এ মানববন্ধন করেন তারা।
সনাতনী শিক্ষার্থীদেরকে আলাদা করে দেখা হচ্ছে দাবি তুলে মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আমাদের সনাতন শিক্ষার্থীদের জন্য
স্বতন্ত্র হলের ব্যব্স্থা করতে হবে যেন আমরা নির্বিঘেœ থাকতে পারি এবং প্রতিটা হলে আমাদের জন্য একটা প্রার্থনালয় থাকা জরুরি। আমাদের খাবার নিশ্চিত করা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের দায়িত্ব। কেন আমাদের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সামনে গরুর মাংস নিয়ে আসবে। গরু মাংস আমাদের সনাতনধর্মদের জন্য নিষিদ্ধ, তারা কি সেটা জানে না? আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ হাজার সনাতন ধর্মাবল্বী শিক্ষার্থী আছে কিন্তু কেন্দ্রীয় মন্দিরে কোনো পুরোহিত নেই। আমরা আমাদের এ সমস্যার দ্রুত সমাধান চাই।
বিপু চন্দ্র সঞ্চালরায়েরনায় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী প্লাবন কুমার বলেন, আমি প্রথম থেকেই হলগুলোতে গরুর মাংস দিতে দেখে আসছি এখনো তা চলছে। আমরা অন্য ধর্মকে ছোট করে দেখছি না, কিন্তু স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন করার অধিকার আমাদেরকেও দিতে হবে। আমাদেরকে যদি আলাদাভাবে দেখা হয়, তাহলে সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা হলের ব্যবস্থা করা হউক।
সনাতন বিদ্যার্থী সংসদের সভাপতি তন্ময় কুমার কুন্ডু বলেন, হলগুলোতে ধর্ম পালন করা আমাদের জন্য কষ্টকর। একই চামচ দিয়ে গরু ও মুরগির মাংস বিতরণ করা হচ্ছে। আমরা সনাতনী বলার পরও আমাদের সাথে এমনটা প্রতিনিয়তই হচ্ছে। আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছি তারা আশ্বস্ত করে, কিন্তু কোনো সমাধান করে না। সনাতনীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা না রেখে বর্তমানে সবগুলো হলেই গরুর মাংস দিচ্ছে, যা আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, এখানে সবাই অসাম্প্রদায়িক জাতি হিসেবে পরিচিত।
ফলিত রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী নয়ন চন্দ্র দাস বলেন, আমাদের সহপাঠীরা গরুর মাংস খাচ্ছে, এতে সমস্যা নেই। কিন্তু আমাদের যেটা নিষিদ্ধ সেটার কথা প্রশাসনের ভাবতে হবে। আমাদের না খেয়ে নিয়মিত ক্লাস করতে হচ্ছে। প্রশাসনকে আমাদের খাবারের নিশ্চিয়তা দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় এমনটা কাম্য নয়। আমাদের খাবারসহ সব কিছু নিশ্চিত করে স্বতন্ত্র হলের দাবি করছি আমরা। আমরা চাই সাম্প্রদায়িক চেতনাকে বাদ দিয়ে সবাই মিলে থাকা। যেটা আমাদের দেশে হাজার বছর ধরে চলে এসেছে।
চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী মনমোহন বাপ্পা বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তৈরি হয়েছিল সকল শিক্ষার্থীদের সমান সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার জন্য। কিন্তু আমরা দেখছি সংখ্যা গরিষ্ঠদের বেশি সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কারন হিসেবে বলবো প্রত্যেকটা হলের ক্যান্টিন ডাইনিং এখন বন্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন যদি সমান ভাবে চিন্তা করতো তাহলে হলের ক্যান্টিন বা ডাইনিং বন্ধ থাকতো না। আজকে যদি আমাদের জন্য খাবার ব্যবস্থা করা হতো, আমাদের জন্য প্রার্থনার জায়গা থাকতো, তাহলে আজ আমাদের স্বতন্ত্র হলের জন্য রাস্তায় দাঁড়াতে হতো না। সমান অধিকারসহ স্বতন্ত্র হলেরও দাবি জানান তিনি।
তবে সরেজমিনে দেখা যায়, সনাতন শিক্ষার্থীরা ডাইনিং-ক্যান্টিন বন্ধ থাকার দাবি করলেও, হলগুলোর ডাইনিং- দুপুরে বন্ধ থাকলেও সন্ধ্যায় এবং রাতে খোলা থাকছে। মানববন্ধনে প্রায় ২শতাধিক সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।