স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কৌশলে ‘স্বাধীনতাবিরোধী’ বললেন এমপি ফারুক

আপডেট: ডিসেম্বর ২২, ২০২৩, ৭:৫১ অপরাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক:


রাজশাহী-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে ভোট করছেন তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী। আর এই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের তিনি কৌশলে ‘স্বাধীনতাবিরোধী’ বলেছেন। বুধবার (২০ ডিসেম্বর) তানোর উপজেলার কলমা ইউনিয়নের মালবান্দা বিদ্যালয়ের মাঠে নির্বাচনী সভায় এই কথা বলেন।

স্বতন্ত্র প্রার্থীদের স্বাধীনতাবিরোধী বলার ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ফারুক চৌধুরী বলেন, ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের জন্য যুদ্ধ করেছিলেন তারা মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে দেশ স্বাধীন হতে না দেওয়া তারা হলেন রাজাকার। নৌকার বিরুদ্ধে গিয়ে যারা নির্বাচন করছেন তারাও রাজাকার। নৌকার পক্ষে যারা থাকবে তারা মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ। নৌকার বিপক্ষে যারা কাজ করবে তারা আওয়ামী লীগ হতে পারবে না।

তিনি আরও বলেন, আমাদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বলেছেন- যারা নৌকার বিপক্ষে যাবে তাদের ছবি ও ভিডিও ধারণ করে রাখতে হবে। দল তাদের ব্যাপারে কিছু করবে এবং সেভাবে সিদ্ধান্ত নেবে। নেত্রী বলেছেন, যারা প্রার্থী হবেন তারা একটি করে ডামি প্রার্থী রাখতে পারবেন। কেন করবেন? আপনার পোলিং এজেন্ট একজন বেশি রাখতে পারবেন। দুজন থাকলে শলাপরামর্শ করে কাজটা করতে পারবে। এটাকে কিছু সুবিধা মানুষ ডামিকে স্বতন্ত্র করে ফেললো। যারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে মনোনয়ন চেয়েছে. প্রধানমন্ত্রী যাদের মনোনয়ন দিতে চাননি বা দেন নাই তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী সেই হতে পারবে যে সত্যিকারের স্বতন্ত্র। আমি দলের কাছে প্রার্থীতা চাইলাম কিন্তু দল দিল না স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে গেলাম। তাহলে তুমি দল মানো না।

তিনি বলেন, আমি মনে করি মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা প্রতিরোধ করেছিল আমরা বাঙালিরা অন্য নামে ডাকি। আজকে আওয়ামী লীগের ও নৌকার বিজয়ের যায়গাকে যারা প্রতিরোধ করতে যাচ্ছে স্বাধীনতার প্রতিরোধকারীদের (স্বতন্ত্র প্রার্থী) এদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। এরা আমাদের দেশের কোনো মঙ্গলজনক মানুষ অবশ্যই না। যাদের দেখবেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর হয়ে কাজ করছেÑ তাদের ছবি ও ভিডিও করে রাখবেন। আমাদের প্রয়োজনে লাগবে। আমাদের কেন্দ্রের নির্দেশ।

৮ মিনিট ৩১ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে তাকে রাস্তা না করার দেওয়ার কথা বলতে শোনা গেছে। তিনি বলেন, আমাদের সবার বয়স এক না। এক সাথে এত রাস্তাও তৈরি করে দেওয়া সম্ভব না। স্টেপ বাই স্টেপ তৈরি করতে হবে। আমি একটি বইয়ে পড়েছি রাস্তা দিয়ে গাড়ি যায়, ঘোড়া যায়। কিন্তু না। রাস্তা দিয়ে সভ্যতা যায়। আমাদের এখানে কয়টা রাস্তা ছিল? আমাদের এখানে কয়টা গ্রামে বিদ্যুৎ ছিল? মাত্র ২৬ ভাগ গ্রামে বিদ্যুৎ ছিল মাত্র আট ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ পাওয়া যেত।

এই আসন থেকে তিনজন প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তারা হলেন- তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও মুণ্ডুমালা পৌরসভার সাবেক মেয়র গোলাম রাব্বানী, ঢাকার সিনেমার জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা শারমিন আক্তার নিপা ও জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আখতারুজ্জামান আখতার।
তবে এই বিষয়ে কথা বলার জন্য আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও সংসদ সদস্য ফারুক চৌধুরীর মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে তিনি ধরেননি। তাই তার বক্তব্য নেওয়া যায়নি।

যারা নৌকার বিপক্ষে কাজ করবে, তাদের ছবি তুলে রাখতে বলেছেন রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী। এতে ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন এ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা শারমিন আক্তার নিপা (মাহিয়া মাহি)। বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) রাতে নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করা এক ভিডিও বার্তায় এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর প্রতি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান তিনি।

তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়েছে তানোর-গোদাগাড়ীর মানুষকে এই ভয়ভীতি থেকে তাদের বাঁচানো আমার দায়িত্ব। তাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে কে কি বলছেন? আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, “স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কেউ যদি কাজ করতে চায়, কাজ করতে পারে। এটা তাদের ইচ্ছা। কেন্দ্রীয় নেতারা-মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-তারা অনেক মানবিক। তারা এই শাসকের মতো না। তাদের কথা হচ্ছেÑনির্বাচন হবে উৎসবমুখর। তারা একবারও বলেননি, যারা স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন তাদের ছবি তুলে রাখতে হবে। ভিডিও করে রাখতে হবে। পরবর্তীতে ব্যবস্থা নিতে হবে। নাহ, এ রকম কোনো তথ্য তো কেন্দ্র দেয়নি। আপনি কে যে মানুষের মধ্যে ভয়ভীতি সৃষ্টি করছেন?’

রাজনীতির মাঠে এসে ফারুক চৌধুরীর নানা বাঁধার কথা তুলে ধরে ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী মাহি বলেন, ‘আপনি বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসেন না। এটা আমি হলফ করে বলতে পারি। কারণ, আমি নিজে প্রমাণ। যদি ভালোবাসতেন বঙ্গবঙ্গুর শতবর্ষ উপলক্ষে আমার আয়োজন করা টুর্নামেন্ট বন্ধ করার চেষ্টা করতে পারতেন না। আপনার অত্যাচার আমি জানি। আপনি কীভাবে আটকানোর চেষ্টা করেছেন। আপনি পারেন নাই, পারবেন না। শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে একটা টুর্নামেন্ট আয়োজন করছিলাম, সেটাও বন্ধ করার চেষ্টা করেছেন। কারণ, আপনি ভয় পান। আপনার জনপ্রিয়তা নেই। যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী মাঠে আছে, তারা আপনার চেয়ে বহুগুণে জনপ্রিয়, আপনারই এলাকায়।’

আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও মুণ্ডুমালা পৌরসভার সাবেক মেয়র গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘বর্তমান এমপির জনপ্রিয়তা নেই বললেই চলে। তাই তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থীদের খুব ভয় পাচ্ছেন। মানুষের মধ্যে তিনি ভয় দেখানোর চেষ্টা করছেন। এবং ভয় দেখিয়ে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসতেও বাধা দিচ্ছেন। ৭ জানুয়ারি প্রমাণ হয়ে যাবে কার কত জনপ্রিয়তা।’

হাইকোর্ট থেকে প্রার্থীতা ফিরে পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আখতারুজ্জামান আখতার। তিনি বলেন, ‘এমপি ফারুক সাহেব কোন পরিবার থেকে উঠে আসা তা আমাদের সকলের জানা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের উপরে অত্যাচার চালিয়েছেন। দলীয় নেতাকর্মীরা তার পাশে নেই। তিনি উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন কমিটিগুলোতে তিনি জামায়াত-বিএনপির লোকদের দিয়ে গঠন করেছেন। যদি নির্দেশ না থাকতো তাহলে অবশ্যই নির্বাচন করতাম না।’

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ