স্বাদু পানিতে গলদা চিংড়ির চাষ ।। সম্ভাবনা যাতে আত্মঘাতী না হয়!

আপডেট: ডিসেম্বর ১২, ২০১৬, ১২:০১ পূর্বাহ্ণ

বড়ই সুখবর। রাজশাহী অঞ্চলে স্বাদু পানিতে গলদা চিংড়ির বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয়েছে। এ উদ্যোগ রাজশাহীর অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দৈনিক সোনার দেশে প্রকাশিত হয়েছে।
প্রতিবেদনের তথ্যে যেমন সম্ভাবনাকে নির্দেশ করা হয়েছে তেমনি এটিকে বিকশিত করার জন্য প্রতিবন্ধকতার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। প্রধান প্রতিবন্ধকতা হল চিংড়ির বাণিজ্যিক চাষের জন্য প্রয়োজনীয় পোনার সঙ্কট রয়েছে। ফলে গলদা চিংড়ির চাষ এগুচ্ছে না। তবে এ সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার জন্য সরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রত্যাশা করা হচ্ছে আসছে বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে। মিলবে গলদা চিংড়ির চাষের প্রয়োজনীয় পোনা। এর জন্য মৎস্য অধিদপ্তর রাজশাহীতে আধুনিক হ্যাচারি নির্মাণ করছে।
নগরীর আমবাগান এলাকার মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারেই স্থাপন করা হচ্ছে গলদা চিংড়ির পোনা উৎপাদনের এই হ্যাচারি। অত্যাধুনিক এ হাচারি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৭৪ কোটি টাকা। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতেই শেষ হবে নির্মাণ কাজ। এরপর শুরু হবে পোনা উৎপাদন। উৎপাদিত মানসম্মত পোনা সরবরাহ করা হবে রাজশাহী ছাড়াও নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোরসহ আশেপাশের জেলাগুলোতে। বর্তমানে নাটোরের মৎস বীজ উৎপাদন খামার থেকেই পোস্ট লার্ভা সংগ্রহ করে কিশোর চিংড়ি বিক্রি করছেন কয়েকজন চাষি। তাদের কাছ থেকে কিশোর চিংড়ি নিয়ে গিয়ে চাষ করছেন চাষিরা। ফলে চাষিদের ব্যয় বেশি হয়। তবে রাজশাহীতে পোনা পেলে চাষিদের ব্যয় যেমন কমবে, তেমনি চাষেও আগ্রহ বাড়বে তাদের।
পুঠিয়া উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা নান্দিপাড়া এলাকায় গলদা পোনা চাষে সম্ভবনা জাগিড়য়ে তুলেছেন।   সোনার দেশে প্রকাশিত তাঁর বক্তব্য মতে তিনি স্বাদু পানিতে গলদা চাষ শুরু করেছেন ২০১০ সালে। সফলতাও পেয়েছেন। ২০১৫ সালে তিনি জাতীয় যুব পুরস্কার জিতেছেন। এ বছর তিনি ৬৫ শতকের একটি পুকুরে গলদা চিংড়ির পোনা চাষ করেছেন। এর রকম সাফল্যগাথা আরো অনেকের রয়েছে।
উন্নয়নের সম্ভাবনা মানেই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান ইত্যাদি। আর সম্ভাবনা যেখানে সেখানে পুঁজি বিনিয়োগ হবে সেটাই স্বাভাবিক, আর পুঁজির ধর্ম শুধু মুনাফা করা। এ ক্ষেত্রে ও গলদা চিঁড়ির পোনা প্রতুল সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে বিনিয়োগ যে উত্তরোত্তর বাড়বে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে একটি দিক খেয়াল রাখতে হবে যে, একটি সম্ভাবনাকে জাগিয়ে তুলতে আমাদের ভূ-বৈচিত্র ও পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছি কি না? এ বিষয়টিকে উৎপাদন প্রক্রিয়ার সাথে না মেলালে হিতে বিপরীত হওয়া অসম্ভব কিছু নয়। আর তা হলে এই সম্ভাবনাও আত্মঘাতী হতে পারে।
সংবাদ মাধ্যমে প্রায়ই খবর বের হয় যে, রাজশাহী অঞ্চলে মৎস্যচাষে ব্যাপক পুঁজি বিনিয়োগ হয়েছে। এর সাফল্যগাথাও আছে, এটিও সম্ভবনাময় ব্যাপার ছিল। কিন্তু এটি উন্নয়নের অন্য সূচকগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে চলেছে। এবং সেটি আইনের লঙ্ঘন করেই তা করা হয়েছে। কৃষি জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে রাজশাহী অঞ্চলে ব্যাপকভাবে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করা হচ্ছে। এই প্রবণতা খাদ্য নিরাপত্তা এবং ভূ-বৈচিত্রের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। চিংড়ি চাষকে উৎসাহিত করতে গিয়ে যেন একই ধরনের আত্মঘাতী প্রবণতার সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক হওয়া বাঞ্ছনীয়।