রবিবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ২২ মাঘ, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
দুর্গাপুর প্রতিনিধি :
দুর্গাপুরের কিশোরীপুর ক্যাম্প থেকে জীবন বাজি রেখে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেও এখন পর্যন্ত স্বীকৃতি পাননি মুক্তিযোদ্ধা দুদু। তার পুরো নাম আশরাফুল হক দুদু। তিনি স্যার হিসেবেই সবার কাছে পরিচিত। এই প্রচারবিমুখ মানুষটি কোনোদিন কারো কাছে কোনো ধরনের সহযোগিতা পাননি।
মুক্তিযোদ্ধা দুদুর দিন পার হয় ঝরে পড়া শিশু-কিশোরদের শিক্ষা দিয়ে। তাদের পড়ানো দায়িত্ব তিনি তুলে নেন আপনার হাতে। ফলে তিনি যে মুক্তিযোদ্ধা একথা তার মনে থাকে না। দেশের প্রতি ভালোবাসা থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেনÑএটাই তার কাছে বড় কথা।
যুদ্ধের আগেই মেট্রিক পাস করেন তিনি। এরপর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করেন। দুর্গাপুরের যুগিশো তোতারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার সময় শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। তিনি ওই অবস্থায় চাকরি ছেড়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ওই সময় দুর্গাপুরের কিশোরীপুর ক্যাম্পের দায়িত্ব পালন করেন। যুদ্ধে এই ক্যাম্প থেকে বেশ কয়েকটি অপারেশনে অংশগ্রহণ করেন তিনি। এই সময় বেশ কয়েকটি পাক আর্মিদের ঘাঁটি দখল করেন তিনি।
দুদু বলেন, প্রথমে কিশোরপুর ক্যাম্প থেকে উপজেলার নামুদরখালী পাক বাহিনীর ক্যাম্পে আক্রমণ করে ওই ঘাঁটি দখল করে নেওয়া হয়। এরপর পাকবাহিনীর পাঁচটি ক্যাম্পে আক্রমণ করে ওই ক্যাম্পগুলোও দখল করে নেন। এসময় তিনি কয়েকবার শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। মরতে মরতে বেঁচে গেছেন কোনোরকমে।
তার আক্ষেপ নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাই নি। পাব বলে আর আশাও করি না। কারণ অনেক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা তৈরি হয়ে গেছে। লিস্টে রয়েছে অনেক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার নাম। এইজন্য তার রয়ে গেছে আক্ষেপ।
মুক্তিযোদ্ধা দুদু বলেন, এ দেশ আবার স্বাধীন করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন বঙ্গবন্ধুর মত শক্তিশালী একজন নেতা। একাজটা করতে পারেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পারেন দেশকে আরেকবার স্বাধীন করতে। তিনি মুক্তিযোদ্ধা হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানান, যেনো অতিদ্রুত প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের বাদ পড়া নাম তালিকাবদ্ধ করে দেশকে কলঙ্কমুক্ত করেন। তিনি এখন কাগজে-কলমে মুক্তিযোদ্ধা নন।
দুদু বলেন, ক্যাম্পের প্রধান দায়িতে থাকার পরও যদি মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় না থাকে তবে এর চেয়ে দুঃখের বিষয় আর কিছুই হতে পারে না। বুকের ভেতরে দুঃখ থাকলেও তিনি কখনো তার নায্য প্রাপ্য পাওয়ার চেষ্টা করেন তিনি।
দুদু বলেন, দীর্ঘ ৪২ বছর পর তিনি ২০১৪ সালে সন্ধান করেন তার প্রাপ্য মুক্তিযোদ্ধার সনদের। তার অধীনস্থ সকল মুক্তিযোদ্ধার সনদ থাকলেও তার নিজের কোনো সনদ নেই। সনদ পাওয়ার জন্যে যোগাযোগ করেও লাভ হয় নি। তিনি কোনো সনদ পান নি। তার অধিনস্থ মুক্তিসেনারাই ক্যাম্প প্রধানের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহের কাজ করছেন। অথচ পাচ্ছেন না সেই স্বীকৃতি।