স্মার্ট নাগরিক গঠনে গ্রন্থাগারের ভূমিকা

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৪, ১২:০৮ পূর্বাহ্ণ

আখতার বানু বীণা:নাগরিক বলতে সাধারণত রাষ্ট্রে ¯থায়ীভাবে বসবাসকারী অধিবাসীকেই বোঝায়। নাগরিক রাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা কাজেই একজন সুনাগরিকের যে বৈশিষ্ট্যগুলো থাকবে সেগুলো হলোÑ রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য। রাষ্ট্রের কল্যাণ চিন্তা করবে, রাষ্ট্র প্রদত্ত সকল সামাজিক ও রাজনৈতিক সুবিধা ভোগ করবে। রাষ্ট্রের সম্পদ নষ্ট করবে না। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ন রাখতে সচেষ্ট থাকবে। দেশের জন্য দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করবে। দেশপ্রেম থাকবে। অর্থাৎ রাষ্ট্রে একজন নাগরিকের রয়েছে যেমনÑ সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার তেমনি রয়েছে রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

আর স্মার্ট শব্দটি ইংরেজি শব্দ। যার আভিধানিক অর্থ হলোÑ দক্ষ, পটু, বুদ্ধিমান। ব্যাপক অর্থে স্মার্ট অর্থ হলো চৌকস। আবার স্মার্ট কথাটির সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তথ্যপ্রযুক্তি, জ্ঞানবিজ্ঞান, গবেষণা ও উদ্ভাবনের বিষয় গুলোর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। কাজেই জ্ঞানÑবিজ্ঞান, বিচারÑবুদ্ধি, চিন্তাÑচেতনা ও বিচক্ষণতার সমাবেশে যে ব্যক্তি তাকেই স্মার্ট ব্যক্তি বলা যেতে পারে।

অর্থাৎ স্মার্ট নাগরিক বলতে একজন শিশু বা ব্যক্তি যখন তার নিজের, পরিবারের, মহল্লার সর্বোপরি দেশের জন্য যা কিছু ভালো প্রযুক্তিনির্ভর, যুগোপযোগী তার সাথে মিশে থেকে আগ্রহ সহকারে কাজ করতে পারেন, সারা বিশ্বের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে ভাবের আদান প্রদান করতে পারেন, সেই সাথে যা কিছু খারাপ তা থেকে বিরত থাকেন তখনই তিনি স্মার্ট নাগরিক হিসাবে গড়ে উঠেন।

স্মার্ট নাগরিক সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেছেনÑ‘যে মানুষ প্রতিকূল ও বৈরি পরিবেশে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারে এবং সকল প্রকার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে যেতে পারে তারাই স্মার্ট নাগরিক।’

আসা যাক, গ্রন্থাগারের কথায়। গ্রন্থাগারের ইংরেজি শব্দ লাইব্রেরি, যার প্রকৃত অর্থ পাঠাগার। সন্ধিবিচ্ছেদ করলে হয় ‘পাঠ +আগার’। যেখানে বইÑপুস্তিকা, ম্যাগাজিন, ডিজিটাল সামগ্রিসহ প্রযুক্তিনির্ভর নানান সামগ্রীর সংগ্রহশালা।

গ্রন্থাগারে সঞ্চিত থাকে বিভিন্ন বিষয়ের, জ্ঞানের, বিভিন্ন ভাবের, চিন্তার অমূল্য সম্পদ। গ্রন্থাগার রচনা করে অতীত বর্তমান ভষ্যিতের সেতুবন্ধন। গ্রন্থাগারে নদীর স্রোতের মত জ্ঞান প্রবাহ প্রবাহিত হয় যুগ যুগান্তর ব্যাপি। গ্রন্থাগার তাই মানুষের নীরব আলাপনের বিদ্যাপিঠ। গ্রন্থাগারে বসে চিন্তাবিদ চিন্তার খোরাক, ভাবুক রসের সন্ধান মেটাতে পারেন। গ্রন্থাগার সব সময় একজন ব্যক্তির জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। যেখানে পাঠক প্রবেশ করতে পারেন সহজেই। পাঠক পাঠ এবং তথ্যের অনুসন্ধান করতে পারেন সারা পৃথিবীব্যাপি।

রবীন্দ্রনাথ তাঁর লেখা লাইব্রেরি প্রবন্ধে বলেছেন-‘লাইব্রেরির মধ্যে আমরা সহস্র পথের চৌরাস্তার উপরে দাঁড়াইয়া থাকি। কোন পথ অনন্ত সমুদ্রে গিয়াছে, কোন পথ উন্নত শিখরে উঠিয়াছে, কোন পথ মানব হৃদয়ের অতল স্পর্শে নামিয়াছে। যে যেদিকে ধাবমান হোক কোথও বাধা পাইবে না। মানুষ আপনার পরিত্রাণকে এতটুকু জায়গার মধ্যে বাঁধিয়া রাখিয়াছে।’
লাইব্রেরি সম্পর্কে হেনরি ওয়ার্ড বলেছেন- ‘একটি লাইব্রেরি বিলাসিতা না বরং জীবনের একটি প্রয়োজনীয় জিনিস।’

রুখ রাইখল বলেছেন-‘একটি লাইব্রেরি হলো এমন একটি জায়গা যেখানে সময় স্থির থাকে। যেখানে মানুষ তাদের নিজস্ব থেকে আলাদা একটি জগতে প্রবেশ করে এবং পরিবর্তিত হয়ে উঠতে পারে।’
কাজেই গ্রন্থাগার সীমাহীন জ্ঞানের ভাণ্ডার। শিক্ষার মন্দিরÑপ্রয়োজন শুধু মন দিয়ে পড়া, জ্ঞান আহরণ করা।

গ্রন্থাগার নবজাগরণের উৎস, কালের নীরব সাক্ষী। তাতে সঞ্চিত আছে কত ভাবুক মণীষীর ভাবÑচিন্তা, দেশ বিদেশের ঘটনা প্রবাহ ইতিহাস যা মানুষকে এগিয়ে নেয় সামনের দিকে। গ্রন্থাগারের মাধ্যমেই পাওয়া যায় পথের নির্দেশনা, জিজ্ঞাসার উত্তর, ইতিহাসের নানামুখি উত্তর যা নবজাগরণকে উদ্দীপিত করে। পরিচালিত করে নতুন সম্ভাবনার দিকে। দেয় নতুন নতুন দিগন্তের ঠিকানা। বর্তমানে অনেক গ্রন্থাগারের সাথে যুক্ত আছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। কাজেই এসবের সমন্বয়ে ব্যক্তি নিজেকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলে।

বিশেষ করে ছাত্রজীবনের কথা বলাই বাহুল্য। ছাত্রজীবনে গ্রন্থাগারের ভূমিকা অপরিসীম। যা তাদেরকে জীবন গড়ার তাগিদ দেয়, প্রেরণা যোগায় দেশ গড়ার ও জাতির উন্নয়ন সাধনের। মানুষের জ্ঞানের অপূর্ণতাকে ভরিয়ে দেয়। কাজেই মানুষের জানার ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করতে গ্রন্থাগারের ভূমিকা অপরিসীম। এছাড়াও বিভিন্ন বয়সের পাঠক পাঠ গ্রহণ করে বলে তাদের মধ্যে গড়ে উঠে আন্তরিকতা, একতা।
গ্রন্থাগারের মাধ্যমে গড়ে উঠে স্মার্ট নাগরিক তথা স্মার্ট জাতি।’

প্রতিটি মানুষের জন্য জ্ঞান চর্চা, অর্জন ও স্বশিক্ষায় যুগোপযোগী শিক্ষিত হওয়ার জন্য অর্থাৎ স্মার্ট নাগরিক হওয়ার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি গ্রন্থাগারে লেখাপড়া আবশ্যক। গ্রন্থাগার এমন একটি জায়গা যেখানে জ্ঞান ভাসতে থাকে। আর পাঠকের কাজ হলো সে জ্ঞান সমুদ্রে নিজেকে ভাসানো। স্মার্ট নাগরিক তৈরির পূর্বশতর্ই হলো স্মার্ট শিক্ষা ও গ্রন্থাগার। যে দেশের নাগরিক যতবেশি স্মার্ট হয় সে দেশ ততো বেশি উন্নত এবং শান্তিপূর্ণ।

একটি স্মার্ট দেশ গড়তে হলে প্রথমেই স্মার্ট নাগরিক গড়তে হবে । ৫ ফেব্রুয়ারি ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস’।
দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য হল-‘গ্রন্থাগারে বই পড়ি, স্মাার্ট বাংলাদেশ গড়ি।’ প্রিয় পাঠক, চলুন এই দিনটিকে কেন্দ্র করে, প্রতিটি দিনই আমরা গ্রন্থাগারমুখি হই। স্মার্ট নাগরিক গড়ার লক্ষ্যেÑ জ্ঞানের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করি, সমৃদ্ধ করি দেশ তথা জাতিকে।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, মাদার বখ্শ্ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ, রাজশাহী

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

Exit mobile version