হত্যার দায় স্বীকার করে লাকির স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী || স্বর্ণের গহনা আত্মসাতেই শিশু মেঘলা ও মালিহাকে হত্যা

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৭, ১২:০৪ পূর্বাহ্ণ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ অফিস



চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার নামোশংকরবাটী ফতেপুর মহল্লায় দুই শিশু হত্যাকা-ের রহস্য উদঘাটিত হয়েছে। মেঘলার গলায় থাকা স্বর্ণের চেইন ও কানের দুল আত্মসাতের জন্যই শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় ওই দুই শিশুকে।
মেঘলা ও মালিহাকে হত্যার দায় স্বীকার করে গতকাল বুধবার বিকেলে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী দিয়েছেন এই ঘটনায় গ্রেফতারকৃত বাড়ির মালিক ইয়াসিন আলীর ছেলের বউ লাকি আক্তার। এছাড়া সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটের একটি টিম গত মঙ্গলবার রাতে ঘটনাস্থলে থেকে আলামত সংগ্রহ করেছে। এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে নিহত দুই শিশুর মরদেহ বুধবার দুপুরে তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। নিহতদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। ওই এলাকায় বিরাজ করছে শোকাবহ পরিবেশ।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রতিবেশি ইয়াসিন আলীর বাড়ির একটি ঘর থেকে থেকে মেঘলা ও মালিহার লাশ উদ্ধার করা হয়। এর দুইদিন আগে থেকে তাদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিলো না। লাশ উদ্ধারের পর ওই বাড়ির মালিক ইয়াসিন আলী, তার স্ত্রী তানজিলা বেগম ও ছেলের বউ লাকি আক্তারকে গ্রেফতার করা হয়। রাতে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে লাকি আক্তার ওই দুই শিশুকে হত্যার কথা স্বীকার করে।
বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় আয়োজিত প্রেস ব্রিফিং-এ চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার টিএম মোজাহিদুল ইসলাম জানান, বিভিন্নজনের কাছ থেকে চড়া সুদে নেয়া লোনের টাকা পরিশোধের জন্য নিহত শিশু মেঘলার গলায় থাকা চেইন ও কানের দুল আত্মসাত করার চিন্তা করে লাকি আক্তার। রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাড়ির পাশে খেলতে থাকা মেঘলা ও মালিহাকে তার বাড়িতে ডেকে নেয় লাকি। এসময় মেঘলার গলা থেকে স্বর্ণের চেইন ও কানের দুল এবং মালিহার কানে থাকা স্বর্ণের দুল খুলে স্থানীয় একটি স্বর্ণের দোকানে ২১ হাজার টাকায় সেগুলো বিক্রি করে লাকি আক্তার। একপর্যায়ে ওই দুই শিশুকে তার ঘরের বঙ্খাটের বক্সে ঢুকিয়ে রাখা হয়। বঙ্খাটের বক্সেই শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যায় শিশু দুইটি। লাশ দুইটিকে অন্যত্র সরাতে বস্তাবন্দি করা হলেও পুলিশ ও এলাকাবাসির তৎপরতার কারণে তা করতে পারে নি লাকি আক্তার। পরে পুলিশের অভিযানে ওই স্বর্ণের দোকান থেকে লাকির বিক্রি করা স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার আরো জানান, এই হত্যাকা-ে নিজের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে বুধবার বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল অধিকারীর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী দিয়েছে লাকি। তবে এখন পর্যন্ত এই ঘটনায় গ্রেফতারকৃত লাকির শ্বশুর উয়াসিন আলী, শাশুড়ি তানজিলা বেগম ও গীতা রানীর কোন সংশ্লিষ্টতা পায় নি পুলিশ।
এদিকে মঙ্গলবার রাতেই রাজশাহী সিআইডির পরিদর্শক এনামের নেতৃত্বে ক্রাইম সিন ইউনিটের একটি টিম ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছেন। বুধবার সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে নিহত দুই শিশুর লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। পরে নিহতদের লাশ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। বুধবার বিকেলে স্থানীয় গোরস্থানে মালিহার লাশ দাফন করা হয়েছে। তবে দুবাইয়ে অবস্থানরত মেঘলার বাবা মিলন রানার আসার অপেক্ষায় মেঘলার লাশ সদর হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে। এদিকে এই ঘটনায় গ্রেফতারকৃত গীতা রানীর বাড়িতে কে বা কারা বুধবার সকালে অগ্নিসংযোগ করে। পরে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ও স্থানীয় লোকজন আগুন নেভায়।
এদিকে নিহত দুই শিশুর পরিবারে চলছে শোকের মাতম। নিহত মেঘলা ও মালিহা দুইজনে ছিল বাবা-মার একমাত্র সন্তান। তাদের স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে সেখানকার পরিবেশ। শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছেন এলাকার সাধারণ মানুষও।
এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম জানান, মেঘলা ও মালিহা নিখোঁজ হওয়ার পর মালিহার বাবা আবদুল মালেক একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। সেই মামলাটিকেই এখন হত্যা মামলায় রুপান্তর করা হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের নামোশংকরবাটী ফতেপুর মহল্লার প্রবাসী মিলন রানার মেয়ে স্থানীয় ছোটমনি বিদ্যা নিকেতনের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া খাতুন মেঘলা ও প্রতিবেশী আবদুল মালেকের মেয়ে একই স্কুলের নার্সারির ছাত্রী মেহজাবিন আক্তার মালিহা গত রোববার সকালে নিখোঁজ হয়। ঘটনার দুইদিন পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রতিবেশী ভ্যানচালক ইয়াসিন আলীর বাড়ি থেকে মেঘলা ও মালিহার বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে স্থানীয় এলাকাবাসী।