হলফনামায় ১০ গুণ সম্পদ দেখালেন চেয়ারম্যান, কমিশনে অভিযোগ

আপডেট: জুলাই ৯, ২০২৪, ৮:৫৫ অপরাহ্ণ

সিংড়া (নাটোর) প্রতিনিধি:


৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন-২০২৪ (প্রথম ধাপে), নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী দেলোয়ার হোসেনের হলফনামায় তথ্য গরমিলের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হলফনামায় তিনি তার পৈত্রিক জমি দশ একর দেখালেও ইউনিয়ন ভূমি অফিসের রেকর্ডে পাওয়া গেছে মাত্র ১.৩১৫ একর। ফলে হলফ নামায় তিনি প্রকৃত জমির চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেশি দেখিয়েছেন।

অনেকের ধারণা, দেলোয়ার হোসেন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর হয়তো দুর্নীতি করে অঢেল স¤পদের মালিক হবেন এমন চিন্তা থেকেই হলফনামায় বেশি জমি দেখিয়েছেন। যাতে মেয়াদ শেষে তিনি হলফনামা সূত্রে বলতে পারেন, নির্বাচন করার সময়ই তার ১০ একর জমি ছিল।
এদিকে হলফনামায় তথ্য গোপন ও দাখিলকৃত মনোনয়ন পত্রে অসঙ্গতি এবং ত্রুটিপূর্ণ থাকার পরেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত ঘোষণা করায় প্রকাশিত গেজেট ও শপথ বাতিলের জন্য আবেদন করেছেন এলাকার ৩ ব্যক্তি। সিংড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন ওই উপজেলার কলম ইউনিয়নের পারসাঐল এলাকার শের আলীর ছেলে।

প্রকাশিত গেজেট ও শপথ বাতিলের আবেদনকারীরা হলেন ওই উপজেলার ছাতারবাড়িয়া এলাকার বাবুল হোসেন, চক দূর্গাপুর এলাকার রাজু আহম্মেদ এবং সিংড়া বাজার এলাকার আক্তার হোসেন। এর আগে গত ২২ এপ্রিল প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবরও আবেদন করেছেন ওই তিন ব্যক্তি।
তারা দাবী করেন, ওই ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে গত ১৭ এপ্রিল দেলোয়ার হোসেন ও লুৎফুল হাবিবের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করে প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রির্টানিং অফিসার। আর গত ৮ মে ওই ভোট গ্রহণের দিন ধার্য ছিল। লুৎফুল হাবিব তার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করলে দেলোয়ার হোসেনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়।

এছাড়া দেলোয়ার হোসেনের দাখিলকৃত হলফনামায় ‘শিক্ষাগত যোগ্যতা’ কলামে স্বশিক্ষিত লিখেন অপরদিকে তার জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যে তার ‘শিক্ষাগত যোগ্যতা’ কলামে “মাধ্যমিক” উল্লেখ রয়েছে। দেলোয়ার হোসেন হলফনামায় স্বাক্ষর করেন ১৩ এপ্রিল। হলফনামা ও মনোনয়নপত্র জমা দেন ১৫ এপ্রিল। অথচ তার জাতীয় পরিচয়পত্রের ইস্যু তারিখ ১৬ এপ্রিল।

অভিযোগ বিষয়ে অনুসন্ধানে কলম ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গেলে জানা যায়, দেলোয়ারের পিতার নামে ২৪৭, ২৫১, ২৫২, ২৫৩ মৌজায় ৫ দাগে মোট জমির পরিমাণ ১.৩১৫ একর। এর মধ্যে পুকুর ৪০ শতক, বাড়ী ২৭ শতক, ভিটা ৩০ শতক ও দুই দাগে ধানী জমি রয়েছে ৯৫ ও ২৫ শতক। ওই জমির বাংলা ১৪২৮ সাল পর্যন্ত খাজনাদী পরিশোধ রয়েছে যার হোল্ডিং নম্বর ৫৯১৮৩৭। সর্বশেষ খাজনাদী পরিশোধ করা হয়েছে ৬ হাজার ৬ শত ২০ টাকা।

ওই জমির বর্তমান মালিকরা হলেন দেলোয়ারের মা আংগুর বালা, ভাই এমদাদুল হক, মজিবর রহমান, দেলোয়ার নিজে ও অপর ভাই জুয়েল হোসেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দেলোয়ার হোসেন তার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ অস্বীকার করলেও জমির বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চাননি।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ শেখ বলেন, তিন অভিযোগদাতা মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের পর তার কাছে আবেদন করেছিলেন। বাছাইয়ের আগে আবেদন করলে তিনি বিষয়গুলো তদন্ত করতে পারতেন। তারা চাইলে উচ্চ আদালতে যেতে পারেন।

নাটোর কোর্টের সরকারী কৌশুলী (জিপি) এডভোকেট মালেক শেখ জানান, কোন প্রার্থী যদি হলফনামায় প্রকৃত স¤পদের চেয়ে বেশি স¤পদ দেখায় তবে তা প্রশ্নের জন্ম দেয়। এটি গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ (আরপিও) অনুযায়ী শুধু অপরাধই নয় বরং তা তদন্তের দাবী রাখে। তদন্তে অভিযোগ সত্য প্রমানীত হলে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির পদও বাতিল হবে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ