বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৯ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
আমানুল হক আমান, বাঘা (রাজশাহী) : বাঘায় বায়ান্ন বছরের হাবলু শেখের বাড়ি ১৩ বার বাড়ি পদ্মা গর্ভে বিলীন হয়েছে। বারবার পদ্মায় বাড়িঘর ও জমি হারিয়ে নিরুপায় হয়ে পড়েছেন হাবলু। অসময়ে পদ্মার ভাঙনের কারণে স্ত্রী, সন্তান, বৃদ্ধ মাকে নিয়ে কয়েক মাস ধরে খোলা আকাশের নিচে বসববাস করেন।
এই পরিস্থিতির মধ্যে স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছে থেকে পাঁচ কাঠা জমি বছরে পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে লিজ নিয়েছেন। অন্যের জমিতে কাজ করে সেখানে দুটি ঘর তুলে কোনো রকম বসবাস করছেন। এরমধ্যে নিরাপদ পানির সংকটে পড়েছেন। ৪শো মিটার দূর থেকে পানি এনে ব্যবহার করতে হচ্ছে। হাবলু শেখ পদ্মার মধ্যে চকরাজাপুর ইউনিয়নের আমবাগান চরের মৃত পরান শেখের ছেলে।
হাবলু শেখের বৃদ্ধ মা ছকিনা বেগম বলেন, স্বামীর ৩০ বিঘা জমি ছিল। ছেলের বয়স এখন ৫২ বছর। এরমধ্যে ১৩ বার বাড়ি পদ্মায় চলে গেছে। বর্তমানে বাড়ি করার মতো কোনো জমি নেই। কোথায় যাবো, কী খাবো, কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। বেশ কিছুদিন খোলা আকাশের নিচে পলিথিন টানিয়ে আমবাগানে ছিলাম। পরে এক ব্যক্তির কাছে থেকে ৫ কাঠা জমি লিজ নিয়ে বাড়ি করা হয়েছে।
হাবলু বলেন, অন্যের জমিতে কাজ করে বর্তমানে পাঁচ সদস্যের সংসার চালায়। আমার যা ছিল সব পদ্মার মধ্যে চলে গেছে। আমি বর্তমানে নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। এ যাবত কেউ কোনো সহযোগিতা করেনি।
হাবলুর স্ত্রী আলিয়া বেগম বলেন, স্বামী মাঠে কাজ করে। আমি মৌসুম ভিত্তিক পেঁয়াজের আল কাটা কাজ করি। স্বামী-স্ত্রী কাজ করে তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। এদিকে নিজের বাড়িতে একটি টিউবয়েল আছে। পানি উঠছে না। বাড়ির দক্ষিণে অনেকটুকু দূরে একটি টিউবওয়েল থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করে পান করি। বর্তমানে পানির সংকটে রয়েছি।
এ বিষয়ে বাঘার চকরাজাপুর ইউপি চেয়ারম্যান ডিএম বাবলু মনোয়ার দেওয়ান বলেন, হাবলু শেখের মতো অনেক পরিবার পদ্মার ভাঙনে নিঃস্ব হয়েছে। আমার জানা মতে কারো ১৫-২০ বার পর্যন্ত পদ্মায় বাড়িঘর বিলীন হয়ে গেছে। যেমন আমি নিজেও সাত বার বাড়ি স্থাস্তান্তর করেছি।
এছাড়া পদ্মার ধার দিয়ে প্রায় ৯০ ভাগ পরিবারের বাড়িতে টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। শত শত পরিবার বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়েছে। আমবাগান চরে একটি সরকারি টিউবয়েল বসানো হয়েছিল। কিছুদিন পর সেটাও অকেজো হয়ে গেছে। তবে সরকারিভাবে শিগগিরই গভীর নলকূপের ব্যবস্থা না করলে পানির জন্য মহাসংকটে পড়বে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তরিকুল ইসলাম বলেন, পদ্মার চরে যারা বাস করেন, তারা সাধারণত ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে। তবে বিশুদ্ধ পানির জন্য সরকারিভাবে সাবমার্সেবুল হোক আর গভীর নলকুপ হোক বরাদ্দ এলে ব্যবস্থা করা হবে।