শনিবার, ১০ জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ২৭ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক
জন্ম ক্রাইস্টচার্চে, থাকেন অকল্যান্ডে। তবে অবকাশ পেলেই কোরি অ্যান্ডারসন ছুটে আসেন মাউন্ট মঙ্গানুইতে। এখানেই সাগরপাড়ে কিনেছেন সুদৃশ্য এক বাড়ি। তবে বে ওভালের সঙ্গে খুব একটা সখ্য ছিল না। এই মাঠে ছিল না বলার মত রান। এবার হয়ে গেল সেটিও। বাড়ির পাশেই ঝড় তুললেন অ্যান্ডারসন। উড়ে গেল বাংলাদেশ।
টস থেকে শুরু করে প্রায় সব কিছুই অনুসরণ করল আগের ম্যাচের চিত্রনাট্য। আগে বোলিং নিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা, শুরুটা হলো দারুণ। চল্লিশ পেরিয়েই নিউজিল্যান্ডের নেই ৩ উইকেট। চতুর্থ উইকেটে শতরানের জুটি। সেদিন তা-ব চালিয়েছিলেন কলিন মানরো, এদিন অ্যান্ডারসন। রান তাড়ায় বাংলাদেশের সম্ভাবনা জাগানো। শেষ পর্যন্ত হার।
পরাজয়ের ব্যবধানটাই শুধু একটু কমল। নিউজিল্যান্ড জিতেছে ২৭ রানে। তবে হারের ধরন একই। ম্যাচ শেষের বেশ আগেই শেষ উত্তেজনা। ১৯৫ রান তাড়ায় বাংলাদেশ যেতে পারে ১৬৭ পর্যন্ত।
ওয়ানডের মতো টি-টেয়েন্টি সিরিজেও সব ম্যাচ জিতল নিউ জিল্যান্ড। বাংলাদেশ হারল সফরে টানা ৬ ম্যাচ।
আগের ম্যাচে ৪৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়েছিল নিউজিল্যান্ড, এদিন ৪১ রানে। চতুর্থ উইকেটে সেদিনের জুটি ছিল ১২৩, এবার ১২৪। নিউজিল্যান্ডের রানও প্রায় একই। সেদিন ১৯৫ রানের পর এ দিন ৪ উইকেটে ১৯৪।
মানরোর মত অবশ্য সেঞ্চুরি করতে পারেন নি অ্যান্ডারসন। তবে ব্যাটিং ছিল মানরোর চেয়েও খুনে। বলা ভালো, সেঞ্চুরির সময়টা পাননি অ্যান্ডারসন। নেমেছিলেন পাঁচ নম্বরে, রেকর্ড ১০ ছক্কায় অপরাজিত ৪১ বলে ৯৪ রানে। মানরোকে সঙ্গ দিয়েছিলেন টম ব্রুস। অ্যান্ডারসন পাশে পেলেন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের ভরসা।
চোটের কারণে লুক রনকি না থাকায় উইলিয়ামসনের সঙ্গে ইনিংস শুরু করেন জেমস নিশাম। শুরুটা খারাপ করেননি দুজন। তবে ৩৪ রানের উদ্বোধনী জুটির পর রুবেলের জোড়া আঘাত। দারুণ এক স্লোয়ারে নিশামকে ফেরানোর পর অফ কাটারে ফেরালেন মানরোকে। সিরিজের প্রথম ও শেষ ম্যাচে শূন্য রান মানরোর, মাঝেরটিতে সেঞ্চুরি!
মোসাদ্দেক আক্রমণে এসেই তুলে নিলেন টম ব্রুসকে। নিউজিল্যান্ড তখন ৩ উইকেটে ৪১। আগের ম্যাচের মতোই ধীরে ধীরে গড়ে ওঠল একটা জুটি, সময়ের সঙ্গে যে জুটিতে উঠল টর্নোডো। এক সময় ৩২ বলে ২২ রান ছিল উইলিয়ামসনের। সেখান থেকে ৪৪ বলে করেছেন অর্ধশতক। ৫৩ রানে সহজ ক্যাচ দিয়েও বেঁচে গেলেন সাকিব হাতছাড়া করায়; ৫৮ রানে সহজ ক্যাচ ছাড়লেন তামিম। অ্যান্ডারসনের তখন রুদ্রমূর্তি। প্রথম বাউন্ডারির আগে রান ছিল তার ১৩ বলে ১২। মাশরাফিকে ছক্কা মেরে ডানা মেলে দিলেন। উড়তে থাকলেন উঁচু থেকে আরও উঁচুতে। দারুণ টাইমিং আর পেশিশক্তির প্রদর্শনীতে অ্যান্ডারসন খেলেছেন দারুণ সব শট। বল উড়েছে মাঠের নানা প্রান্তে। ২৭ বলে ছুঁয়েছিলেন পঞ্চাশ, ঝড়ের তীব্রতা পরে বেড়েছে আরও। সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছেন মাশরাফিকে, বাংলাদেশ অধিনায়কের ৯ বলে নিয়েছেন ২৯। শেষ পর্যন্ত ৫৭ বলে ৬০ করে ফিরেছেন উইলিয়ামসন। শেষ ওভারে দুটি ছক্কাসহ অ্যান্ডারসন শেষ করেছেন ১০ ছক্কায় ৯৪ রানে। নিউজিল্যান্ডের আগের রেকর্ড ছিল ব্রেন্ডন ম্যাককালামের ৮ ছক্কা। প্রথম ১০ ওভারে নিউজিল্যান্ডে রান ছিল ৩ উইকেটে ৫৫। শেষ ১০ ওভারে আসে ১৩৯ রান! বাংলাদেশের ইনিংসে ছিল উল্টো গতি। শুরুটা ছিল দারুণ। ১৫ বলে ২৪ করে তামিম ফিরে যান। তবে সৌম্য সরকারের ব্যাটে ঠিকই পথে ছিল দল। ফিল্ডিংয়ের সময় চোট পেয়ে মাঠ ছাড়া ইমরুল কায়েসের জায়গায় ইনিংস শুরু করেন সৌম্য। আগের ম্যাচের মতোই এদিন তার ব্যাটে ছিল পুরোনো ছন্দ। ৮ ওভারে দলের রান ৮০। কিন্তু ইশ সোধিকে উড়িযে মারতে গিয়ে সৌম্যর বিদায়েই পথ হারানোর শুরু। বাজে শটে ফেরেন সাব্বির। সাকিব উইকেটে থেকেও পারেননি ঝড় তুলতে। নামের পাশে ৪১ রান বলবে খারাপ খেলেন নি। তবে ৩৪ বল খেলায় পরিস্থিতি দাবি করছিল দেড়শ স্ট্রাইক রেটের ইনিংস, ১২০ নয়! রান-বলের টানাপোড়েন মেলাতে পারেন নি অন্য কেউ। শেষ পর্যন্ত ইনিংস শেষের বেশ আগেই পরিষ্কার হয়ে যায় ম্যাচের ভাগ্য। নিউজিল্যান্ড সফরে আরো একটি ম্যাচ, আরো একটি হার। টেস্ট সিরিজের আগে আত্মবিশ্বাস একটু বাড়ানোর শেষ সুযোগটিও শেষ। অপেক্ষায় সবুজ উইকেট ও আরো কঠিন চ্যালেঞ্জ!
সংক্ষিপ্ত স্কোর
নিউজিল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৯৪/৪ (উইলিয়ামসন ৬০, নিশাম ১৫, মানরো ০, ব্রুস ৫, অ্যান্ডারসন ৯৪*, গ্র্যান্ডহোম ৪*; মাশরাফি ০/৪২, তাসকিন ০/৩৭, রুবেল ৩/৩১, সাকিব ০/২২, মোসাদ্দেক ১/২৭, সৌম্য ০/২১)
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৬৭/৬ (তামিম ২৪, সৌম্য ৪২, সাব্বির ১৮, সাকিব ৪১, মাহমুদউল্লাহ ১৮, মোসাদ্দেক ১২, নুরুল ৭*, রুবেল ১*; স্যান্টনার ১/৩৭, হুইলার ০/২৯, বোল্ট ২/৪৮, নিশাম ০/১৭, সোধি ২/২২, ডি গ্র্যান্ডহোম ০/৪, উইলিয়ামসন ১/৯)
ফল: নিউজিল্যান্ড ২৭ রানে জয়ী
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজ নিউজিল্যান্ড ৩-০তে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: কোরি অ্যান্ডারসন।