হাসান স্যারের মৃত্যুতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৩, ১২:৪৯ পূর্বাহ্ণ

তসিকুল ইসলাম রাজা:


বিশ্বনন্দিত কথা সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক এবং তাঁর সাহিত্যকর্ম ও জীবন দর্শন কখনোই মুছিবার বা হারিয়ে যাবার নয়? তাঁর নিজস্ব সৃজনশীল ও মননধর্মী কাজের মধ্য দিয়েই তিনি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অমরত্ব লাভ করবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। বাংলা সাহিত্যের প্রতিটি শাখায় তাঁর অবাধ বিচরণ অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। তবে উপন্যাস ও ছোট গল্প এ দু’শাখাতেই তাঁর কলম শক্তির পরিচয় পাওয়া যায়। এ ছাড়াও তাঁর প্রবন্ধসমূহ, ব্যক্তিগত রচনা, কিশোর উপন্যাস, নাটক, অনুবাদ কর্ম ও স্মৃতিচারণমূলক রচনাগুলো পাঠক সমাজ ও বিদগ্ধ প-িত সমাজেও সমানভাবে সমাদৃত হয়েছে। মোটকথা, উভয় বাংলা এবং বাংলা ভাষাভাষি মানুষের কছে তাঁর সাহিত্য কর্ম ও জীবনদর্শন সাদরে গৃহীত হবে। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের জীবন তাঁর গল্পে অত্যন্ত সার্থকভাবে রূপায়িত হয়েছে। একেবারে সমাজের নিচু স্তরের মানুষের জীবনকথন রচনায় তিনি কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গল্পকার হিসেবে তাঁর খ্যাতি ও সুনামের কথা সর্বজনবিদিত।

আনন্দের ও গৌরবের বিষয় হলো- তিনি রাজশাহীতে বসেই একটি অসাধারণ গল্প রচনা করেছেন এবং সেই ‘শকুন’ নামক প্রথম গল্প রচনার মধ্য দিয়েই তিনি সর্বমহলে খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর গল্পগ্রন্থ হলো- ১. সমুদ্রের স্বপ্ন; শীতের অরণ্য (১৯৬৪), ২. ‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’ (১৯৬৭) ৩. ‘জীবন ঘষে আগুন’ (১৯৭৩), ৪. ‘নামহীন গোত্রহীন’ (১৯৭৫), ৫. ‘পাতালে হাসপাতালে’ (১৯৮১), ৬. ‘আমরা অপেক্ষা করছি’ (১৯৮৮), ৭. ‘রোদে যাবো’ (১৯৯৫), ৮. ‘মা মেয়ের সংসার’ (১৯৯৭), ৯. ‘নির্বাচিত গল্প’ (১৯৮৭), ১০. ‘রাঢ়বঙ্গের গল্প’ ইত্যাদি।

হাসান আজিজুল হক উপন্যাস রচনার ক্ষেত্রেও কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। বিশেষত ‘আগুন পাখি’ (২০০৬) উপন্যাস রচনায় তিনি বাংলা উপন্যাস রচনায় নতুন মাত্রা যুক্ত করেছেন। এজন্য তিনি দেশ-বিদেশে যেমন খ্যাতি লাভ করেছেন, তেমনি পুরস্কৃত হয়েছেন। এ ছাড়াও তাঁর উপন্যাস ‘শিউলি’ (২০০৬), ‘বৃত্তায়ন’ (১৯৯১) এবং ‘লাল খোঁজ আমি’ কিশোর উপন্যাস সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। তাঁর সংগ্রামী জীবন ও সাধনার জন্য এবং সৃজনশীল কর্মের জন্য পাকিস্তান আমলে তিনি আদমজী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৭), ‘বাংলা একাডেমী পুরস্কার’ (১৯৭০) লাভের গৌরব অর্জন করেছেন। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর দেশ-বিদেশের অনেক পুরস্কার লাভ করেছেন। তিনি বাংলাদেশ সরকারের ‘একুশে পদক’ (১৯৯৯) ও ‘স্বাধীনতা পদক ’ (২০১৯) লাভ করেছেন।
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শক্তিশালী কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হক ১৯৩৯ সালে ২ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যবগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সেখানে তাঁর নাড়ি পোঁতা রয়েছে। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের কারণে পরিবারের সঙ্গে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের খুলনায় আসেন। তারপর তিনি রাজশাহী কলেজ থেকে ১৯৯৮ সালে দর্শন শাস্ত্রে অনার্স এবং ১৯৬০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হতে দর্শন শাস্ত্রে এম.এ পাস করেন। তিনি তাঁর কর্মজীবনে সর্বপ্রথম রাজশাহী সিটি কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তী পর্যায়ে তিনি সিরাজগঞ্জ কলেজ, খুলনা বিএল কলেজে অধ্যাপনা করেন। দেশ স্বাধীনের পর তিনি ১৯৭৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘দর্শন’ বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন এবং ২০০৪ সালে অবসর গ্রহণ করেন।

তাঁর অবসর জীবন বলে কিছুই ছিল না। সর্বদাই লেখালেখি, বইপ্রকাশ এবং সাহিত্য সংস্কৃতিমূলক বিভিন্ন কর্মে আত্মনিয়োগ করেন। মৌলবাদী ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে তাঁর আপসহীন কলম এবং বক্তৃতা ও বিবৃতিতে তিনি ছিলেন সর্বদাই সোচ্চার। আমরা রাজশাহী লেখক পরিষদ রবিবাসরীয় সাহিত্য সংসদ, কবিকুঞ্জ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক হিসেবে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। আমি তাঁর মতো এতো সাহসী মানুষ খুব বেশি দেখিনি। তাঁর প্রতিটি কর্মই ছিল দেশ ও দেশের মানুষের জন্য। তাঁর মৃত্যু (১৫ নভেম্বর ২০২১) আমাদের জীবনে খুবই ক্ষতি হলো। আমরা বিন¤্রচিত্তে তাঁর অমর স্মৃতির প্রতি বারবার প্রণতি জানাই।

০২.
হাসান আজিজুল হক স্যার ৮৩ বছর বয়সে ওপারে চলে গেলেন ঠিকই। কিন্তু তাঁর সাহিত্যকর্ম ও সাধনার মধ্যেই তিনি বাঙালি জনজীবনে বেঁচে থাকবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। তিনি ছিলেন আমাদের জন্য এক পরম আশ্রয়দাতা, একজন বিশাল বটবৃক্ষের মতোই। যে কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি সত্য উচ্চারণে কখনোই পিছপা হননি। তাঁর অসাধারণ অবদানের কথা আমরা প্রতিনিয়তই স্মরণ করবো। সেই প্রেক্ষিতেই আমরা অত্যন্ত দৃঢ়কন্ঠে বলতে চাই তিনি ‘আর নেই’ বলবো না। তিনি আমাদের মধ্যে সর্বদাই আছেন এবং থাকবেন। রাজশাহীতে আমরা এখন একেবারেই অভিভাবকশূন্য হয়ে গেলাম। তাঁকে নিয়ে আমরা গৌরব করতাম। রাজশাহীতে একজন আন্তর্জাতিক মানের এবং বড় মাপের ও বড় মনের একজন আকাশ ছোঁয়া মানুষ ছিলেন তিনি। তাঁর মতো এমন মহৎপ্রাণ মানুষ এখন আর কোথায় পাবো আমরা?

তিনি রাজশাহী কলেজে ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছেন। একজন মেধাবী ও ছাত্র-শিক্ষক হিসেবে তিনি কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। রাজশাহীর এই পবিত্র মাটি ও মানুষকে তিনি অত্যন্ত ভালবাসতেন। তাঁর জীবন ও যৌবনের মোক্ষম সময় কেটেছে রাজশাহী শহরে। রাজশাহীর সর্বস্তরের মেধাবী মানুষগুলোর সঙ্গে তাঁর একটি নিবিড় সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। এ সম্পর্ক যেন নাড়ির সম্পর্কের মতোই সদৃঢ় পোক্ত এবং অচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ। তাঁর ব্যক্তিগত আচার আচরণ, কথাবার্তা, চলা ফেরা প্রতিটি কাজেই তিনি ছিলেন অত্যন্ত দক্ষ ও সুবিবেচক। তাঁর আন্তরিকতাও ছিল মনের গভীরে দাগ কাটার মতোই- একটি গুরুত্ববহ বিষয়। জীবন চলার পথে বামদর্শনে বিশ্বাসী একজন প্রগতিশীল হীরের টুকরোর মতো মানুষ সবার সঙ্গেই মধুর সম্পর্ক রাখতেন। একবার তাঁর সঙ্গে যে মানুষের কথা হয়েছে বা দেখা হয়েছে, সে কখনোই স্যারের কথা ভুলে যাবেন না।

এ কথা সর্বজন বিদিত যে, দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রেও তাঁর সঙ্গে কারো কোনো তুলনা হবে না। তাঁর যুক্তিনিষ্ঠ কথা সবার জন্যই কল্যাণকর এবং সদূর প্রসারী সত্য ও সুন্দর পথের সন্ধান দেয়। তাঁর বয়সে বড় যাঁরা তাঁদের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধাবোধ ও ভালবাসা অবশ্যই প্রশংসার যোগ্য। আবার ছোটদের প্রতি তাঁর প্রীতি ও ভালবাসার কথাও কখনোই ভুলে যাবার মতো নয়Ñ আর এজন্যই সর্বমহলে তাঁর জনপ্রিয়তা ও আকাশচুম্বী একজন লেখক হিসেবে জাতির প্রতি তাঁর কমিটমেন্ট সর্বদাই তিনি পালন করেছেন। সে সঙ্গে একজন নিয়ম-কানুন ও বিধিবিধাননিষ্ঠ উদার ও মুক্ত মনের মানুষ হিসেবেও তাঁর কোনো তুলনা নেই। লোভ-লালসার বশবর্তী হয়ে তিনি কখনোই কারো সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন নি। এতো বড় বা উঁচুদরের একজন সাহিত্য-সাধক হয়েও তিনি কখনোই কারো সঙ্গে খারাপ আচরণ বা অহঙ্কার প্রদর্শন করেন নি। আর এসব নানাবিধ কারণেই তিনি তাঁর ব্যক্তিগত ও সাহিত্য-সংস্কৃতির সাধক হিসেবে খ্যাতির শীর্ষে আরোহণ করেছেন। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে রাজশাহী শহর অনেকটা মফস্বল শহরের মতোই ছিল। সেই শহরের বর্ণনা তিনি তাঁর ‘উত্তরের উপেক্ষিতা’ স্মৃতি চারণমূলক রচনায় চমৎকারভাবে উপস্থাপন করেছেন।

‘আগুন পাখি’ তাঁর সাড়া জাগানো উপন্যাস রচনার জন্য কলকাতা থেকে তিনি পুরস্কৃত হন। তিনি সামাজিক পারিবারিক ও জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই সক্রিয় ও জীবননিষ্ঠ ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে আমাদের অনেক ক্ষতি হলো। তাঁকে কোনোভাবেই আমরা ভুলে যেতে পারি না। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাঁর কাছে অশেষ ঋণে আবদ্ধ। ১৯৭৩ সালে দ্বিতীয়বার যখন তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে যোগদান করেন বলা যায়, সে সময় থেকেই তাঁর সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ শুরু হয়। আড্ডাপ্রিয় মানুষ হিসেবে তিনি তাঁর বাড়িতে, ‘দর্শন’ বিভাগে তাঁর কক্ষে, জুবেরি ভবনে আবার বাংলাদেশ বেতার, রাজশাহী কেন্দ্রে একেবারে মাতিয়ে রাখতেন তিনি এককভাবেই। তিনি হাস্যরস ও কৌতুক মিশ্রিত বাক্যবান দ্বারা সবার কাছেই বড় আপনজন ছিলেন। তাঁর কথা বলার স্টাইল ছিল অনন্য ও অসাধারণ।

বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী হাসান স্যারকে আমরা রাজশাহীর মানুষ হিসেবেই মনে করি। রাজশাহী মহানগরীতে প্রগতিশীল ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী এমন কোনো শিক্ষালয়, সাহিত্য-সংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান নেই যেখানে তাঁর উপস্থিতি বা পদধুলি পড়েনি। সবাইকে তিনি হাসিমুখে সাদরে বরণ করতেন। রাজশাহীতে কারো সঙ্গেই তাঁর তুলনা চলে না। তাঁর সান্নিধ্যসুখ আজো আমার জীবনে অত্যন্ত আপনজন হিসেবে স্মরণীয় সঞ্চয় হয়ে রয়েছে। আমার সম্পর্কে তাঁর একটি অসাধারণ মন্তব্য আমাকে সর্বদাই আলোড়িত করে। মন্তব্যটি হলো ‘রাজশাহীতে রাজার মতো নিবেদিতপ্রাণ এমন সাহিত্য-সংস্কৃতি সংগঠক পূর্বেও ছিল না, এখনও নেই এবং ভবিষ্যতেও হবে না।’ আমার প্রতি স্যারের এতো স্নেহ-ভালোবাসা আমি কোথায় রাখবো ! মাথায় করে রাখা ছাড়াতো অন্য কোনো বিকল্প নেই।

হাসান স্যারের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (পশ্চিম) আবাসিক এলাকায় ২য় তলায় পুকুরের পাশের বাসায় আমি নিয়মিত যেতাম। ভাবীর হাতের চমৎকার চা ও নাস্তা খেতাম একেবারে তৃপ্তির সঙ্গে। আমার ছাত্রজীবন তখন শেষ হবার পথে। সে সময় আমি রাজশাহীর ফায়ার ব্রিগেড মোড় হতে পদ্মা নদীর দিকে যাবার পথে বামদিকে ‘আখতারি ম্যানসন’ নামে একটি মেসে একটি ঘরে একাই থাকতাম। সে সময় আমি প্রায় মাস খানেক রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। মেসের প্রীতিভাজন ছেলেরা তখন নিয়মিত পালা করে সকালের নাস্তা, দুপুর ও রাতের খাবার পাঠাতো। সবার কথা এখন আর মনে নেই। তার এই তো বছর দু’য়েক পূর্বে হঠাৎ করেই ৪৫ বছর পূর্বের সেই ঘটনার এক রাজসাক্ষী বগুড়া জেলা জজ হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত একজন মহৎপ্রাণ মানুষের সঙ্গে নতুন করে পরিচয় হয়। তার নাম মেসবাহ। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার স্বনামখ্যাত একটি গ্রাম বালিয়াডাঙ্গায় তার জন্ম এবং আমার এক বন্ধুর খালাতো ভাই। তাদের কাছে কৃতজ্ঞ আমি। তখন আমি প্রায় তিনমাস ধরে জ্বরে ভুগছি। কিছুতেই জ্বর ছাড়ছে না। আমার নাকি হার্ট বড় হয়েছে- এই মর্মে ডা. সাহেব গাদাগাদা ওষুধ দিচ্ছেন কিন্তু আমি কোনোভাবেই সুস্থ হচ্ছি না। সে সময় আমার প্রাণপ্রিয় শিক্ষক প্রফেসর ড. কাজী আবদুল মান্নান স্যার তাঁর নিজের গাড়ি চালিয়ে আমার এই মেসে আমাকে দেখতে এসেছেন। এ ছাড়াও আমার অনেক শিক্ষক ও বন্ধু বান্ধবীরাও দেখতে এসেছেন। সে অনেক কথা। অনেক ঘটনা এখন দাবিয়ে রাখাটাই কল্যাণকর বলে আমি মনে করি।

সবচেয়ে মজার বিষয় হলো-এই অসুস্থ একনজর ছাত্রকে দেখার জন্য কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হক স্যার এবং কবি জুলফিকার মতিন স্যার আমার এই বিখ্যাত মেসে এসে হাজির। আমার কী সৌভাগ্য! মেেেসর ছেলেদের ডেকে বললাম, আমার দু’জন শিক্ষক শুধুই শিক্ষক নন কবি ও কথাশিল্পী হিসেবে তাঁরা দেশনন্দিত মানুষ। তোমরা তাড়াতাড়ি একটু চা ও নাস্তার ব্যবস্থা কর। আমি এতটাই দুর্বল হয়েছিলাম যে, বিছানা থেকে একা একা উঠতে পারছি না। সে সময় তারা নাস্তার ব্যবস্থা করেছে। তখন রাজশাহী শহরে বোধ করি সর্বপ্রথম পেপসি জাতীয় পানীয় জিনিস চলে এসেছে। তারা নাস্তার সঙ্গে পেপসি দিয়েছে। স্যারদ্বয় নাস্তা খেতে শুরু করেছেন। এমন সময় আমার গ্রাম থেকে ৪/৫ জন গরিব মানুষ চিকিৎসার জন্য এসেছেন। আমি তাদের নাস্তা খেতে দিতে পারিনি। তবে হাতে ক’টা টাকা গুজে দিয়েছিলাম এবং মোড়ের হোটেলে চাচার দোকানে খাবার দেবার জন্য একটি চিরকুট দিয়েছিলাম। তারা গ্রামে ফিরে গিয়ে আমার বিরুদ্ধে একটি মারাত্মক অভিযোগ দাঁড় করিয়েছেন। অভিযোগ হলো- আমরা রাজা ভাইকে খুব ভাল মানুষ বলেই ভাবতাম। কিন্তু একী দেখে এলাম! এই ছেলেটিও মদ ধরেছে। আমি কয়েকদিন পর যখন এ বিষয়টি জানলাম, তখন মনে হলো আমি যেন দশ তলা ভবনের মাথা থেকে একটি লাফ দিয়ে হাত-পা ভেঙ্গে ফেলেছি। তারপর আমি হাসান স্যারকে ও এঘটনার বিস্তারিত বিবরণ জানালাম। স্যারও একথা শুনে হাসতে হাসতে ফেটে পড়লেন। এ ঘটনার কথা স্যার অনেকের কাছেই বলেছেন।