হাড়কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত জনজীবন || মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫.১

আপডেট: জানুয়ারি ১৫, ২০১৭, ১২:০৭ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক



রাজশাহীতে মাঘ মাসের তীব্র শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। প্রতিদিনই কমছে তাপমাত্রা। ঘন কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে চারদিক। তাপমাত্রা কমার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে দুর্ভোগ। বাড়ছে শীতকালীন রোগের উপসর্গ। প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রের অভাবে হাড় কাঁপানো এই ঠান্ডায় ছিন্নমূল মানুষরা হয়ে পড়েছে অসহায়। কাজ করতে পারছে না শ্রমজীবী মানুষরা।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম জানান, গতকাল শনিবার রাজশাহীতে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা পরিমাপ করা হয় ৫ দশমিক এক ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে গত শুক্রবার তাপমাত্রা পরিমাপ করা হয় ৯ দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আশরাফুল ইসলাম জানান, সর্বশেষ ২০১৩ সালে রাজশাহীতে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা পরিমাপ করা হয় ৪ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে ২০১১ সালে তাপমাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একবিংশ শতাব্দীর মধ্যে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ২০০৩ সালে। ওই সালে জানুয়ারিতে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা পরিমাপ করা হয় ৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শীতের তীব্রতার কারণে নগরীর দরিদ্র, ছিন্নমূল ও ভাসমান মানুষদের দুর্ভোগ বেড়েছে। প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র ও পুষ্টিকর খাদ্যের অভাবে অসহায়ভাবে দিনানিপাত করছেন তারা। বিশেষ করে দরিদ্র-অসহায় শিশু ও বৃদ্ধরা তীব্র শীতে দুর্ভোগ পোহাতে বাধ্য হচ্ছে। শীতের এই তীব্রতা থেকে বাঁচতে গতকাল অনেককেই আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতে দেখা গেছে।
নগরীর ভদ্রা বস্তিতে বসবাস করেন ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ মোখলেসুর রহমান। তিনি বলেন, শীতে মইরা যাচ্ছি। বাড়ির থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। শীতের কাপড়ও নাই। কেউ শীতবস্ত্রও দেয়নি। এইরকম শীতে বাঁচব কি না জানিনা।
আলুপট্টির মোড়ে প্রতিদিন রিকশা নিয়ে হাজির থাকেন পঁয়ষট্টি বছরের বৃদ্ধ ইয়াকুব আলী। তার মুখমন্ডল ভর্তি দাঁড়িগোঁফ। চোখেমুখে দিশেহারা ভাব। সকাল ৯টায় আলুপট্টির মোড়ে রিকশা নিয়ে শীতে শীতে কাঁপতে কাঁপতে বসে আছে। এই শীতেও বের হয়েছেন জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, কাজ না করলে খাব কি। যত কষ্টই হোক কাজ তো করতে হবে।
নগরীর রেলস্টেশন এলাকায় পলিথিন কুড়ানোর কাজ করে দশ বছরের শিশু কাদের। সে মায়ের সঙ্গে রেলস্টেশন এলাকার বস্তিতে থাকে। কাদের বলে, ছোট ঘরে আমি আর মা থাকি। বেড়ার ঘর। বাতাসও ঢুকে। তাই কাজে বের হয়ে গেছি। পলিথিন কুড়িয়ে বিক্রি করলে তবু আশি/নব্বই টাকা পাওয়া যাবে।
এদিকে হাসপাতালগুলোতেও খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, শীতের তীব্রতায় ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিসসহ শীতকালীন রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। বিশেষ করে শিশুরা এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি।