বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২ শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক :
মানুষ প্রায়শই বিশ্বের সবচেয়ে দামি জিনিস যেমন জুতা, ঘড়ি এবং লক্ষ লক্ষ টাকার বিলাসবহুল জিনিসপত্র সমন্ধে চর্চা করে। কিন্তু আপনি কি জানেন, অতি মূল্যের জন্য একটি শাড়ি বিশ্ব রেকর্ড করেছে? সেই শাড়ির নাম বিবাহ পট্টু। এই শাড়ি ভারতেই তৈরি করা হয়েছিল।
এই শাড়ি তৈরিতে লেগেছে কয়েক ডজন কারিগরের হাজার হাজার ঘন্টার কঠোর পরিশ্রম। বিবাহ পট্টু শাড়ি, খাঁটি সোনা, রূপো-সহ নানা মূল্যবান ধাতু দিয়ে সজ্জিত। ফলে এই শাড়ি তৈরিতে খরচ হয়েছে ৪০ লক্ষ টাকা। ২০১৮ সালে এই মূল্যবান শাড়ি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে ঠাঁই পেয়েছে।
বিবাহ পট্টু শাড়ি কোথায় তৈরি হয়েছিল?
বিবাহ পট্টু শাড়িটি খাঁটি সিল্ক দিয়ে চেন্নাইয়ের কাঞ্চিপুরমে তৈরি করা হয়েছিল। কাঞ্চিপুরম সিল্ক শাড়ির জন্য বিখ্যাত। ২০০৮ সালে, এই সুন্দর শাড়িটি তৈরি হয়, যা ২০০৯ সালে ৩৯,৩১,৬২৭ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। শাড়িটি সোনা ও রূপো দিয়ে তৈরি হলেও তার থেকে দামি বেশ কিছি জিনিস সেটিকে অনন্য করে তুলেছে।
বিবাহ পাট্টু শাড়িটি কেন এক বিশেষ?
এই শাড়িটিতে বিখ্যাত ভারতীয় চিত্রশিল্পী রাজা রবি বর্মার শিল্পকর্ম রয়েছে। ছবিগুলি প্রথমে মেশিন প্রিন্টের মতো দেখায়, কিন্তু আসলে এগুলি দক্ষ শিল্পীদের হাতে বোনা। শাড়ির পল্লু-তে (কাঁধের উপর দিয়ে ঝুলানো শেষ অংশ) ফুটিয়ে তোলা হয় ১৮৮৯ সালে তৈরি রবি বর্মার চিত্রকর্ম “গ্যালাক্সি অফ মিউজিশিয়ানস” -এর দৃশ্য। পল্লু-তে নজর কাড়ছে ১১ জন নারী বসে বাদ্যযন্ত্র বাজাচ্ছেন।
শিল্প, ঐতিহ্য এবং কারুশিল্পের এই মিশ্রণই বিবাহ পাট্টু শাড়িটিকে বিশ্বের সবচেয়ে দামি শাড়িতে পরিণত করেছে।
এই শাড়িটি তৈরি করতে ৩৬ জন দক্ষ তাঁতি মোট ৪,৭৬০ ঘন্টা সময় নিয়েছিলেন। এত পরিশ্রমের পরেও, এটি সম্পূর্ণরূপে সম্পন্ন করতে দেড় বছরেরও বেশি সময় লেগেছে। ১৬টি রঙ এবং ৬৪টি বিভিন্ন শেডের সুতো ব্যবহার করে শাড়িটি বোনা হয়েছিল।
বিবাহ পাট্টু শাড়িটি এত অনন্য কেন?
এই শাড়িটির ওজন প্রায় ৮ কিলোগ্রাম। কারণ এটি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছে সমৃদ্ধ উপকরণ। এতে রয়েছে:
৫৯.৭ গ্রাম সোনা, ৩.৯১৩ ক্যারেট হীওে, ১২০ মিলিগ্রাম প্ল্যাটিনাম, ৫ গ্রাম রূপো, ২.৯৮৫ ক্যারেট রুবি, ৫৫ সেন্ট পান্না, পোখরাজ এবং আরও রত্ন।
যদিও এটি ভারী, তবে অন্য যেকোনও শাড়ির মতো সহজেই আঁচড়ানো এবং পরা যায়।
বিবাহ পট্টি শাড়ি কে কিনেছিলেন?
বেঙ্গালুরুর একজন ব্যবসায়ী তাঁর স্ত্রীর জন্য দশম বিবাহ বার্ষিকীর উপহার হিসেবে এই শাড়িটি কিনেছিলেন। ২০০৯ সালে, কুয়েতের একজন ব্যবসায়ীও একই রকমের একটি কাস্টমাইজ শাড়ি কিনেছিলেন।
বিবাহ পাট্টু শাড়ি: ভারতীয় ঐতিহ্যের একটি অমূল্য অংশ
বিভা পাট্টু শাড়ি কেবল একটি কাপড়ের টুকরো নয়, এটি একটি আবেগ। এটি ভারতের সমৃদ্ধ বস্ত্রশিল্পের ঐতিহ্য এবং কারিগরদের অতুলনীয় দক্ষতার একটি জীবন্ত উদাহরণ। এই শাড়িটি কেবল সোনা, হীরে এবং এতে থাকা চিত্রকর্মের জন্যই পরিচিত নয়, বরং এটি তৈরিতে যে কঠোর পরিশ্রম এবং নিষ্ঠার প্রয়োজন তাই তুলে ধরেছে। প্রতিটি সুতো যেন ধৈর্য, আবেগ এবং নির্ভুলতার গল্প বলে।
এই শাড়িটি ভারতের ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে বিশ্বে কীভাবে আলাদা করে তুলেছে তার প্রতিফলন। প্রতিটি ভারতীয় রাজ্যের নিজস্ব অনন্য বস্ত্র শিল্প রয়েছে যা দেখলে আপনার হৃদয় গর্বে ভরে যাবে।
তথ্যসূত্র: আজকাল অনলাইন