হোয়াইট হাউজে ফেরার প্রথম দিন যেসব সিদ্ধান্ত নিতে পারেন ট্রাম্প

আপডেট: জানুয়ারি ২০, ২০২৫, ৯:৪১ অপরাহ্ণ

সোনার দেশ ডেস্ক


যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার দিনই সবাইকে হতবাক করার মতো কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ডনাল্ড ট্রাম্প।
সোমবার শপথ নেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ট্রাম্প বেশ কিছু নির্বাহী আদেশ জারি করবেন। এসব আদেশে অবৈধ অভিবাসন, জলবায়ু নীতিমালা, বৈচিত্র্য নীতি, গোপন নথি সংক্রান্ত বিষয়সহ আরও নানা বিষয় থাকতে পারে বলে তিনি আগেই ইঙ্গিত দিয়েছেন।
নতুন ক্ষমতায় আসা প্রেসিডেন্টরা দায়িত্ব নেওয়ার পরই বেশ কয়েকটি নির্বাহী আদেশ জারি করার প্রচলন আছে। এই ধরনের আদেশ আইনের সমতুল্য হলেও পরবর্তী প্রেসিডেন্ট বা আদালত তা বাতিল করার ক্ষমতা রাখে।
তবে ট্রাম্প যে বড় মাত্রার পরিকল্পনা করেছেন, তা নজিরবিহীন হতে পারে। ফলে এতে স্বভাবতই আইনি বাধা আসতে পারে। ট্রাম্পে এসব পরিকল্পনা সবিস্তারে তুলে ধরেছে বিবিসি:
অভিবাসন ও সীমান্ত:
ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারেই বলেছেন, ক্ষমতায় এলে দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম দিন থেকেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের ‘সবচেয়ে বড় অবৈধ অভিবাসী বিতাড়ন’ অভিযান শুরু করবেন।
ফক্স নিউজ জানিয়েছে, ট্রাম্প জাতীয় সীমান্তে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করবেন এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্তের সুরক্ষায় সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দেবেন।
ফেডারেল অভিবাসন কর্তৃপক্ষ চার্চ ও স্কুলে অভিযান চালানো থেকে বিরত থাকে- এমন দীর্ঘদিনের নীতিও বাতিল করবেন ট্রাম্প।
তবে গণহারে অভিবাসী বিতাড়ন কর্মসূচিই নানা সমস্যার মুখোমুখি হবে, এতে কোটি কোটি ডলার ব্যয় হবে এবং তা আইনি চ্যালেঞ্জেরও মুখোমুখি হতে পারে।
‘মেক্সিকোতে থাকুন’ কর্মসূচি:
ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদের অভিবাসী সুরক্ষা প্রটোকল ‘মেক্সিকোতে থাকুন’ কর্মসূচি পুনরায় বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারেন। এ কর্মসূচির অধীনে, মেক্সিকান নয় এমন প্রায় প্রায় ৭০ হাজার আশ্রয়প্রার্থীকে বিচারের শুনানির জন্য মেক্সিকোতে ফেরত পাঠানো হয়েছিল।
জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অবসান:
ট্রাম্প ১৫০ বছর পুরোনো সাংবিধানিক অধিকারকে ‘হাস্যকর’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, এই অধিকারের ফলে, যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া যে কাউকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়।
তিনি এই অধিকার প্রথম দিনই বাতিল করার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে এটি কেবল একটি নির্বাহী আদেশ জারি করে বাতিল করা সম্ভব নয়, কারণ জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে।
স্বাস্থ্যগত কারণে সীমান্ত বন্ধ:
১৯৪৪ সালে ‘টাইটেল ৪২’ আইন যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে জনস্বাস্থ্যের কারণে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ করার অনুমতি দেয়। সম্প্রতি মহামারীর সময় এটি প্রয়োগ করা হয়েছিল।
তবে মার্কিন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের নতুন প্রশাসন মেক্সিকোর সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনার যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে কোনও রোগ খুঁজে পাওয়ার চেষ্টায় আছে।
মাদক চক্র:
ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাম্প মাদক চক্রগুলোকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে চিহ্নিত করতে পারেন। এই মাদকচক্রগুলোকে আল কায়েদা, ইসলামিক স্টেট (আইএস) এবং হামাসের মতো গোষ্ঠীগুলোর তালিকায় রাখা হবে।
সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণ:
২০১৬ সালে ট্রাম্প প্রথমবার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর, যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর তোলার নির্বাহী আদেশ জারি করেছিলেন। তবে প্রাচীরের কিছু অংশ তৈরি করা হলেও, সেবার প্রাচীর নির্মাণ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি। এবার দায়িত্ব গ্রহণের পর সেই অস্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা নিতে পারেন তিনি।
বাণিজ্য ও অর্থনীতি শুল্ক:
ট্রাম্প আমেরিকান পন্যকে অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতির অংশ হিসাবে আমদানি পণ্যগুলিতে ব্যাপক শুল্ক আরোপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। প্রথম মেয়াদে তিনি চীনের ওপর শুল্ক আরোপ করেছিলেন।
জো বাইডেনের আমলে এই শুল্ক অব্যাহত ছিল। তবে এবার ট্রাম্প আরও একধাপ এগিয়ে সব ধরনের পণ্য আমদানিতে ১০ শতাংশ, কানাডিয়ান ও মেক্সিকান পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ এবং চীন থেকে আসা পণ্যের ওপর ৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা বলেছেন।
ট্রাম্প প্রথম দিনেই শুল্ক আরোপের নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করবেন বলে জানিয়েছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এই শুল্কের ফলে ভোগ্যপণ্য আরও ব্যয়বহুল করে তুলতে পারে। পাশাপাশি মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকিও থেকে যায়। ওদিকে আবার কিছু দেশ পাল্টা শুল্ক আরোপের কথা ভাবছে।
ক্রিপ্টো মজুদ:
এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ের পর বিটকয়েনের মূল্য ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন, ট্রাম্প দ্রুত একটি ফেডারেল বিটকয়েন মজুদ গড়ে তোলার জন্য দ্রুতই পদক্ষেপ নেবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বর্ণ ও তেলের মজুদের মতোই এটি একটি কৌশলগত রিজার্ভ। এই মজুদ নিয়ে তিনি বলেছেন, “সব আমেরিকানদের উপকারের জন্য এটি একটি স্থায়ী জাতীয় সম্পদ হিসেবে কাজ করবে।”
জলবায়ু ও জ্বালানি:
জো বাইডেনের জলবায়ু নীতি বাতিল
যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পরিবেশ বান্ধব কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ধারাবাহিক নির্দেশনা, আইন এবং তহবিল কর্মসূচিকে তার অন্যতম বড় অর্জন হিসাবে দেখছেন।
আর ট্রাম্প এখন সেগুলো বাতিল করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে তিনি সমুদ্র ও সরকারি জমিতে খননের ওপর নিষেধাজ্ঞা অপসারণের জন্য নির্বাহী আদেশ জারি করবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
ওদিকে, তিনি নতুন বায়ু প্রকল্প নিষিদ্ধ করা এবং বৈদ্যুতিক গাড়ির আদেশ বাতিল করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।
প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে ফের নাম প্রত্যাহার:
ট্রাম্প ২০১৭ সালে ক্ষমতা নেওয়ার ছয় মাসের মধ্যে ২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নাম প্রত্যাহার করেছিলেন।
বাইডেন ২০২১ সালে ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনই জলবায়ু চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। এবার আবারও ট্রাম্প এসে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ক্যাপিটল দাঙ্গা
৬ জানুয়ারির বন্দিদের মুক্তি:
২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গার ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত শত শত ব্যক্তি ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের অপেক্ষায় রয়েছেন। কারণ, সোমবার ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণ করেই তাদের সাজা ক্ষমা করে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সিএনএন-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “আমি তাদেরকে ক্ষমা করতে ইচ্ছুক। তবে সবার ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব হবে বলে আমি কথা দিতে পারছি না, কারণ কয়েকজন সম্ভবত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল।”
এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দেড় হাজারেরও বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কমপক্ষে ৬০০ জনের বিরুদ্ধে সরকারী কর্মকর্তাদের লাঞ্ছিত বা তাদের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
গোপন নথি:
রোববার শপথ গ্রহণের আগে বিজয় সমাবেশে ট্রাম্প বলেছিলেন, “১৯৬৩ সালে প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত গোপন নথি প্রকাশ করবেন। এই হত্যাকাণ্ড ঘিরে অসংখ্য ষড়যন্ত্রের জাল বিছানো রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “১৯৬৮ সালে সিনেটর রবার্ট কেনেডি ও নাগরিক অধিকার নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত নথিও প্রকাশ করা হবে।”
পররাষ্ট্রনীতি
ইউক্রেইন যুদ্ধ:
নির্বাচনী প্রচারের সময় ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনেই তিনি ইউক্রেইন যুদ্ধের অবসান ঘটাবেন। পরে তিনি বলেন, একাজে তার ছয় মাস সময় লাগতে পারে। তবে ঠিক কীভাবে এই যুদ্ধ থামাবেন তা পরিস্কার করে জানাননি।
কিউবা ও ভেনেজুয়েলা:
ট্রাম্প নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে বাইডেনের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত, যা কিউবাকে সন্ত্রাসের মদদদাতা দেশের তালিকা থেকে সরিয়েছে, তা বাতিল করতে পারেন।
এছাড়া, তিনি ভেনেজুয়েলার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাও পুনর্বহাল করতে পারেন। তার প্রথম প্রশাসনে এই দুই দেশই তার ক্ষোভের প্রধান লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিল।
বৈচিত্র্য এবং লিঙ্গ
ডিইআই:
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে স্কুল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো নারী ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের সহায়তায় বিভিন্ন নীতি গ্রহণ করেছে।
এই নীতিগুলোকে সাধারণত “বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তি” (ডিইআই) এর অধীনে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। তবে এগুলো রক্ষণশীলদের ক্ষুব্ধ করেছে এমনকি আইনি চ্যালেঞ্জের মুখেও পড়েছে।
ডিইআই প্রোগ্রাম চালায় এমন স্কুল বা প্রতিষ্ঠানকে ট্রাম্প নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে সরকারি তহবিল দেওয়া নিষিদ্ধ করতে পারেন। এমনকি তিনি এমন স্কুলগুলোতে তহবিলও বন্ধ করতে পারেন, যারা “ক্রিটিক্যাল রেস থিওরি” (সিআরটি) পড়ায়।
ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তিনি এসব নীতি বাতিল করবেন। মেটা, ওয়ালমার্ট এবং অ্যামাজনের মতো বড় কোম্পানিগুলো ইতোমধ্যেই এসব উদ্যোগ গুটিয়ে নিতে শুরু করেছে।
তথ্যসূত্র: বিডিনিউজ

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ