হোলি আর্টিজানে জঙ্গির নৃশংসতার আট বছর জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে দুর্নীতিও রুখতে হবে

আপডেট: জুলাই ২, ২০২৪, ১:৪৫ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের ইতিহাসে ১ জুলাই এক বিভীষিকাময় দিন হিসেবে স্মরণীয়। সেই দিনের জঙ্গি-সন্ত্রীদের তা-ব ও নৃশংসতার ঘটনা দেশের মানুষকে শিহরিত করে তুলবে। আট বছর আগে ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে রাজধানীর হোলি আর্টিজানে একদল সশস্ত্র জঙ্গির নৃশংসতার সেই ঘটনা শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। ওই ঘটনার পর জঙ্গি দমনে শুরু হয়েছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান।
রাজধানীর গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কের ৫ নম্বর বাড়িটি আজো সবার কাছে আলোচিত এক স্থান। এই বাড়িতেই ছিল হোলি আর্টিজান বেকারি। সেখানেই নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালায় বাংলাদেশের পাঁচ তরুণ।
পাঁচ তরুণের ওই দলটি সশস্ত্র অবস্থায় হোলি আর্টিজান বেকারিতে ঢুকে পড়ে। গুলি চালিয়ে এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করে।
হোলি আর্টিজেন হামলার পর গুলশান থানায় দায়ের করা মামলার বিচার চলে প্রায় সাড়ে তিন বছর। পুলিশ ওই ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেফতারও করে। ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল সাতজনের ফাঁসির রায় দেয়। কিন্তু ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ে ওই সাতজনের সাজা পাল্টে আমৃত্যু কারাদ- দেয় হাই কোর্ট।
ওই ঘটনার দেড় দশক আগে থেকেই জঙ্গিবাদ দমনে তৎপর ছিল দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কিন্তু হোলি আর্টিজানের মত এক বড় ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে, তার কোনো আভাস, কোনো বাহিনীর কাছে ছিল না।
অভিজ্ঞতার আলোকে ওই ঘটনার পর জঙ্গি দমন কার্যক্রম ঢেলে সাজানো হয়। এখন র‌্যাবের বিশেষ উইং, ঢাকা মহানগর পুলিশের সিটিটিসি ছাড়াও অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট নামে পুলিশের আলাদা বিভাগ জঙ্গিবাদ দমনে কাজ করছে। এ বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রতিষ্ঠার পর চলতি বছরের ৩১ মে পর্যন্ত তিন হাজার পাঁচ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। ধৃতরা বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সদস্য।
সোমবার (১ জুলাই) গুলশানে দীপ্ত শপথ ভাস্কর্যে ‘হলি আর্টিজান’-এ জঙ্গি হামলায় নিহতদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাব ডিজি অতিরিক্ত আইজিপি ব্যারিস্টার মো. হারুন অর রশিদ বলেন, আমরা আশ্বস্ত করতে চাই- এই দেশে আর কখনোই জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদের উত্থান হবে না।
এটা ঠিক যে,বর্তমান সরকার জঙ্গি দমনে জিরো টলারেন্স দেখিয়ে আসেছে। এটি রাজনৈতিক সদিচ্ছারও বহিঃপ্রকাশ। দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দেশে প্রকাশ্য জঙ্গি তৎপরতা শক্ত হাতে বন্ধ করতে পেরেছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, দেশে জঙ্গি তৎপরতা বন্ধ হয়ে গেছে। জঙ্গিরা নেপথ্যে থেকে পরোক্ষাভাবে জঙ্গি তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। এই পরিস্থিতিকে হালকা করে দেখারও সুযোগ নেই। যখন দেশের শীর্ষ পর্যায়ের অবসরপ্রাপ্ত এবং বর্তমান সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দেশজুড়েই আলোচনার বিষয়। দেশে অনেকটাই দুর্নীতির সামাজিকিকরণও হয়েছে। মানুষ দুর্নীতিবাজদের ঘৃণার পরিবর্তে সমীহ করে। এই সংস্কৃতি জঙ্গিবাদ উত্থানের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করতে পারে। তাই জঙ্গিদের উত্থান হবে না- এমন কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। বরং সার্বক্ষণিক সতর্ক থাকাই বাঞ্ছনীয়। দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদ হাত ধরাধরি করে চলে। জঙ্গিবাদ দমনের সাথে দুর্নীতি প্রতিরোধকেও একটি আবশ্যিক শর্ত হিসেবে দেখতে হবে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ