১০৬ রানেই শেষ বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস

আপডেট: অক্টোবর ২১, ২০২৪, ১:৫১ অপরাহ্ণ


সোনার দেশ ডেস্ক :


টস জিতে যে আশায় ব্যাটিং নেওয়া সেটা মোটেও পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে প্রোটিয়াদের বোলিং তোপে মাত্র ১০৬ রানে গুটিয়ে গেছে স্বাগতিকদের ইনিংস। প্রথম সেশনেই ৬ উইকেট হারানো বাংলাদেশ বাকি ৪ উইকেট হারায় ঘণ্টখানেকের মধ্যে।

বিরতি থেকে ফিরে দ্রুত ফেরেন মাহমুদুল হাসান জয়, জাকের আলী। তার পর লেজের দিকে নবম উইকেটে সবচেয়ে বেশি ২৬ রান যোগ হয়েছে নাঈম ও তাইজুলের ব্যাটে। তাদের কারণেই স্কোর একশ পার হয়েছে। নাঈম আউট হতেই ভাঙে জুটি। তার পর তাইজুল (১৬) কেশভ মহারাজের বলে বোল্ড হলে ১০৬ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস।

একশ পার হওয়ার পর আউট নাঈম
লাঞ্চ থেকে ফিরে দ্রুত দুই উইকেট হারানোর পর রান তোলার চেষ্টা করছিলেন নাঈম হাসান ও তাইজুল ইসলাম। তাদের ব্যাটেই স্কোর একশ ছাড়িয়েছে। নাঈমকে অবশ্য বেশিক্ষণ টিকতে দেননি রাবাদা। ৮ রানে তাকে তালুবন্দি করিয়েছেন। তাতে পড়ে বাংলাদেশের নবম উইকেট।

জয়ের পর দ্রুত ফিরলেন জাকের আলী
অভিষেক টেস্ট খেলতে নামলেও সেটাকে স্মরণীয় করতে পারেননি জাকের আলী। জয়ের আউট হওয়ার পরের ওভারেই স্টাম্পড হয়েছেন তিনি। কেশভ মহারাজের বলে এগিয়ে এসে শটস খেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বলের লাইন মিস করায় তাৎক্ষণিকভাবে উইকেটকিপার কাইল ভেরেইন উইকেট ভাঙতে দেরি করেননি। ফেরার আগে ২ রান করতে পেরেছেন জাকের।

বিরতি থেকে ফিরেই আউট জয়
প্রান্ত আগলে সামলেই খেলছিলেন ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়। লাঞ্চ বিরতি থেকে ফিরেই শট খেলে আক্রমণাত্মক হওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু অফ স্পিনার ডেন পিয়েটের ঘূর্ণিতে পেরে উঠেননি। দলের ৭৬ রানে বোল্ড হয়ে ফিরেছেন ৩৩ রানে।
সিরিজের প্রথম টেস্টে টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিলেও প্রথম ইনিংসেই বাজে ব্যাটিংয়ের নজির রেখেছে বাংলাদেশ। প্রথম সেশনে ৬০ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে লাঞ্চ বিরতিতে গেছে তারা।

ড্রাই ও হালকা ঘাসের পিচে প্রোটিয়া পেসারদেরই আধিপত্য দেখা গেলো। ব্যাট করার জন্য পিচটা সহজ নয় যদিও। তার পরেও বাংলাদেশের ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। বেশ কিছু আউট ছিল আলগা শটে। প্রথম ঘণ্টাতেই তিন উইকেট তুলে নেন ভিয়ান মুল্ডার।

তার পর জোড়া আঘাতে ৩০০ ও ৩০১ তম টেস্ট উইকেট তুলে নেন কাগিসো রাবাদা। লাঞ্চ বিরতির আগে শেষ বলটিতে কেশভ মহারাজের বলে বিদায় নেন মেহেদী হাসান মিরাজ (১৩)। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি। ব্যতিক্রম ছিলেন শুধু ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়। প্রান্ত আগলে ৮৬ বল খেলে ১৬ রানে অপরাজিত আছেন। কিন্তু তার যোগ্য সঙ্গী হতে পারেননি কেউ।

মুল্ডার ২২ রানে তিনটি উইকেট নিয়েছেন। ১৬ রানে দুটি নিয়েছেন কাগিসো রাবাদা। একটি শিকার কেশভ মহারাজের।
৪০ রানে মুশফিকুর রহিমের বিদায়ের পর বিপদ থেকে দলকে উদ্ধার করতে পারেননি লিটন। বরং ১ রানে আউট হয়ে বিপদ আরও বাড়িয়ে দিয়ে গেছেন। কাগিসো রাবাদার দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হয়েছেন তিনি। লিটনকে দুর্দান্ত ক্যাচে তালুবন্দি করেছেন ট্রিস্টান স্টাবস।

ভিয়ান মুল্ডারের আঘাতে ২১ রানে তিন উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ। তার পর প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টায় ছিলেন মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল হাসান জয়। ১৯ রান যোগ করেন তারা। ১৪তম ওভারে তাদের প্রতিরোধে আঘাত হানেন কাগিসো রাবাদা। মুশফিককে দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করে চতুর্থ উইকেটের পতন ঘটিয়েছেন তিনি। এই উইকেট তুলে রাবাদা টেস্ট ক্যারিয়ারে তিনশ উইকেটের মাইলফলকও স্পর্শ করেছেন। অভিজ্ঞ মুশফিক আউট হয়েছেন ১১ রানে।

এক মুল্ডারের আঘাতেই বিপদে বাংলাদেশ
এক মুল্ডারের আঘাতেই শুরুর দিকে বিপদে বাংলাদেশ। প্রোটিয়া পেসারের টানা তৃতীয় ওভারে তিন উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ প্রথম সকালেই চাপে পড়েছে। সাদমান, মুমিনুলকে ফেরানোর পর মুল্ডারের শিকারে পরিণত হন অধিনায়ক শান্ত। অফ স্টাম্প বরাবর ফুল ডেলিভারি করেছিলেন। শান্ত অনসাইডে ফ্লিক করতে গেলে এজ হয়ে বল চলে যায় শর্ট মিড অফে থাকা মহারাজের কাছে। তাতে ৭ রানে ফিরে যান বাংলাদেশ অধিনায়ক।

দ্বিতীয় ওভারে সাদমান ইসলামকে হারানো বাংলাদেশের দ্বিতীয় উইকেট হারাতেও সময় লাগেনি। চতুর্থ ওভারে বিদায় নিয়েছেন মুমিনুল হক। তাকে সুইং ডেলিভারিতে বিভ্রান্ত করেন ভিয়ান মুল্ডার। বল ব্যাটের কানায় লেগে জমা পড়ে কিপারের গ্লাভসে। তাতে মুল্ডারের আঘাতেই পড়েছে দুই উইকেট।

টস জিতে ব্যাট নেওয়ার পর দ্বিতীয় ওভারেই সাজঘরের পথ ধরেছেন ওপেনার সাদমান ইসলাম। ভিয়ান মুল্ডারের ফুলার লেংথের বাইরের বলটি অযথাই মেরে খেলার চেষ্টা করতে গিয়ে দ্বিতীয় স্লিপে এইডেন মারক্রামকে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। সাদমান ফিরেছেন রানের খাতা না খুলে।

টস জিতেছে বাংলাদেশ, জাকের আলীর অভিষেক
সিরিজের প্রথম টেস্টে মিরপুরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। এই টেস্ট দিয়ে অভিষেক হচ্ছে ব্যাটার জাকের আলীর।
টস জিতে বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বলেছেন, চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করা কঠিন হবে। তাই সব ভেবে চিন্তেই ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। প্রোটিয়াদের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক এইডেন মারক্রামও বলেছেন, টস জিতলে তিনিও ব্যাটিং নিতেন।

সিরিজের আগে অবশ্য মাঠের বাইরে সাকিব আল হাসান ইস্যু নিয়ে উত্তাল ছিল মিরপুর স্টেডিয়ামের আশপাশ। গত কয়েকদিন ধরেই সাকিব ভক্ত এবং সাকিব বিরোধীরা পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ করেন। রবিবার পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়ে। নিরাপত্তাবাহিনী কোনোরকমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এমন জটিলতার মধ্যেই সোমবার সকাল দশটায় ম্যাচটি মাঠে গড়াচ্ছে। বলা যায়, মিরপুরে এই টেস্টে না থেকেও আছেন সাকিব।
একাদশে কারা

স্পিন বান্ধব উইকেট দেখে বাংলাদেশ এক পেসার ও তিন স্পিনার নিয়ে খেলতে নেমেছে। পেস আক্রমণে রয়েছেন শুধু হাসান মাহমুদ। স্পিন বিভাগে রয়েছেন তাইজুল, নাঈম ও মিরাজ। ফিরেছেন ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়।
বাংলাদেশের মতো প্রোটিয়া দলেও একজনের অভিষেক হচ্ছে। তিনি হলেন ব্রিটজকে। সফরকারীরা অবশ্য দুই পেসার কাগিসো রাবাদা ও ভিয়ান মুল্ডারকে নিয়ে খেলছে।

বাংলাদেশ একাদশ: সাদমান ইসলাম, মাহমুদুল হাসান জয়, নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস (অধিনায়ক), মেহেদী হাসান মিরাজ, জাকের আলী, নাঈম হাসান, তাইজুল ইসলাম ও হাসান মাহমুদ।

দক্ষিণ আফ্রিকা একাদশ: এইডেন মারক্রাম (অধিনায়ক), টনি ডি জর্জি, ট্রিস্টান স্টাবস, ডেভিড বেডিংহ্যাম, রায়ান রিকেলটন, ম্যাথু ব্রিটজকে, কাইল ভেরেইন (উইকেটরক্ষক), ভিয়ান মুল্ডার, কেশভ মহারাজ, কাগিসো রাবাদা ও ডেন পিয়েট।
তথ্যসূত্র: বাংলাট্রিবিউন