১০ টাকা কেজির চাল পেয়েছে বিত্তশালীরা!

আপডেট: অক্টোবর ১৪, ২০১৬, ১১:৪৭ অপরাহ্ণ

07
গুরুদাসপুর প্রতিনিধি
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নে ১০ টাকা কেজি দরের চাল পেয়েছে বিত্তশালীরা। অভিযোগ রয়েছে চেয়ারম্যান শওকতরানা লাবু পক্ষের ভোট করা ব্যক্তিদের সন্তÍুষ্ট করতে হতদরিদ্রদের তালিকায় বিত্তশালীদের নাম রেখেছেন। এ কারণে হতদরিদ্ররা চাল পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
এদিকে ইউপি চেয়ারম্যান শওকতরানা লাবুর বিরুদ্ধে চালের কার্ড বিতরণে পক্ষপাত ও অনীয়মের সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের দাবিতে জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও খাদ্য কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। নাজিরপুর ইউনিয়নের নয়জন ব্যক্তি সম্মিলিতভাবে এই অভিযোগে স্বাক্ষর করেছেন। এর আগে চালের দাবিতে ইউনিয়ন সদর থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দফতরের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন হতদরিদ্র মানুষগুলো।
গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. ইয়াসমিন আক্তার অভিযোগের কপি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। সত্যতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আনছার আলী মোল্লা, আবদুর রশিদ ও মোজাম্মেল হকসহ কয়েকজন অভিযোগকারী জানান, হতদরিদ্রদের মাঝে ১০ টাকা কেজি দরের চাল বিতরণ না করে যাদের পাকাবাড়ি, জমিসহ পুকুর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের দেয়া হয়েছে হতদরিদ্রদের চালের কার্ড। এসব বিত্তশালীদের মধ্যে অনেকেই মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করেছেন দুস্থদের চাল। পক্ষান্তরে হতদরিদ্ররা চালের জন্য হাতাশায় আছেন।
ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে অনুসন্ধান চালিয়ে অভিযোগকারীরা ২ হাজার ৩০৫ জনের মধ্যে ১২০ জনের একটি তালিকা তৈরি করেছেন। এই তালিকায় বিত্তশালী রয়েছেন ৬৫ জন, একই পরিবারের সাতজনকে এবং একই ব্যক্তিকে দুইটি করে কার্ড দেয়া হয়েছে সাতজনকে, একই পরিবারে স্বস্ত্রীকে দেয়া হয়েছে ছয়টি পরিবারকে। এছাড়া একই পরিবারে পিতা, পুত্র ও কন্যাকে কার্ড দেয়া হয়েছে একটি পরিবারকে।
ইউনিয়নের চন্দ্রপুর (মাঝপাড়া) গ্রামের বিশুমিয়া (তালিকার ৪০৫ নম্বর সদস্য) বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে  সাদা রংয়ের পাকা বাড়ি। তার ছেলে মনজু জানালেন, তাদের ৮-১০ বিঘা জমি রয়েছে। সংসারে অভাব নেই। চেয়ারম্যানের পক্ষে ভোট করায় চালের একটি কার্ড দেয়া হয়েছে। চাল উত্তোলন করে তাঁর এক স্বজনকে দেয়া হয়েছে।
তালিকার ৫৭০ নম্বর সদস্য রাশিদুল ইসলাম। তার বাবার নাম আ. রাজ্জাক। চন্দ্রপুর বীরবাজারে তাদের একটি বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বড় করে নতুন বাড়িরও তৈরি হচ্ছে। রাশিদুলের বাবা জানালেন, তার ছেলে  ইঞ্জিনিয়ার। ঢাকায় থাকেন। আরেক ছেলে চাকরি করেন। তবে হতদরিদ্রদের কার্ড পাওয়ার বিষয়টি তার জানা নেই। এই তালিকায় নাম থাকায় তিনি লজ্জিত।
তালিকায় নাম থাকা আরো অন্ততপক্ষে সাতজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য রয়েছে। সংসারে অভাব নেই। ভোটের সময় তারা চেয়ারম্যানকে নানাভাবে সহায়তা করেছেন। চেয়ারম্যান ভালোবেশে তাদের নামে ১০ টাকা কেজির চালের কার্ড দিয়েছিলেন। লোকদিয়ে তারা সেই চাল তুলেছেন।
এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান শওকতরানা লাবু দাবি করে বলেন, কোন প্রভাবশালীদের চাল বা কার্ড দেয়া হয় নি। এলাকার কিছু মানুষ আমার সুনাম ক্ষুন্ন করতে বিভিন্ন দফতরে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন।