বৃহস্পতিবার, ৮ জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ২৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
সুফি সান্টু, নাটোর
১৩ ডিসেম্বর নাটোরের লালপুর মুক্ত দিবস। এই দিনে পরাজিত পাক হানাদার বাহিনী লালপুর থেকে বিতাড়িত হয়। ২৫ মার্চ থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাক বাহিনী দেশিয় দালাল ও রাজাকারদের সহায়তায় লালপুরের বিভিন্ন এলাকায় হত্যা, নির্যাতন, অগ্নিকা- ও লুটতরাজ চালায়।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে রাজশাহীর ২৫ নম্বর পাঞ্জাব রেজিমেন্টের অধিনায়ক কর্নেল বালুচ এবং টুওয়াইসি মেজর রাজা আসলামের নেতৃত্বে পাকবাহিনীর বর্বরতায় শহীদ হন লালপুরের এমএনএ নাজমুল হক সরকার, অবাঙ্গালী হাফিজ সাত্তার, বীরেণ সরকার উকিল, শিল্প ব্যাংকের ম্যানেজার সাইদুর রহমানসহ আরো অনেক সাধারণ জনগণ। ১৭ এপ্রিল দুয়ারিয়া ইউনিয়নের রামকান্তপুর প্রামে পাকবাহিনী হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ১৮ জনকে হত্যা করে। ৩০ মার্চ ময়নায় সম্মুখ যুদ্ধে মুক্তি সেনারা হানাদারদের ২৫ নম্বর রেজিমেন্ট ধ্বংস করে দেয়। সেদিন প্রায় ৮০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও ৩২ জন আহত হন। ওই দিনই পাক সেনাদের ছোড়া একটি সেলে চামটিয়া গ্রামে ৩ জন শহীদ হন। ১২ এপ্রিল ধানাইদহ ব্রিজের নিকট প্রতিরোধ যুদ্ধে ১০/১২ জন শহীদ হন। নাটোর জেলার যে কয়েকটি স্থানে পাক হানাদাররা নৃশংস হত্যা চালায় তার মধ্যে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের গণহত্যা ছিল সবচেয়ে নির্মম ও হৃদয় বিদারক।
৫ মে পাক হানাদার বাহিনী সমন্ত চিনিকল এলাকা ঘেরাও করে মিলের তৎকালিন প্রসাশক লে. আনোয়ারুল আজিমসহ কর্মরত প্রায় অর্ধশত শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাকে চিনিকলের অফির্সাস কলোনীর পুকুর পাড়ে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে। ওই দিনই গোপালপুর বাজারে ৭ জনকে হত্যা করে এবং গোপালপুর-লালপুর রাস্তার আরো ৫ জন টমটম আরোহীকে গুলি করে হত্যা করে। ২৯ মে খান সেনাদের একটি দল চংধুপইলের পয়তারপাড়া গ্রামে নদীর পাড়ে ধরে এনে ৫০ জনেরও অধিক নিরীহ লোকজনকে গুলি করে হত্যা করে। ২৫ জুলাই গোপালপুর থেকে ধরে এনে ২২ জনকে লালপুর নীলকুঠির নিকটে হত্যা করা হয় এবং ২৬ জুলাই একই স্থানে ৪ জনকে জীবন্ত কবর দেয়া হয়। ২০ জুলাই রামকৃষ্ণপুর গ্রামে অগ্নিসংযোগ ও ৫ জনকে হত্যা করে। ৩০ জুলাই বিলমাড়িয়া হাট ঘেরাও করে বেপরোয়া গুলিবর্ষণ করে ৫০ জনেরও অধিক মানুষকে হত্যা করা হয়। ৮ ডিসেম্বর পাঞ্জাব পুলিশ ও খানসেনারা থানা ত্যাগ করে। ৯ তারিখে অধিকাংশ রাজাকারও থানা ত্যাগ করে। ১০ই ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী থানা দখল করে। জনতা সেদিন উল্লাসে মেতে উঠে। কিন্তু হঠাৎ ১৩ ডিসেম্বর বর্বর খান সেনারা ঝটিকা আক্রমণ করে মহেশপুর গ্রামে ৩৬ জনকে গুলি করে পালিয়ে যায়। এই দিনে লালপুরবাসী আনন্দ উল্লাস করে লালপুরকে মুক্ত ঘোষণা করেন।
এদিকে ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ২৪ ডিসেম্বর লালপুর এসএস পাইলট হাইস্কুল মাঠে এক বিজয় উৎসব, আলোচনাসভা ও শহীদদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের পর আনুষ্ঠানিকভাবে লালপুরে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়। লালপুরমুক্ত দিবস উপলক্ষে লালপুর পাবলিক লাইব্রেরির উদ্যোগে ১৩ ডিসেম্বর বিকেল ৩টায় বিজয় র্যালি ও লালপুর উপজেলা প্রেসক্লাবের উদ্যোগে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে।