নিজস্ব প্রতিবেদক:
ইতিহাস ও ঐতিহ্যের আকর দেশ সেরা বিদ্যাপীঠ রাজশাহী কলেজ ১৫১তম বর্ষে পা রাখলো। সত্য, সুন্দর, বিশ্বজনীনতা, পবিত্রতা, জ্ঞান, বন্ধুত্ব ও পরমতসহিষ্ণুতায় আলোকিত মানুষ গড়ার প্রদীপ শিখা হয়ে পথচলা উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাজশাহী কলেজ। কলেজটির পদযাত্রার পরতে পরতে গাঁথা রয়েছে ইতিহাস-ঐতিহ্য ও দিনবদলের স্মৃতিকথা।
১ এপ্রিল যৌবনের নতুন আরেকটি বছরের যাত্রা শুরু করলো দেশসেরা এই প্রতিষ্ঠান। আর এই দিবসটি উপলক্ষে শনিবার (১ এপ্রিল) দিনব্যাপি বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে রাজশাহী কলেজ কর্তৃপক্ষ। শনিবার সকাল ১০ টায় একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। শোভাযাত্রা শেষে রাজশাহী কলেজ অডিটোরিয়ামে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। বাদ যোহর রাজশাহী কলেজ মসজিদে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। সন্ধ্যার পর কেককেটে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হয়।
এই আয়োজনে নেতৃত্ব দেন রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহা. আব্দুল খালেক। অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহা. আব্দুল খালেক বলেন, আলোকিত মানুষ তৈরির মুলমন্ত্র নিয়ে ১৮৭৩ সালে ৬ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলো। যেখানে এখন শিক্ষার্থী সংখ্যা ২৬ হাজারের বেশি। আর এই প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা অর্জন করে দেশ ও আন্তজার্তিক পরিমন্ডলে বিভিন্ন পেশায় এই কলেজের শিক্ষার্থীরা অবদান রাখছে।
তিনি আরও বলেন, সাংস্কৃতিক অঙ্গনে রজনীকান্ত সেন, ঋত্বিক ঘটকের মতো মানুষ পড়াশোনা করেছেন। রাজনৈতিক অঙ্গণে শহীদ এএইএম কামারুজ্জামানসহ অনেকেই এই প্রতিষ্ঠানের ছাত্র। এমন প্রতিটি ক্ষেত্রেই এই কলেজের ছাত্ররা অবদান রেখেছে ও রাখছে। রাজশাহী কলেজ ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক। বর্তমান শিক্ষার্থীরাও তাদের পূর্বসূরীদের পদাঙ্ক অনুসরণ ও অনুপ্রেরণায় জ্ঞানার্জন করছে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই রাজশাহী কলেজ মানসম্মত ও গুণগত শিক্ষা প্রদান এবং প্রসারে ভারতবর্ষ তথা পূর্ববঙ্গের পাইওনিয়ার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। বর্তমানেও এ ধারা অব্যাহত আছে। সৃজনশীল ও উদ্যমী শিক্ষক, সচেতন অভিভাবক, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও স্থানীয় প্রশাসন, নিবেদিত প্রাণ সকল কর্মচারী সর্বোপরি সৃষ্টিশীল ও মননশীল শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ রাজশাহী কলেজের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার মূল উৎস।
তিনি বলেন, দেশ-বিদেশে এই কলেজের অনেক প্রাক্তণ শিক্ষার্থী আছেন। প্রত্যেকের প্রত্যাশা ছিলো জাকজমকপূর্ণ আয়োজনে দিবসটি উদযাপনের। তবে রমজানের কারণে কর্মসূচি সীমিত করা হয়েছে। তবে সামনে সার্ধশতবর্ষ উপযাপন করা হবে আড়ম্বর আয়োজনের মাধ্যমে।
তিনি আরও বলেন, আজকের এই দিনে প্রত্যাশা থাকবে, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়তে ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে রাজশাহী কলেজ যে অবদান রাখছে তা উত্তোরত্তোর আরও সমৃদ্ধ হবে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৩১টি সূচকে টানা চারবার এবং শিক্ষামন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১৪টি সূচকে প্রতিবারই সেরার মুকুট অর্জন করেছে রাজশাহী কলেজ। বাংলাদেশের মধ্যে ‘রোল মডেল’ হিসেবেও সুপরিচিত এই বিদ্যাপীঠ।
প্রাচীন বাউলিয়া ইংলিশ স্কুল ও রাজশাহী জেলা স্কুলের (বর্তমান কলেজিয়েট স্কুল) হাত ধরেই পথচলা শুরু রাজশাহী কলেজের। ১৮৭২ সালে দুবলহাটির রাজা হরনাথ রায় চৌধুরীর দানকৃত সম্পত্তি ও দীঘাপতিয়ার রাজা প্রমথনাথ রায়ের এক লাখ ৫০ হাজার টাকায় স্থাপিত হয় ভবন। ১৮৭৩ সালের পহেলা এপ্রিল রাজশাহী জেলা স্কুলে এফএ (ফার্স্ট আর্টস) শ্রেণি চালুর মাধ্যমে শুরু হয় শিক্ষা কার্যক্রম। ১৮৭৮ সালে প্রতিষ্ঠার তিন বছরের মাথায় প্রথম গ্রেডের মর্যাদা পায় কলেজটি। একই বছরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তির পর উত্তরবঙ্গের প্রথম কলেজ হিসেবে রাজশাহী কলেজেই চালু হয় বিএ কোর্স। কলেজে ১৮৮১ সালে স্নাতকোত্তর এবং ১৮৮৩ সালে যোগ হয় বিএল কোর্স চালু হয়। স্নাতক কলেজ হিসেবে স্বীকৃতি মিলে ১৮৭৭ সালের অক্টোবরে। ১৮৮৪ সালে নির্মাণ করা হয় কলেজের প্রথম ভবন (বর্তমান প্রশাসনিক ভবন)।
১৯০৯ সালে মাস্টার্স কোর্স ও বিএল কোর্সের অধিভুক্তি বাতিল করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয় প্রতিষ্ঠানটি। কলেজে আইকম, বিকম (পাস) এবং বিকম (সম্মান) কোর্স চালু হয় যথাক্রমে ১৯৫২, ১৯৫৪ এবং ১৯৬১ সালে। এখন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মাস্টার্স ও সম্মান ডিগ্রি প্রদান করছে রাজশাহী কলেজ। চালু রয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক পাঠক্রমও।