বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি:
গত ৬ জুন ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৭ লক্ষ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। এর মধ্যে কৃষি খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৮ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা। আমি মনে করি এবারের বাজেট বাস্তবসম্মত ও বাস্তবায়নযোগ্য। এবারের বাজেটে সরকার মূল্যস্ফীতির প্রতি বেশ গুরুত্বারোপ করেছেন। এটা অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই যে, মূল্যস্ফীতির কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ জনজীবনে অবশ্যই এর একটি বিরুপ প্রভাব তৈরী হয়েছে। গতবছর আমদানির ক্ষেত্রে সরকারের শক্ত পদক্ষেপের কারণে ব্যবসায়ীরা এলসি খোলার ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়।
এর ফলে বিলাসজাত পণ্যের পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও অন্যান্য পণ্যে মূল্যস্ফীতি যথাক্রমে ১০.৫ ও ১০.৬ রয়েছে যা সরকার এ বছর ৬.৫ এ নিয়ে আসার বিষয়ে বাজেটে প্রস্তাবনা দিয়েছে যা অবশ্যই আমাদেরকে আশাবাদী করে। তবে সেক্ষেত্রে সরকারকে মেগা প্রজেক্টগুলো প্রায়োরিটির ভিত্তিতে এবং প্রজেক্ট ব্যয় যাতে বৃদ্ধি না পায় সেদিকে লক্ষ্য রেখে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাস্তবায়নের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করতে হবে।
রাজশাহী মূলত কৃষি প্রধান অঞ্চল। এ অঞ্চল হতে প্রতিদিন ২০০-২৫০ ট্রাক জীবন্ত মাছ যায় বাইরের জেলাগুলোতে। ঢাকাসহ প্রায় ১৮ টি জেলাতে মাছ যায়। প্রতিদিন প্রায় ৬-৮ কোটি টাকার ট্রানজেকশন হয়। আমরা বিগত কয়েক বছর ধরে রাজশাহীতে একটি “কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল” বা “অমৎরপঁষঃঁৎব চৎড়পবংংরহম তড়হব” করার বিষয়ে সরকারের কাছে জোর দাবী জানিয়ে আসছি। এ অঞ্চলে কোন ভারি শিল্প গড়ে উঠেনি। মূলত কৃষির উপর ভিত্তি করে এ অঞ্চলে মানুষের জীবন-জীবিকা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘঠেছে। কৃষি খাতে এ অঞ্চলের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। ধান, পাট, আম, লিচু, পান, টমেটো, আলু, শাক-সবজি, মাছ শুধু দেশের চাহিদা পূরণই নয় বরং এসব পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব।
এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী হতে ৬ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তারা যদি সম্মিলিতভাবে কাজ করে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কৃষি খাতে যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে তা থেকে যদি রাজশাহী অঞ্চলের জন্য একটি বড় অংশ নিয়ে আসতে সক্ষম হয় যাতে ঢাকা কিংবা অন্য জেলার উপর নির্ভরশীল না হয়ে সেই অর্থের একটি সামান্য অংশ দিয়ে কৃষি পণ্য সংরক্ষণাগার ও বিদেশে পণ্য রপ্তানির জন্য আধুনিক পরীক্ষাগার নির্মাণসহ আনুসঙ্গিক সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয় তাহলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্নতা অর্জনের জন্য যে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তা সময়ের ব্যাপার মাত্র।
দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যোগাযোগ ব্যবস্থা একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং সড়ক পথে পণ্য আনা-নেওয়ায় যে খরচ হয় তার চেয়ে পানি পথে খরচ অনেক কম। ১০ ট্রাকে যে পরিমান মাল ওঠে তার তুলনায় ১ (এক) টি বার্জে সে পরিমান মাল তোলা সম্ভব। যার ফলে ব্যবসায়ীদের অনেক সাশ্রয় সম্ভব। কিছু দিন পূর্বে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র জনাব এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন এর আন্তরিক প্রচেষ্টায় এবং রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় ভারতের সাথে পণ্য আমদানি-রপ্তানির জন্য ‘সুলতানগঞ্জ পোর্ট অব কল’ এর আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয়। কিন্তু এটি এখনও পূর্ণাঙ্গ পোর্ট হয়নি। ট্রায়াল শেষ হয়েছে।
এখনও প্রতিবেদনের অপেক্ষায়। সোনামসজিদ পোটের্র পরিবর্তে এ পোর্ট ব্যবহার করলে ব্যবসায়ীদের শুধু পাথর আমদানিতে প্রতি সিএফটিতে অন্তত ৫ (পাঁচ) ডলার সাশ্রয় হবে। বেনাপোল ও সোনামসজিদ স্থল বন্দর দিয়ে যেসব পণ্য বৈধভাবে আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে সেটা যদি সুলতানগঞ্জ-মায়াবন্দর দিয়ে আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয় তাহলে প্রতি কেজি পণ্য পরিবহনে ১৫-২০ টাকা খরচ সাশ্রয় হবে। ফলে ভোক্তারা কম মূল্যে পণ্য কিনতে পারবে। আমি মনে করি এ অঞ্চলের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও জীবনমান উন্নয়নে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন, ব্যবসায়ীমহল ও সর্বপরি জনগনের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাজেটের সুষম বন্টন ও বাস্তবায়ন সম্ভব।