২৮ জেলায় নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে পদক্ষেপ কোথায়!

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৩, ১২:৩৩ পূর্বাহ্ণ

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, নিপাহ ভাইরাস মারাত্মক। এই ভাইরাসে আক্রান্তদের মৃত্যুহার ৭৫ শতাংশ। এই ভাইরাসের টিকা নেই, কোনো ওষুধ নেই, এমনকি চিকিৎসাও নেই। তা হলে উপায়? সতর্ক-সাবধান থেকে প্রতিরোধই একমাত্র উপায়। সাধারণ মানুষ জানবে কীভাবে? নিশ্চয় প্রচার-প্রচারনার মাধ্যমে। যেসব কারণে নিপাহ ভাইরাস সংক্রমিত কিংবা সংক্রমণ ছড়ায় সেসব তথ্য মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়াÑ যাতে করে সাধারণ মানুষ সচেতন হতে পারে। প্রত্যন্ত মানুষের কাছে নিপাহ ভাইরাসের মারাত্ম প্রভাব- যার চিকিৎসা নেই এই তথ্য পৌঁছে দেয়া সম্ভব হচ্ছে কি? না তেমন কোনো উদ্যোগ মাঠ পর্যায়ে লক্ষ্য করা যায় না। শীতকাল আসলে নিপাহ ভাইরাস নিয়ে একটু হইচই হয় বটে- পরক্ষণেই তা নিস্তেজ হয়ে যায়। শীত শুরুর আগেই যে প্রচারনা চালানো প্রয়োজন- তা আর হয় না।
বাদুড়ের খাওয়া ফল ও খেজুরের কাচা রসের মাধ্যমে নিপাহ ভাইরাস ছড়ায়। তাই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়ার কথাই বলা হয়। বাংলাদেশে খেজুরের রস খাওয়া অনেকটাই উৎসব-সংস্কৃতির সাথে জড়িয়ে আছে। শত শত বছর ধরে কাচা খেজুরের রস এবং রসের সঙ্গে অনুসঙ্গ ব্যবহারের রীতি চলে আসছে। ফেলে আসা দিনেও খেজুরের রস ছিল, বাদুড়ও ছিল। নিপাহ ভাইরাসও ছিল ছিল না যেটা তা হল তথ্য। এখনো সব কিছুর সাথে তথ্যও আছে কিন্তু তথ্য মানুষের দৌড়গোড়ায় নিতে কার্যকর উদ্যোগ নেই। মানুষ তার ঐতিহ্য দিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করে- নিজের মত করেই সিদ্ধান্ত নেয় ‘আগে কিছু হয় নি এখনো হবে না।’ এই অবস্থান থেকে সাধারণ মানুষকে সরিয়ে আনা খুব সহজ কাজ নয়। খেজুরের রসের জীবন-সংহারি প্রভাব ও এর ভয়াবহতা সম্পর্কে বারবার করেই বলতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারি প্রচারণার সাথে সাথে সামাজিক- সাংস্কৃতিক সংগঠন ও স্থানীয় সরকারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
ইতোমধ্যেই দেশের ২৮ জেলায় নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া গেছে। ৩ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সম্প্রতি সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে নিপাহ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, চলতি মওসুমে ৮ জন নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু সংক্রমণ যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তা উদ্বেগজনক।
আইইডিসিআরের তথ্য মতে, দেশে ২০০১ সালে মেহেরপুরে প্রথম নিপাহ ভাইরাস শনাক্ত হয়। তবে এর সবচেয়ে বড় প্রাদুর্ভাব হয় ২০০৪ সালে ফরিদপুর জেলায়। সেখানে ৩৫ জন আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ২৭ জন।
নিপাহ ভাইরাসের প্রতিরোধের উপায়গুলো সাধারণ মানুষের মধ্যে নিতে কর্মকৌশল থাকা বাঞ্ছনীয়। সেপ্টেম্বর- অক্টোবর মাস থেকে এ প্রচারনার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। মানুষের কাছে প্রতিরোধের সহজ উপায় নিয়ে যেতে পারলে তারা সেটি গ্রহণ না করে পানে না। কেননা স্বজনের মৃত্যু কেই বা কামনা করে! আর নিপাহ ভাইরাস প্রতিরোধের উপায় খুব কঠিন বলেও মনে হয় না। আধ খাওয়া ফল ও কাচা খেজুরের রস পান করলেই নিপাহ ভাইরাস প্রতিরোধ করা যায়। শুধু চ্যালেঞ্জ হলো প্রতিরোধের উপায়-তথ্য সাধারণের কাছে পৌঁছে দেয়া।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ