সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৪ ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
শাহীন রহমান, পাবনা :
সাদা ও কালো মিলিয়ে ষাঁড় গরুটি দেখতে বেশ। তিন বছর ধরে সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতির খাবার খাইয়ে লালন পালন করা হয়েছে তাকে। খামারি আলাউদ্দিন শখ করে গরুটির নাম রেখেছেন ‘পাবনার রাজা বাবু নাম্বার ওয়ান’। এবারের কোরবানি ইদের হাট কাঁপাতে আসছে সে।
ইদকে সামনে রেখে ৩০ মণ ওজনের এই ষাঁড় গরুটির দাম হাঁকা হচ্ছে ২৫ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে গরুটি দেখতে খামারি রেজাউল করিমের বাড়িতে ভিড় করছেন নানা বয়সী মানুষ।
আলাপকালে জানা গেছে, শখের বসে তিন বছর আগে আটঘরিয়া উপজেলার একদন্ত হাট থেকে তিন লাখ ২০ হাজার টাকায় অস্ট্রেলিয়ান ফিজিয়ান জাতের একটি ষাঁড় গরু কিনে লালন পালন শুরু করেন খামারি আলাউদ্দিন। তার বাড়ি পাবনার চাটমোহর উপজেলার ফৈলজানা ইউনিয়নের কুয়াবাসী ছোট দুবলাপাড়া গ্রামে। তার পিতার নাম আব্দুর রাজ্জাক শেখ।
স্বাস্থ্যকর পরিবেশে রেখে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে লালন পালন করা ওই গরুটি তিন বছরের ব্যবধানে এখন বিশালাকৃতির ষাঁড়ে পরিণত হয়েছে। শান্তশিষ্ট আর চালচলনে একটা ‘রাজা রাজা’ ভাব রয়েছে তার। তাই তার নাম দেয়া হয়েছে পাবনার রাজা বাবু নাম্বার ওয়ান।
আলাউদ্দিন জানান, শখ পূরণ করতেই গরুটি বড় করেছেন খামারি রেজাউল করিম। সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে ভুট্টা, জব, কাঁচা ঘাস, কালাইয়ের ভুসি, গমের ভুসি এবং ধানের খড় খাইয়ে মোটাতাজা করা হয়েছে পাবনার রাজা বাবুকে।
খামারি আলাউদ্দিনের দাবি, বর্তমানে পাবনার রাজা বাবু নাম্বার ওয়ানের ওজন আনুমানিক ৩০ মণ। তিনি দাম হাঁকছেন ২৫ লাখ টাকা। গত বছর বিক্রি করতে না পারলেও, এবারের কোরবানি ইদে বিক্রির আশা খামারি আলাউদ্দিনের। দামদর করে যে কেউ কিনতে পারবেন বলে জানান তিনি।
দীর্ঘদিন ধরে সন্তানের মতো লালন পালন করতে গিয়ে পাবনার রাজা বাবুর মায়ায় পড়ে গেছেন খামারি আলাউদ্দিন শেখের স্ত্রী রতনা খাতুন, মেয়ে মীম খাতুন। এখন বিক্রি করার সিদ্ধান্তে আবেগ আপ্লুত তারা।
মেয়ে মীম জানায়, ‘এমনিতে শান্তশিষ্ট হলেও, অপরিচিত মানুষ দেখলে রেগে যায় পাবনার রাজা বাবু। তার প্রিয় খাবার কাঁচা ঘাস। আমাকে দেখলেই খেতে চাইতো। এখন বিক্রির কথা শুনে খুব কষ্ট লাগছে।’
স্ত্রী রতনা জানান, ‘তিন বছর ধরে সন্তানের মতো লালন পালন করেছি। এখন কি করা, বিক্রি তো করাই লাগবি একদিন। গরুটার প্রতি খুব মায়া পড়ে গেছে। তাকে বিক্রি করে আমাদের আরো স্বপ্ন পূরণ করা লাগবি।’
এদিকে, এত বিশাল ষাঁড় গরু দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে আলাউদ্দিনের বাড়িতে ভিড় করছেন নানা বয়সী মানুষ। হাবিবুর রহমান, আফজাল হোসেন, তারা বেগম বলেন, ‘আমরা এর আগে এত বড় গরু দেখি নাই। এটাই প্রথম দেখলাম। আমরা চাই, আলাউদ্দিন গরুটা যেন বিক্রি করে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে।’
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. গৌরাঙ্গ কুমার তালুকদার বলেন, ‘জেলায় অনেক খামারি কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে গরু বড় করেন। কিন্তু কোরবানির ইদের চাহিদা কম থাকায় অনেকে বিক্রি করতে পারেন না। তাদের পরামর্শ, ইদুল আযহায় নয়, ইদুল ফিতরে গরুগুলো বিক্রি করেন। না হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রুপ করে বিক্রির চেষ্টা করেন। এতে হাটে গরু আনা-নেয়ার ধকল ও খরচ থাকবে না।’